৬ জুন ২০২১, রবিবার, ২:৪৫

কুষ্টিয়া সুগার মিলের ৫২ টন চিনি গায়েব

কুষ্টিয়া সুগার মিলের প্রায় ৫২ মেট্রিক টন চিনির হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। মিলের সুরক্ষিত গুদামে ১০০ টনের উপরে চিনি মজুত থাকলেও এখন প্রায় অর্ধেকটার সন্ধান মিলছে না। ওই চিনির আনুমানিক বাজার মূল্য ৩২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এ ঘটনায় গুদাম কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাকিবুর রহমান খান এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

সূত্র জানায়, গত মৌসুমে উৎপাদন বন্ধ থাকা কুষ্টিয়া সুগার মিলের গুদামে ১১০ টনের বেশি চিনি মজুত ছিল। গত বৃহস্পতিবার মিলের কর্মকর্তারা স্টক রেজিস্টারের সঙ্গে মজুত চিনির পরিমাণ মেলাতে গিয়ে দেখতে পান সেখানে প্রায় ৫২ টন চিনি কম আছে। এ ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে সুগার মিল প্রশাসনে।

মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান বলেন, এটা ন্যক্কারজনক ঘটনা। বিষয়টি ধরা পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র এ কাজ করে আসছিল। মিল বন্ধ না হলে হয়তো বিষয়টা ধরা পড়ত না। তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন সিবিএ সভাপতি ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ফ্যাক্টারি, গোডাউন আর কর্মকর্তাদের কেউ কেউ জড়িত। ১০ থেকে ১২ বছর ধরে এমন কাজ চলে আসছিল বলে মনে হয়। এখন বিষয়টি সামনে এসেছে। চিনির দামও কম নয়। প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা। এক দিনে এত চিনি পাচার হয়নি। তাই সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের সামনে আনতে হবে।

এ ঘটনায় বরখাস্ত ফরিদুল স্টোরকিপার ছিলেন। সম্প্রতি তাকে গুদাম কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগে সোহেল নামের একজন দায়িত্বে ছিলেন। তার সময় চিনি চুরি ঘটনা হয়ে থাকতে পারে বলে বেশির ভাগ শ্রমিক-কর্মচারী মনে করেন। সে সময় তেলও চুরি হয়েছে বলে জানা গেছে। যার প্রমাণ পেয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ। বিপুল পরিমাণ চিনি চুরির সঙ্গে মিলের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর একাংশ জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ ঘটনায় এখনো থানায় মামলা হয়নি। মিল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মিলের জিএম (কারখানা) কল্যাণ কুমার দেবনাথকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

মিলের জিএম (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার নজরে আসে। সেদিনই ফরিদুলকে বরখাস্ত ও তদন্ত কমিটি গঠন করে করপোরেশনকে জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিন মিলের গোডউন খালি হয়নি। এ সুযোগে চিনি কখনো একেবারে শেষ হয়নি। এবার মিল বন্ধ হওয়ার পর চিনির স্টক শেষ হয়ে আসে। তাই রেজিস্টার ও গোডাউনের চিনির হিসাবে গরমিল পাওয়া যায়। তার পরিমাণ ৫০ টনের বেশি। বিষয়টি তদন্তে সুস্পষ্টভাবে উঠে আসবে। যারা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন মিলের একটি চক্র বাইরে চিনি বিক্রির সময় গোপনে ট্রাকে চিনি পাচার করে আসছে। এ বছরেও দিন ছাড়া রাতেও চিনির ট্রাক গেছে। তবে এক বছরে এমন হয়নি। সম্প্রতি কয়েক বছরে এ কাজ হয়ে আসছে। এর আগে গোডাউন ধসেও কিছু চিনি নষ্ট হয়। সে সময় চিনি পাচার হতে পারে বলে মনে করেন অনেকে।

এর আগে দুর্নীতির দায়ে ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর কুষ্টিয়া চিনিকলের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মুর্শেদ (এমডি) চিনিকলের সিবিএ সভাপতি ফারুক হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গত ১৯ বছরে কুষ্টিয়া চিনিকলে লোকসান হয়েছে ৪২০ কোটি টাকা। শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দৌরাত্ম্য, চরম দুর্নীতি, ব্যবস্থাপনা ক্রুটি ও ক্রমাগত লোকসানে ২০২০-২১ অর্থবছর মিলে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/428235