ফাইল ছবি
৬ জুন ২০২১, রবিবার, ২:৪৮

করোনা শঙ্কায় কোরবানির পশুর হাট

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে না আসলেও রাজধানীতে ২৫টি পশুর হাট বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। হাটের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে ইজারা বিজ্ঞপ্তি। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ঈদের ৫ দিন আগেই শুরু হবে কোরবানি পশু বেচাবিক্রি।

গত বছর এই সময়ে করোনার সংক্রমণ বর্তমান পরিস্থিতির তুলনায় কিছুটা কম হলেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ‘ডিজিটাল পশুর হাটে’র উপর গুরুত্ব দিয়েছে। অনলাইনভিত্তিক পশুর এ হাটে কোরবানি পশু বেচাবিক্রি হওয়ায় স্থায়ী ও অস্থায়ী হাটের উপর চাপ কম ছিল। এতে অনেকেই পশুর হাটে না গিয়ে অনলাইন প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে কেনাকাটা সেরেছেন। এতে হাটে স্বাস্থ্যবিধি অনেকটা রক্ষা হয়েছে। এবছর দুই সিটি করপোরেশন আগে থেকেই ২৫টি পশুর হাট বসানোর ঘোষণা দিয়েছে।

রাজধানীর পশুর হাটগুলোকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোরবানির পশু নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। হাটে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় থাকে প্রতিবারই। তবে এবার করোনার সংক্রমণ ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে বেশি হারে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে এ সংক্রমণের হার তুলনামূলক বেশি। কিছু এলাকায় চলছে লকডাউন। কোরবানি পশুর হাটে এসব এলাকা থেকেই পশু নিয়ে ঢাকায় আসবেন বিক্রেতারা। ফলে সব মিলিয়ে পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানানো সিটি করপোরেশনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
কামাল হাজী নামের এক খামারি জানান, গত বছরের তুলনায় এবার খামারে দেশি গরুর সংখ্যা অনেক বেশি। লকডাউন ও চলমান পরিস্থিতির কারণে আগেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় গরু আনা হচ্ছে। খামারে রেখে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এতে প্রতিটি গরুতে কয়েকগুণ খরচ বাড়ছে। সিটি করপোরেশন থেকে পশুর হাটের ইজারা দিয়েছে এটা খামারি ও ব্যবসায়ীদের জন্য খুশির। তবে করোনার সংক্রমণ ও লকডাউনের ভয় কাটছে না। পরিস্থিতির কারণে পশুর হাট কমে গেলে কিংবা সরকারের দেয়া কঠিন স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করে পশু বেচাবিক্রি আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। এতে ব্যবসায়ী ও খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা বিধিনিষেধের মধ্যে পশুর হাট বসা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে অনেকেই ব্যবসার জন্য লগ্নি করেন। হাটে ক্রেতা সমাগম ও বেচাবিক্রি কমে আসলে লোকসানের মুখে পড়তে হয়। গত বছরও করোনার কারণে পশুর হাট জমে উঠেনি। এতে ব্যবসায়ী ও খামারিরা লোকসানে পড়েছেন।

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় সারুলিয়া স্থায়ী পশুর হাট ছাড়া এবছর ২৩টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে করপোরেশন। তবে স্থায়ী হাটে আগে থেকেই বিক্রি হবে কোরবানি পশু। সব মিলিয়ে এবার সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৫টি হাটে পশু বেচাবিক্রি হবে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে অস্থায়ী হাটের সংখ্যা ১০টি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৩টি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট ছাড়া অস্থায়ী পশুর হাটগুলো হচ্ছে উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় অবস্থিত বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদনগর) পশুর হাট, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল ব্রিজ সংলগ্ন মস্তুল ডুমনী বাজারমুখী রাস্তার উভয় পাশের খালি জায়গা, উত্তরখান মৈনারটেক শহীদনগর হাউজিং প্রকল্পের খালি জায়গা, ভাষানটেক রাস্তার নির্মাণাধীন অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত অংশ এবং পাশের খালি জায়গা, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং ব্লক-ই সেকশন-৩ এর খালি জায়গা, উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমের অংশ এবং ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের ফাঁকা জায়গা, মিরপুর সেকশন ৬ ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সারুলিয়া পশুর হাট ছাড়াও অস্থায়ী ভিত্তিতে পশুরহাট বসবে মেরাদিয়া বাজার-সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, গোপীবাগ বালুর মাঠসহ কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা ইস্টঅ্যান্ড ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার মৈত্রী সংঘের ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, হাজারীবাগ এলাকায় ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি মাঠসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, আফতাবনগর (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক-ই, এফ, জি, এইচ সেকশন ১ ও ২ এর খালি জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, শ্যামপুর-কদমতলী ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন খালি জায়গা, গোলাপবাগে সিটি করপোরেশন মার্কেটের পেছনের খালি জায়গায় এবং পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা।

করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, হাটের ইজারা দেয়া হলেও করোনার সংক্রমণের উপর নির্ভর করে পশুর হাট বসানো হবে। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে কঠোর থাকবে দুই সিটি করপোরেশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হাটে আসা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের হাত ধোয়ার জন্য রাখা হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে সাবান। মাপা হবে শরীরের তাপমাত্রা। জ্বরে আক্রান্তদেরকে পশুর হাটে ঢুকতে দেয়া হবে না। গ্লাভস, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া গত বছরের মতো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি সংবলিত ব্যানার, পোস্টার টাঙ্গানোসহ মাইকে ধারাবাহিকভাবে প্রচার করতে হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন মানবজমিনকে বলেন, এবছর সরকারের নির্দেশিত সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পশুর হাট বসানো হবে। পশুর হাট বসতে এখনো অনেক দেরি। এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে পশুর হাট নিয়ে বিকল্প ভাবা হবে। তবে আমরা যথাযথা ভাবেই কোরবানি পশুর হাট বসাতে বদ্ধ পরিকর। হাট শুরুর আগে স্বাস্থ্যবিধিসহ অন্যান্য দিকগুলো নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করা হবে। আশা করি স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে পশু বেচাবিক্রি করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া যখন সরকার যে পদক্ষেপ নিবেন, সে অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ব্যবস্থা নেবে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=277091&cat=3