৭ জুন ২০২১, সোমবার, ১:০৮

করোনা সংক্রমণ বাড়ায় জুন মাস নিয়ে শঙ্কায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় চলতি মাস গত মাসের মতো স্বস্তিকর যাবে না বলে মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন এ মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, গত এক সপ্তাহে আমাদের পজেটিভ রেট বেড়ে গেছে। যদিও ৯২ ভাগ মানুষ সুস্থ হয়ে যাচ্ছে, সে জন্য আমরা আনন্দিত। সংক্রমণের দিক থেকে আমরা সাত থেকে আট শতাংশ নিচে নেমে এসেছিলাম। সেটি ক্রমাগত বেড়ে গেছে। গত এক মাসের চিত্র লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আমরা ওই পর্যায়ে নেই যেখানে বলতে পারি আমরা স্টেবল। আমাদের ট্রান্সমিশন আনস্টেবল হয়ে গেছে।

২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত যে চিত্র দেখতে পাই, এপ্রিলের ভয়াবহতা আমরা ট্যাকেল করতে পেরেছি। জুন মাস যখন শুরু হয়েছে, মাত্র ছয়দিন। এর মধ্যে আমরা আট হাজারের বেশি করোনায় আক্রান্ত মানুষকে শনাক্ত করেছি। এই মাসটি গত মাসের মতো স্বস্তিকর যাবে বলে মনে হচ্ছে না। রোবেদ আমিন বলেন, আমাদের প্রান্তিক পর্যায়ে যেসব হাসপাতাল আছে, সেখানে সেবা দেয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লো ফ্লো অক্সিজেন সাপ্লাই। হাই ফ্লো নাজাল ক্যানোলার আগে আমার নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সাপ্লাই নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ এটি হলো জীবন রক্ষাকারী। যারা মুমূর্ষু অবস্থায় চলে যাচ্ছেন, তাদের অনেকেই লো ফ্লো অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠছেন। চাঁপাই নবাবগঞ্জ, রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে গেছে। যে কারণে একটি মেডিকেল টিম সেন্ট্রাল থেকে চাঁপাই নবাবগঞ্জে অবস্থান করছে। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। চাঁপাই নবাবগঞ্জে ইতিমধ্যে বলা হয়েছে, জরুরি রোগী ছাড়া যেন কাউকে ভর্তি নেয়া না হয়। প্রয়োজনে পুরো হাসপাতাল করোনা সেবায় ব্যবহার করা হবে। প্রান্তিক অন্য এলাকাগুলোতেও তা-ই বলা হয়েছে।

টিকা তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর: মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন আরও জানান, দেশে টিকা তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে প্রধামন্ত্রী বলেছেন, আমরা নিজেরাও টিকা তৈরি করতে চাই। এ প্রসঙ্গে বেশকিছু কাজ সরকারের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে টিকা তৈরি করা হবে এই পরিকল্পনা নিয়ে আমরা যেকোনো সময় আলোচনায় আসতে পারবো। টিকাদান কর্মসূচির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন মানুষ প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন নিয়েছেন। যেটি ২৭শে জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল। ৪২ লাখ ৩ হাজার ১১৪ জন মানুষকে আমরা দ্বিতীয় ডোজ দিতে সক্ষম হয়েছি। সিনোফার্ম আমাদের উপহার হিসেবে যে টিকা দিয়েছিল, সেখান থেকে ২ হাজার ১৬২ জনকে আমরা টিকা দিতে পেরেছি। সিনোফার্ম ৬ লাখ ভ্যাকসিন বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দিচ্ছে। আমাদের ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট যাদের পরীক্ষা সমাগত তাদের জন্য এই টিকাটি বরাদ্দ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া চুক্তি হলে আরও অসংখ্যা টিকা পেতে আমরা সক্ষম হবো। আমাদের ঔষধ প্রশাসন জরুরি ব্যবহারে সিনোভ্যাকের টিকা অনুমোদন দিয়েছে। ফাইজারের টিকাও বাংলাদেশে চলে এসেছে। এটি মাইনাস ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সংরক্ষণ করতে হয়। প্রান্তিক পর্যায়ে ফাইজারের টিকা দেয়া সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি না। কোথায় কাদের এই টিকা দেয়া হবে তা পরে জানিয়ে দেয়া হবে। রাশিয়া থেকে যে ভ্যাকসিন সেটিও আমাদের আলোচনার মধ্যে আছে। এসব সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে আমরা আশা করছি, টিকা নিয়ে নিরাশ হওয়ার কিছু থাকবে না। সকলকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে- বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই মুখপাত্র।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=277222&cat=3