৭ জুন ২০২১, সোমবার, ১:০০

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতের বিশাল বরাদ্দে শুভংকরের ফাঁকি

গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটের আকার প্রস্তাব করা হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এরমধ্যে ঘাটতি রয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি, যা বাজেটের ১৭.৮৩ শতাংশ এবং জিডিপির ৩.১১ শতাংশ। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতের বিশাল এ বরাদ্দে শুভংকরের ফাঁকি হিসাবে উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বরাদ্দ বড় দেখানোর কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। কেননা এখাতে বরাদ্দের যে হিসাব দেওয়া হয়েছে তার অর্ধেক হলো অন্যখাতের টাকা। সাামাজিক নিরাপত্তা খাতে গরিবদের সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও এ খাতে ঢুকে পড়েছে ধনীরা।

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী হলো এমন একটি নিরাপদ বেড়াজাল যার মাধ্যমে সমাজের অসহায় ও পিছিয়ে পড়া মানুষকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়। এটা কোনো দেশের সার্বিক সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা কর্মসূচির একটা অংশমাত্র। বাংলাদেশের সংবিধানে সামাজিক নিরাপত্তা মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এই সংবিধানে (পঞ্চদশ সংশোধন ২০১১ অনুচ্ছেদ ১৫ (ঘ) মৌলিক প্রয়োজন ব্যবস্থা) সামাজিক নিরাপত্তার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে- “সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতাপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্বাতীত কারণে অভাবগ্রস্থতার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্যলাভের অধিকার। মৌল মানবিক চাহিদা যাদের অপূরিত থাকে, যারা বিপর্যয় রোধ করতে পারে না, অর্থাৎ দরিদ্র, বেকার, অসুস্থ, প্রতিবন্ধী, বিধবা, এতিম, পঙ্গুসৈনিক, ভিক্ষুক, ভবঘুরে, নির্ভৃরশীল বয়স্ক ও পরিত্যক্ত মহিলা ও শিশুরা এই নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় পড়বে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন দারিদ্র্যনিরসনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়, স্বল্পসময়ের জন্য এ কর্মসূচি চালু থাকতে পারে। কিন্তুু বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র একটি দেশে যেখানে দুই কোটি মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত সেখানে তাদের সমস্যার জন্য স্থায়ী সমাধানচিন্তা না করলে এই সাহায্যপ্রার্থীদের হাতের সংখ্যা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পেতে থাকবে আর আমরা বর্তমান শতাব্দীভর দরিদ্রই থেকে যাবো। জানা গেছে, ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা বলয় খাতে বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা, যা ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রায় ৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়।

গত বৃহস্পতিবার বাজেট অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরে সর্বাধিক দারিদ্রপ্রবণ ১১২টি উপজেলায় বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী দরিদ্র প্রবীণ ব্যক্তিকে শতভাগ বয়স্ক ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছর থেকে বয়স্কভাতা কার্যক্রমে উপকারভোগীর কভারেজ বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী প্রাপ্য শতভাগ বয়স্ক মানুষকে অতি উচ্চ ও উচ্চ দারিদ্র্যভুক্ত গ্রুপের আরও ১৫০টি উপজেলায় সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এতে করে ৮ লাখ নতুন উপকারভোগী যোগ হবে এবং এ খাতে ৪৮১ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে সর্বাধিক দারিদ্রপ্রবণ ১১২টি উপজেলায় বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীকে শতভাগ বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা নারীদের জন্য ভাতা কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে। আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছর থেকে এ কার্যক্রমে উপকারভোগীর কভারেজ বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী প্রাপ্য শতভাগ বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীকে অতি উচ্চ ও উচ্চ দারিদ্রভুক্ত গ্রুপের আরও ১৫০টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে। এতে করে ৪ লাখ ২৫ হাজার জন নতুন উপকারভোগী যোগ হবে এবং এ খাতে ২৫৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হবে।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সর্বশেষ প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ অনুযায়ী অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৮ হাজার জন বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এ বাবদ ২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রয়োজন হবে।। বিগত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের সম্মানী ভাতা আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ১২ হাজার টাকা হতে ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে। এতে বরাদ্দ বাড়বে ১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। তিনি বলেন, আগামী ২০২১ ২০২২ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট ১ লক্ষ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি, যা বাজেটের ১৭.৮৩ শতাংশ এবং জিডিপির ৩.১১ শতাংশ।

প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা গেছে, বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে এক লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাজেটের ১৭.৩ শতাংশ। আর জিডিপির ৩.১১ শতাংশ। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এটি পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা বাজেটের ১৬.৮৩ শতাংশ। আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩.০১ শতাংশ। এ হিসাবে চলতি থেকে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে ১২ হাজার ৪০ কোটি টাকা।

এদিকে প্রতি বাজেটেই সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করা হয় কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে সামঞ্জস্যহীনভাবে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন, কৃষি ভর্তুকিসহ নানা কার্যক্রমের বরাদ্দও ঢোকানো হয়েছে। পাশাপাশি পুরনো খাত ছাড়াও অন্তত চারটি নতুন খাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এগুলোর উপকারভোগীর সংখ্যাও বাজেটের কোথাও নেই। এতে দেখা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকা অন্য খাতের জন্য বরাদ্দ, যা এ খাতের জন্য মোট বরাদ্দের প্রায় অর্ধেক।

প্রস্তাবিত সামাজিক নিরাপত্তা খাতের এক লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকার মধ্যে ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি অন্য খাতে ব্যয়ের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হবে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনে। শুধু পেনশন দিতেই এ খাত থেকে ব্যয় হবে ২৬ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের ২৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের সামাজিক নিরাপত্তা খাতে পেনশনের জন্য ২৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সে হিসাবে পেনশনের জন্য চলতি থেকে প্রস্তাবিত বাজেটে তিন হাজার ৬৯০ কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে। শিক্ষার জন্য এ খাত থেকে ব্যয় হবে প্রায় ছয় হাজার ২০০ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য ও রোগ খাতে ব্যয় প্রায় চার হাজার ৯০০ কোটি টাকা। কৃষিতে ভর্তুকি বাবদ এ খাত থেকে ব্যয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে সাত হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এটি এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

এ ছাড়া সামাজিক সুরক্ষায় নতুন অন্তত আরো তিনটি খাত যোগ করা হয়েছে। এগুলো হলো কভিড মোকাবেলা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নারীর ক্ষমতায়ন। কভিড মোকাবেলায় সামাজিক সুরক্ষা খাত থেকে সরকার ব্যয় করবে সাত হাজার ৩০০ কোটি টাকা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় খরচ করা হবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। সামাজিক নিরাপত্তা খাত থেকে নারীর ক্ষমতায়নে ৪৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ছাড়া অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গৃহনির্মাণের একটি প্রকল্পের ১০১ কোটি টাকাও এ খাত থেকে ব্যয় হবে। সব মিলিয়ে সামাজিক সুরক্ষা খাত থেকে অন্য খাতের জন্য ৫৩ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। আর বাকি ৫৩ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে এ খাতের উপকারভোগীদের জন্য।

এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সরকার পেনশন খাতে ব্যয় করবে, এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এই ব্যয় আলাদাভাবে থাকা উচিত। এটা সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কেন? এ ধরনের আরো নতুন ব্যয় ঢুকিয়ে এ খাতকে বড় করে দেখানোর একটা চেষ্টা করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। এ চেষ্টা কেন থাকবে? এ খাতকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে জিডিপির ৩ শতাংশের বেশি দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, আদতে এটি ২.৪ শতাংশের বেশি নয়। তিনি জানান, পেনশন ছাড়াও সঞ্চয়পত্রের সুদহারের প্রিমিয়াসহ কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো সামাজিক নিরাপত্তার বরাদ্দের আওতার বাইরে রাখা উচিত। নতুন দরিদ্র, করোনার কারণে যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন তাঁদের জন্য কিছু নেই কেন? বাজেটে সর্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা, সর্বজনীন বেকার ভাতার কোনো প্রসঙ্গ আসেনি। এসব দিকে আমাদের আস্তে আস্তে যাওয়া উচিত। সব মিলিয়ে বাজেটটি কভিড মোকাবেলায় সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতের আওতায় ১২৩টি কর্মসূচি বা বিষয় রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। কর্মসূচিগুলোর মধ্যে আটটি হচ্ছে নগদ ভাতা, আর ১১টি খাদ্য সহায়তা। এসব কর্মসূচিতে ধনীরাও ঢুকে পড়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোর বাস্তবায়ন পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের (এনএসএসএস) মধ্যবর্তী উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪৬ শতাংশ ভাতাভোগী যোগ্য না হয়েও ভাতা নিচ্ছে। সঠিক লোকের কাছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সহায়তা পৌঁছাতে পারলে বাড়তি ব্যয় ছাড়াই ২৬ লাখ পরিবারের এক কোটি সাত লাখ মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচ থেকে তুলে আনা সম্ভব। এসব কর্মসূচিতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের সঙ্গে যোগ হয়েছে বরাদ্দ বাড়িয়ে দেখানোর বিষয়টিও। এতে সামাজিক নিরাপত্তার আসল উদ্দেশ্য শতভাগ পূরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, সরকারি কর্মী ও সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের যে সুবিধা দেওয়া হয়, সেটা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় রাখা উচিত নয়। কারণ, এ দুটি খাতের সুবিধাভোগীদের অধিকাংশই সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও সচ্ছল ব্যক্তি। সামাজিক নিরাপত্তা হচ্ছে রাষ্ট্রের এমন কর্মকাণ্ড, যা সমাজের দরিদ্র ও ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হবে। পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবনমান উন্নয়ন হবে। কিন্তু এ দুই খাতের মাধ্যমে সে উদ্দেশ্য কতটুকু পূরণ হয়, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। বাজেটে বরাদ্দের এই ধারা বছরের পর বছর ধরেই চলে আসছে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন জানান, বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষ অনেক বেশি। অনেকে দরিদ্র হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। ফলে সামাজিক নিরাপত্তা বলতে দরিদ্র ও ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা ও উন্নয়নে নেওয়া কর্মসূচিই হওয়া উচিত। পেনশন বা সঞ্চয়পত্রের সুদে দেওয়া প্রিমিয়ামকে সামাজিক সুরক্ষা বলা যথার্থ নয়।

২০১৫ সালে সরকার জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল প্রণয়ন করেছে। কৌশলের মূল উদ্দেশ্য দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করতে সব উপযুক্ত নাগরিককে বিশেষ করে দরিদ্র ও ঝুঁকিগ্রস্ত নাগরিকদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। বিশ্লেষকরা বলছেন, কৃষি ভর্তুকি, কৃষি পুনর্বাসন, পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনকে তহবিল, করোনার প্রভাব মোকাবিলায় এমএসএমই খাতে দেওয়া ঋণের সুদ ভর্তুকির বরাদ্দ সামাজিক নিরাপত্তায় দেখানোও যৌক্তিক নয়। এগুলো অন্যান্য হিসেবেও তুলে ধরা হয়।

স্থানীয় শাসন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ জানান, প্রতিবছর জনগণের কর রাজস্ব থেকে সরাসরি অর্থ বরাদ্দ করে পেনশন দায় মেটানো হয়। পেনশনারের জীবনযাত্রার ব্যয় নয়, চাকরির সর্বশেষ পদমর্যাদা ও বেতনক্রম পেনশন অঙ্কের একমাত্র নির্ধারক। তাই অবসরের পর পদমর্যাদাভেদে পেনশন অঙ্ক ৬ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে বিভিন্ন অঙ্কের হয়। সরকারি বাজেটের সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দের ৩১ শতাংশ (২৪+৭) দেড়-দুই লাখ অদরিদ্র ও উচ্চবিত্ত মানুষের কল্যাণ ও আয় সহায়তায় ব্যয় করা কতটুকু যুক্তিসংগত তা ভেবে দেখতে হবে। তিনি জানান, পেনশনের সঙ্গে আয়কর বা কর ব্যবস্থার কেন সংযোগ নেই, দেশের মোট শ্রমশক্তির ৯৫ শতাংশের জন্য সক্রিয় কর্মজীবন শেষে কেন পেনশন ব্যবস্থা নেই, সেই প্রশ্ন এখন সামনে আসছে।

https://dailysangram.com/post/454705