বাজারে সকল ধরনের সবজির দাম বৃদ্ধি॥ গতকাল শুক্রবার মিরপুর ১নং কাঁচাবাজারের ছবি -সংগ্রাম
৫ জুন ২০২১, শনিবার, ২:১৩

বাজেটের পরই নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন

জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের পরই নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন লেগেছে। চাল,ডাল, তেল, পেঁয়াজসহ অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের দাম। এছাড়া চাল, আটা, ময়দা,আদা, রসুন, ছোলা, ডাল, ব্রয়লার মুরগী ও ডিমসহ অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এমন কী সবজি বাজারেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। প্রতিটি সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্য মতে, ১৭টি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাজারে দেখা গেছে, চিকন, মাঝারি ও মোটা সব ধরনের চালের দাম গত তিন দিনের ব্যবধানে কেজিতে আরও ১ থেকে ২ টাকা বেড়ে গেছে। দাম বেড়ে চিকন চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৬ টাকায়, যা দুই দিন আগেও ৬০ থেকে ৬৪ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছিল। গরিবের মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়, যা আগে ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে।

চাল বিক্রেতা সফিকুল ইসলাম বলেন, বোরো নতুন চাল বাজারে আসার পরেও চালের বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। নতুন চালের দাম কিছুটা কম হলেও পুরনো চালের দাম বেশি। ধানের দাম বেশি বলে চালের দাম কমছে না।

এদিকে চালের পাশাপাশি দাম বেড়েছে আটা ও ময়দার দাম। ৩২ থেকে ৩৪ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া এক প্যাকেট আটার দাম বেড়ে এখন ৩৪ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্যাকেট ময়দার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৬ টাকায়, যা আগে ছিল ৪২ থেকে ৪৪ টাকার মধ্যে।
চাল ও আটার সঙ্গে ক্রেতাদের বাড়তি অর্থ গুণতে হচ্ছে সয়াবিন ও পাম তেলের জন্য। লুজ সয়াবিন তেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, যা গত শুক্রবার ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকার মধ্যে। আর পাম সুপার বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়, যা আগে ১১৫ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছিল। আর ৫ লিটার বোতলের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৭২৮ টাকায়।

অন্যদিকে পেঁয়াজের দাম দুই দফায় কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। গত শুক্রবার ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এর সঙ্গে বেড়েছে রসুনের দাম। আমদানি করা রসুনের দাম বেড়ে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা গত শুক্রবার ১২০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে ছিল। একইভাবে বাজারে মসুর ডালের দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

পেঁয়াজ-রসুন ব্যবসায়ী মো. রাসেল শিকদার বলেন, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা। আগামীকাল (৫ জুন) থেকে দাম বাড়ার কথা। আজ থেকেই সব দোকানেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। আজ সবাই ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দামে পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি করছে।

রাজধানীর কাঁচা বাজার সবজির বাজারও চড়া। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সবজির চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ বাড়েনি। বরং কিছু কিছু সবজির সরবরাহ কমে গেছে। এসব কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে। বাজারে বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। ঢেঁড়সের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। বরবটির দাম বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচকলা বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা হালি। গাজরের দাম বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়, । পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। ঝিঙে-চিচিংগা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। এক কেজি কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।

সবজি ব্যবসায়ী সবুজ হোসেন বলেন, লম্বা বেগুনের দাম বেড়ে দ্বিগুণের কাছাকাছি হয়েছে একদিনে। ২৮ টাকায় কিনে ৪০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ ৪০ টাকায় কিনে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। ৪০ টাকার শসা আজ বিক্রি করছি ৫০ টাকায়। খরচসহ আগে লাউ ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা পড়তো। বিক্রি করতাম ৪৫ টাকায়। আজ সেটা খরচই পড়েছে ৪৪ টাকা। বিক্রি করতে হচ্ছে ৫০ টাকায়।

এদিকে গরুর গোশত ৬০০ টাকা কেজির নিচে কেনা যাচ্ছে না। ব্রয়লার মুরগির দাম নাগালের মধ্যে হলেও দেশি মুরগির দাম বেশি। এছাড়া বেড়েছে গুঁড়োদুধের দাম।

এমন অবস্থায় নিত্যদিনের খাবারের চাহিদা মেটাতে চাপে আছে সীমিত আয়ের মানুষ। করোনা ভাইরাসের কারণে অনেকের আয় কমে গেছে। ফলে এ বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীল আচরণ কামনা করছেন অনেকে।

একজন ক্রেতা বলেন, করোনার মধ্যে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দাম কমাতে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া উচিত। বাজার মনিটরিং জোরদার করা উচিত ছিল। সেটা হয়নি। পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।

এদিকে বাজেটে মুড়িসহ কয়েকটি পণ্যের দাম কমার ঘোষণা থাকলেও, তার প্রভাব এই অল্প সময়ের মধ্যে পড়েনি।

https://dailysangram.com/post/454475