৬ জুন ২০২১, রবিবার, ২:৩৮

উচ্চ শিক্ষা বাধাগ্রস্ত করবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট

প্রত্যাহার চায় শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি

করোনায় স্থবির শিক্ষা খাতের গতিকে আরো শ্লথ করবে বাজেটে আরোপিত ভ্যাট। আসন্ন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করায় এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও সেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি। তারা এই ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। একই সাথে অতিরিক্ত এই ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা না হলে মাঠে নেমে আন্দোলনেরও হুমকি দিয়েছেন কয়েকটি ছাত্র সংগঠন। অন্য দিকে শিক্ষা খাতের ওপর আরোপিত ভ্যাট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্ট্রাস্ট আইনের পরিপন্থী বলেও মন্তব্য করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উচ্চ শিক্ষায় আরোপিত ভ্যাটের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করার পরদিনই গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর কেন্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষা খাতের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন। এ দিকে গতকাল শনিবার বিকেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কর আরোপের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ৩টায় চট্টগ্রামের প্রেস ক্লাব চত্বরে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আন্দোলনের সমন্বয়ক ও বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুর রূদ্র গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এসব কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো করের এই বাড়তি টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই আদায় করবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এখানে আয় বা লাভের প্রশ্ন নেই। যদি আয় বা লাভ হয়ে থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইন মানছে না। রাষ্ট্রের উচিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষাব্যয় কমানো। শিক্ষার্থীরা আরো জানান, আমরা ধারাবাহিক আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করব। আমাদের দাবি একটাই, ‘শিক্ষায় আরোপিত কর প্রস্তাবনা বাতিল চাই।’

একই সাথে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ১৫% কর আরোপ করে যে প্রস্তাবনা দিয়েছে তা প্রত্যাহার করাসহ ছয় দফা দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন।

সংগঠনটির মুখপাত্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থী শাহ রেজোয়ান বলেন, বিগত ২০১০ ও ২০১৫ সালেও দেখেছেন বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থার ওপরে সরকারের যে অযৌক্তিক কর চাপানোর চেষ্টা তার বিরুদ্ধে ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ সরব ছিল এবং বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে পণ্যে রূপান্তর করার যে অপচেষ্টা করা হয়েছিল তা রুখে দিয়ে ২০১৫ সালে সরকারকে ভ্যাট প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়েছিল। এবারো আগের মতোই আমরা বলতে চাই শুধু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয় যেখানেই শিক্ষাকে পণ্যে রূপান্তর করার ন্যূনতম চেষ্টা চলবে সেখানেই ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

অন্য দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভূত আয়ে আয়কর আরোপের প্রস্তাবকে ট্রাস্ট আইনের পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি। সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোনো প্রকার সরকারি বরাদ্দ কিংবা অনুদান না পাওয়ায় কারণে এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপর নির্ভর করতে হয়। একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে সরকার যেখানে মেধা সৃষ্টির লক্ষ্যে সর্বস্তরের শিক্ষা খাতে বিপুল অর্থ ভর্তুকি দিয়ে থাকে সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর করারোপ করা হলে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে তা ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি করবে।
বাজেটে আরোপিত করের বিরোধিতা করে শিক্ষার্থীরা জানান, আসন্ন অর্থবছরের জন্য ঋণ আর ঘাটতির বোঝা সাধারণ জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরনের শিক্ষাব্যবস্থাকে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার যে কথা ছিল তা না করে শিক্ষাখাতকে বাণিজ্যিকীকরণ করা হচ্ছে।

শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত ১৫% কর কোনো মতেই মেনে নেয়া হবে না। এমন অন্যায্য সিদ্ধান্ত অতীতেও ছাত্রসমাজ মেনে নেয়নি, এখনো তারা মেনে নিবে না। শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণ করার কোনো পাঁয়তারা করা হলে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না। শিক্ষার্থীরা ক্ষোভের সাথে বলেন, শিক্ষা খাতের সাথে বিভিন্ন খাত যোগ করে জনগণের চোখে ধুলা দেয়া হচ্ছে। দেড় বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। বাড়তি বিভিন্ন খাতের সাথে শিক্ষা খাতকে সংযোগ করে জনগণের চোখে ধুলা দেয়া হচ্ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/586522