৬ জুন ২০২১, রবিবার, ২:৫৬

ঢাকার বাইরে হাসপাতালে চাপ সামলাতে হিমশিম

কোথাও কোথাও আইসিইউ ও অক্সিজেন সুবিধা কম থাকায় রোগীরা ঢাকামুখী

ঢাকায় হাসপাতালে এখন রোগীর চাপ কম থাকলেও ঢাকার বাইরে কয়েক দিন ধরেই রোগী বেশি থাকায় কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে নানা সংকট। ফলে আবারও অনেকে ছুটছে ঢাকার দিকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয়ভাবে আক্রান্তদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার আওতায় রাখা গেলে সংক্রমণ রোধ করা সহজ হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় তথ্য অনুসারে, গতকাল শনিবারের হিসাবে সারা দেশে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত ১১ হাজার ৯৩১টি সাধারণ শয্যার মধ্যে দুই হাজার ৬৩২টিতে রোগী ছিল। বাকি ৯ হাজার ২৯৯টি শয্যা খালি ছিল। আর এক হাজার ১২৪টি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) শয্যার মধ্যে ৩৩৪টিতে রোগী ছিল। বাকি ৭৯০টি ছিল খালি। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বাদে অন্য সব বিভাগে ছয় হাজার ১৮টি সাধারণ শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি ছিল এক হাজার ৪১৪ জন। খালি ছিল চার হাজার ৬০৪টি। ২৫১টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে রোগী ছিল ১১৬টিতে, বাকি ১৩৫টি খালি ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা কালের কণ্ঠকে বলেন, এরই মধ্যে রাজশাহীসহ বেশ কিছু এলাকার হাসপাতালে শয্যা, যন্ত্রপাতি, অক্সিজেন ও জনবল বাড়ানো হয়েছে, কোথাও বা বাড়ানোর কাজ চলছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. বে-নজীর আহমেদ বলেন, ঢাকার বাইরে যে জেলায় যারাই আক্রান্ত হবে, তাদেরই আইসোলেশনে নিতে হবে; তাদের মাধ্যমে যাতে অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ না ছড়ায়। এ জন্য জেলা পর্যায়ে হাসপাতালে সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক সাইফুল ফেরদৌস বলেন, ‘যে হারে করোনা উপসর্গ নিয়ে মানুষ চিকিৎসা নিতে আসছে, সেই হারে এখন চিকিকিৎসক বা নার্স নেই। আবার অন্যান্য সুবিধা দিতেও আমাদের হিমিশিম খেতে হচ্ছে। বেশির ভাগ রোগীই আসছে খারাপ পরিস্থিতি নিয়ে। এ কারণে মৃত্যুর হার বাড়ছে।’ তিনি আরো বলেন, তাঁদের হাসপাতালে এখন পর্যন্ত করোনা রোগীদের জন্য ২৩২টি শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গতকাল সকাল পর্যন্ত ২২৪টি শয্যায় রোগী ছিল।

দুপুর পৌনে ১টার দিকে দুটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে নিয়ে যেতে দেখা যায় ইসমাইল হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে। তিনি বলেন, ‘আমার রোগীর অবস্থা ভালো না। কখন কী হয় বলা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় হাসপাতালে যে অক্সিজেনসংকট চলছে, তাতে বাড়তি ঝুঁকি নিতে চাইছি না। ঝুঁকি এড়াতেই আমি নিজে থেকেই অক্সিজেন নিয়ে যাচ্ছি।’

এমন পরিস্থিতিতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ সামাল দিতে আরো একটি নতুন ওয়ার্ড চালু করা হচ্ছে। ওই ওয়ার্ডে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা স্থাপনের কাজ চলছে।

রংপুরে বিভাগের পাঁচ স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন সীমান্ত থেকে প্রতিদিন চিকিৎসা ও জীবিকার প্রয়োজনে নগরীতে মানুষ ছুটে আসছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বুড়িমারী, বাংলাবান্ধাসহ বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষ রংপুরে আসা-যাওয়া করছে। সীমান্ত দিয়ে বৈধ পথে দেশে আসাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হলেও সীমান্তবর্তী মানুষ তাদের সংস্পর্শে থাকছে। আসন্ন কোরবানির ঈদ সামনে রেখে অবৈধ পথে চোরাকারবারিরা যাতায়াত করছে। তাদের মাধ্যমেও করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত এই বিভাগে নানা বয়সী ৪০৭ জন করোনায় মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে ১৯ হাজার ২৯১ জন। রংপুরে আইসিইউ শয্যায় সাতজন ও সাধারণ শয্যায় ৩১ জন চিকিৎসাধীন।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আহাদ আলী কালের কণ্ঠকে জানান, ভারত থেকে যারা আসছে তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তাদের আত্মীয়-স্বজনরা যাতাযাত করছে। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী লোকজন কোনো না কোনোভাবে ভারতীয় মানুষের সংস্পর্শে আসছে এবং তারা রংপুরে অবাধে যাওয়া-আসা করছে। এর পরও অবৈধ পথে যাওয়া-আসা করা মানুষের মাধ্যমেও ডেল্টা ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় সাতজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শহিদুল ইসলাম জানান, গত মাসের ১৮ তারিখে ট্রাকে করে অন্তত ৫০ জন শ্রমিক চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নবাবগঞ্জের কৈলাইল ইউনিয়নের মাহতাবপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পে কাজের জন্য আসেন। সেখানে মোট ৬৩ জন শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের জ্বর, ঠাণ্ডা ও কাশিসহ করোনার বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। ২৩ মে তাঁরা সেখানে গেলে কেউ বিষয়টি স্বীকার করেননি। এমনকি তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করতে চাইলেও তাঁরা দিতে রাজি হননি। তিনি বলেন, গত ২৫ মে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে বিষয়টি জানিয়ে তাঁরা মেডিক্যাল টিম গঠন করেন। পরের দিন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বেশ কয়েকজনের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হলে সাতজনের ফল পজিটিভ আসে। তাঁদের শরীরে ডেল্টা ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ ঘটে থাকতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকে সেদিনই আইইডিসিআরে নিয়ে আবার নমুনা পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়। এরপর তাঁদের ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2021/06/06/1040306