৮ জুন ২০২১, মঙ্গলবার, ১:৪৫

দীর্ঘ অপেক্ষার পর খুলবে কী! শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কপাট!

অধ্যাপক এ.বি.এম. ফজলুল করীম : ২০২০ সালের ৮মার্চ বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হওয়ার পর ১৭ মার্চ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকার ছুটি ঘোষণা দেন। এরপর থেকে বারংবার ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয়। এরপর ২০২১ সালের ২৯ মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলার ঘোষণা দিলেও তা কার্যকর হয়নি। তবে সবশেষে ঘোষণায় বলা হয়েছিল ২০২১ সালের ২৩ মে শুরু হতে পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম। কিন্তু আমাদের দেশে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় সেই সিদ্ধান্তও বাতিল করে সরকার।

দীর্ঘ ১৫ মাস বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে অন্য সবকিছু প্রায় স্বাভাবিক হলেও সংক্রমণ ঝুঁকির কারণে খোলা হচ্ছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই সময়ে শিক্ষাকার্যক্রম থেকে দূরে আছে প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী। অন্যদিকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ধুঁকছে আর্থিক সংকটে। এসএসসি ও এইচএসসি স্তরের প্রায় ৪০ লাখ পরীক্ষার্থী ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আর চাকরির বয়স পার হওয়া নিয়েও শঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত বছর এইচএসসিতে অটোপাস দেয়ার পর এবার আবার অনিশ্চয়তায় পড়েছে এই পাবলিক পরীক্ষা। চলিত বছরের এসএসসি পরীক্ষাও স্থগিত হয়ে আছে একই কারণে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পরীক্ষাও হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বিকল্প হিসেবে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমও ফলপ্রসূ হচ্ছে না। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আন্দোলন ধীরে ধীরে জোরদার হচ্ছে। গেল সপ্তাহে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। শিক্ষাবিদরা বলছেন, করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, তা অপূরণীয় এবং এই ক্ষতি পোষাতে সরকারকে নিঃসন্দেহে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

অনলাইন ক্লাস মনিটরিংয়ে ৫ দফা নির্দেশনা : দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনলাইন ক্লাস মনিটরিংয়ের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করছে এবং কারা করছে না, তার তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত দেশের মাধ্যমিক স্তরের সকল শিক্ষার্থীকে কার্যকর সংসদ টিভি এবং অনলাইন ক্লাসে যুক্ত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়ছে। অনলাইন ক্লাস এবং সংসদ টিভিতে পরিচালিত ক্লাস পরিচালনা এবং শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করতে মনিটরিং করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গত ৫ মে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিগত বছরের সরকারের এ ধরনের উদ্যোগে কার্যকর তেমন ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং অনলাইন ক্লাসের সমন্বয় করে রুটিন তৈরিসহ ৫ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

৫ দফা নির্দেশনাগুলো হলো :
১. যে সকল বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনলাইন ক্লাস নিচ্ছে না বা নিতে পারছে না, তার পরিসংখ্যান সংগ্রহ করতে হবে
এবং জরুরি ভিত্তিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে জানাতে হবে।
২. জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত অনলাইন ক্লাসে উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের যুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. স্কুল কর্তৃপক্ষ পরিচালিত অনলাইন ক্লাসগুলো ‘জুম’ বা ‘গুগল মিট’ বা ‘মাইক্রো সফট টিম’ বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে সক্রিয় করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. সংসদ টিভি, স্কুল কর্তৃপক্ষ পরিচালিত অনলাইন ক্লাস, জেলা ও উপজেলা অনলাইন ক্লাসগুলো অগ্রাধিকার দিয়ে ক্লাস রুটিন প্রস্তুত করতে হবে।
৫. কার্যক্রমগুলো যথাযথভাবে করা হচ্ছে কিনা, তার জন্য কার্যক্রর মনিটরিং ব্যবস্থা নিতে হবে।

৯৭ শতাংশ অভিভাবক স্কুল খোলার পক্ষে : ২০২১ সালের ১০ মে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)-এর যৌথ গবেষণা জরিপে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। অনলাইনে এই অনুষ্ঠানে গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন। জরিপে বলা হয়েছে, দেশের ৯৭ দশমিক ৭ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা বলছেন, স্কুল খুললে তারা সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন। আর মাধ্যমিকের ৯৭ শতাংশ অভিভাবকও তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে মত দিয়েছেন। শহর ও মফস্বলের প্রায় ৬ হাজার ৯৯ জন অভিভাবকের ওপর পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে গবেষণাটি করা হয়। গত ১১ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ জরিপ চালানো হয়।

অথচ ছুটি না বাড়ানোর দাবি ছিল প্রবল গত ২৬ মে বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি এক সংবাদ সম্মেলনে আরো এক দফা এ ছুটি ১২ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অবিলম্বে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবিতে গত কয়েকদিন রাজধানীসহ দেশজুড়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এসব কমসূচিতে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে অবিলম্বে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে একাডেমিক কার্যক্রম চালু করার দাবি জানান।

শিক্ষার্থীরা বলেন, করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেখানে অব্যাহতভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৫ মাস যাবত বন্ধ রয়েছে। শহরের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাসের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও লাখ লাখ ছাত্র-ছাত্রী যারা গ্রামে বসবাস করেন আবার শিক্ষার্থীদের কাছেও ডিভাইস নেই। যাদের আছে, তাদের অনেকেরই ইন্টারনেট নেই। (চলবে)

https://dailysangram.com/post/454831