প্রতীকী ছবি
৬ জুন ২০২১, রবিবার, ২:৪৩

নলুয়া-বাহেরচর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব

পরামর্শক ব্যয় ৬৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা

পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির মুখে কমানো হয়েছে ২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা

নলুয়া-বাহেরচর সেতু নির্মাণে পরামর্শকের পকেটেই যাবে ৬৭ কোটি ৬৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। প্রথম দিকে এ খাতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছিল ৭০ কোটি ৪৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা। কিন্তু এতে আপত্তি জানায় পরিকল্পনা কমিশন।

এত বেশি ব্যয়কে অযৌক্তিক মনে করে যৌক্তিকভাবে কমানোর সুপারিশ করে পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভায়। সেটি মেনে নিয়ে ২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা কমিয়েছে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।

‘বরিশাল (দিনেরারপুল) লক্ষ্মীপাশা-দুমকি সড়ক (জেড-৮০৪৪)-এর ২৭তম কিলোমিটারে পান্ডব-পায়রা নদীর ওপর নলুয়া-বাহেরচর সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের ক্ষেত্রে এমন প্রস্তাব করা হয়েছে।

আগামী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে প্রকল্পটি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন-আল-রশিদ শনিবার যুগান্তরকে বলেন, পরামর্শক ব্যয় বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে।

সেজন্যই কমাতে বলেছি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তারা কিছু টাকা কমিয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেছেন, এ রকম সেতু নির্মাণের জন্য পান্ডব-পায়রা নদী এলাকার মাটির সঙ্গে সেতুর ডিজাইন করার মতো উপযোগী ইঞ্জিনিয়ার এ দেশে নেই।

ফলে বিদেশ থেকে পরামর্শক নিতে গেলে একটু বেশিই খরচ পড়বে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বৈদেশিক কোনো সংস্থান থেকে ঋণ নিতে গেলে তাদেরও নানারকম শর্তপূরণ করতে হয়। সেক্ষেত্রে পরামর্শক সংক্রান্ত শর্ত থাকাটাই স্বাভাবিক।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ওএফআইডি আসলেই এ ধরনের কোনো শর্ত দিয়েছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা উচিত।

আর যদি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার চাপিয়ে দেওয়া শর্তের কারণে এমন ব্যয় যুক্ত করতে হয় তাহলে সেই ব্যয়কে তাদের সুদসহ অন্যান্য ব্যয়ের সঙ্গে ধরা উচিত।

কস্ট বেনিফিট হিসাব করে সেক্ষেত্রে তাদের চেয়ে কম খরচে বিকল্প সংস্থা থেকে ঋণ পাওয়া গেলে সেটি নেওয়াই ভালো ছিল। অনেক সময় প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা এমন নানা অজুহাতে পরামর্শক খাতে ব্যয় বাড়িয়ে থাকেন। পুরো বিষয়টি ভালোভাবেই দেখা দরকার।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৩ কোটি ৫০ লাখ ২৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩৮৬ কোটি ২৬ হাজার টাকা এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি) ঋণ থেকে ৬৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা।

ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।

অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৬ সালের এপ্রিলের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।

সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বরিশাল-লক্ষ্মীপাশা-দুমকি জেলা মহাসড়কটি বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার সংযোগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক।

সড়কটি ব্যবহার করে বাকেরগঞ্জ ও দুমকি উপজেলার জনগণ বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা সদরসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় যাতায়াত করে থাকে।

সড়কটির ২৭তম কিলোমিটারে পান্ডব-পায়রা নদী অবস্থিত হওয়ায় বাকেরগঞ্জ ও দুমকি উপজেলার জনগণ সরাসরি ও স্বল্প সময়ে বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলায় যাতায়াত করতে পারে না। বর্তমানে এই স্থানে ফেরির মাধ্যমে যোগাযোগ চলমান আছে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ১৩০০ মিটার পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ, ৩ কিলোমিটার এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ, ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার সার্ভিস রোড, টোল প্লাজা ও ওয়েহ (ওয়েট) ব্রিজ এবং ২ হাজার মিটার নদীর তীর রক্ষাপ্রদ কাজ করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, গত ২ ডিসেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-পরামর্শক সেবার মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৭০ কোটি ৪৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা থেকে যৌক্তিকভাবে হ্রাস করতে হবে।

সব ধরনের পরামর্শক সেবার টিওআর ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংযুক্ত করতে হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল-রশীদ আরও বলেন, প্রকল্পের আওতায় পান্ডব-পায়রা নদীর ওপর ১৩০০ মিটার নলুয়া-বাহেরচর সেতু নির্মাণ করা হলে বাকেরগঞ্জ ও দুমকি উপজেলার জনগণ বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা সদরের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনসহ প্রকল্প এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে। এ কারণেই প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/428223/