৩ জুন ২০২১, বৃহস্পতিবার, ২:০১

১১ জেলায় ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ নানা ব্যবস্থা

সারা দেশে ফের বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। বৃদ্ধি পাচ্ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। গতকাল প্রায় ২ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৩৪ জন। একদিনে শনাক্তের হার প্রায় ১০ শতাংশ। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে কমিউনিটি পর্যায়ে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর সেখানে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ১১টি জেলায় সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এজন্য সরকার নানা ব্যবস্থা নিয়েছে।
খুলনার চার থানায় এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। নওগাঁ পৌরসভা ও নিয়ামতপুরে ৭ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন। চুয়াডাঙ্গায় আংশিক লকডাউন দেয়া হয়েছে। কোভিড নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটিও সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী জেলাগুলোতে সম্পূর্ণ লকডাউন দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছে।

জাতীয় পরামর্শক কমিটি সিরিজ মিটিং করে সীমান্ত জেলায় জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া সবাইকে বাড়িতে থাকতে বলেছে। এই সময় গণপরিবহনও সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। সকল প্রকার রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সমাবেশ বন্ধ করার পক্ষেও কমিটি তাদের মতামত দিয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে পরামর্শক কমিটি বলেছে, দেশের সার্বিক কোভিড-১৯ পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী (রাজশাহী বিভাগের চাঁপাই নবাবগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, নওগাঁ এবং খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট) এলাকাতে সংক্রমণের উচ্চহার দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়াও আরো কিছু জেলাতে উচ্চ সংক্রমণ পরিলক্ষিত হয়। এসব জেলায় ইতিমধ্যে কমিউনিটি পর্যায়ে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

এদিকে গতকাল স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেছেন, শনাক্ত হারের বিপরীতে ১১টি জেলায় সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। তিনি বলেন, জেলাগুলোতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে সতর্কতা অবলম্বনের ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখানোর সুযোগ নেই। নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা দেখছি সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে শতকরা হিসাবে শনাক্তের হার অন্য যেকোনো জেলার তুলনায় অনেক বেশি বেড়ে গেছে। তবে আতঙ্কের কিছু নেই, সে জায়গাগুলোর হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেনসহ চিকিৎসাসামগ্রী মজুত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহে যদি আমরা সংক্রমণ পরিস্থিতি দেখি, তাহলে ২৬শে মে শতকরা হিসাবে শনাক্তের হার ছিল ৯ দশমিক ১১ শতাংশ। সেইদিন এক হাজার ৪৯৭ জন রোগী আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছিলাম। তারপর তিন দিন সংক্রমণের সংখ্যা খানিকটা কম ছিল। এরপর আবার সপ্তাহের শেষে এসে ৩১শে মে এবং পহেলা জুনে শনাক্তের সংখ্যা ১৭শ’ ছাড়িয়ে গেছে। এর মানে বুঝতেই পারছেন, সংক্রমণ কিন্তু আবার বাড়তে শুরু করেছে। করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ অবস্থায় আমাদের যেটি করণীয়, তা হলো- স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। এমনকি এ সতর্কবার্তাটি সবাইকে জানিয়ে দেয়া।

করোনা শনাক্ত প্রায় ২ হাজার, আরও ৩৪ জনের মৃত্যু: এদিকে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনার নিয়মিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৩৪ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ৬৯৪ জন। একই সময়ে নতুন শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯৮৮ জন। মোট শনাক্ত হয়েছে ৮ লাখ ৪ হাজার ২৯৩ জন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৯১৪ জন এবং এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ২০ হাজার ৩৯০টি। অ্যান্টিজেন টেস্টসহ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২০ হাজার ২৫৯টি। এখন পর্যন্ত ৫৯ লাখ ৮৬ হাজার ২২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং এখন পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং মারা গেছে ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

খুলনার চার থানায় এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ: খুলনা থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, খুলনা মহানগরীর তিনটি থানা ও জেলার রূপসা উপজেলা এলাকায় এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গতকাল সকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে তার সম্মেলন কক্ষে এ সভা হয়। খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। সভায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. কামাল হোসেন এবং খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে করোনা সংক্রমণের আধিক্য বিবেচনায় রূপসা উপজেলা, খুলনা সদর, সোনাডাঙ্গা এবং খালিশপুর থানায় জরুরি সেবা ব্যতীত সব দোকান, কাঁচাবাজার এবং জনসমাবেশের স্থান ৪ঠা জুন থেকে আগামী এক সপ্তাহ বন্ধ থাকবে।

রূপসা উপজেলা সহ খুলনা মহানগরীতে সন্ধ্যার পর দোকানপাট বন্ধ রাখা, হোটেলগুলোতে লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণ এবং যত্রতত্র একাধিক লোকের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় ব্যবস্থা নেবে। এ সময় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা আদায়, স্বাস্থ্যবিধি পালনে মনিটরিং জোরদার করা এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতে প্রচার-প্রচারণা চলমান থাকবে।

সভায় খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান, সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. রবিউল হাসান, মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইউসুপ আলী, সরকারি কর্মকর্তাসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

নওগাঁ পৌরসভা ও নিয়ামতপুরে ৭ দিনের লকডাউন ঘোষণা: নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, নওগাঁতে করোনা পরিস্থিতি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় নওগাঁ পৌরসভা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় ৭ দিনের লকডাউন ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বুধবার দিবাগত রাত ১টা থেকে ৯ই জুন রাত ১২টা পর্যন্ত এই লকডাউন কার্যকর থাকবে। এই নির্দেশনা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। গতকাল দুপুর ২টার দিকে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক হারুন অর রশিদ এই ঘোষণা দেন। এ সময় পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক উত্তম কুমার রায়, সিভিল সার্জন আবু হানিফসহ গণমাধ্যমকর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।

চুয়াডাঙ্গায় আংশিক লকডাউন: চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সীমান্তবর্তী কার্পাসডাঙ্গা এলাকায় আংশিক লকডাউন ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। লকডাউন এলাকায় বাঁশ বেঁধে চলাচল সীমিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ উপজেলার দুটি গ্রামে শুরু হয়েছে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা। এতে বুধবার দুপুর পর্যন্ত অন্তত ১৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল জানান, বুধবার সকাল থেকে উপজেলার হরিরামপুর ও শিবনগর গ্রামের সাধারণ মানুষের র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অন্তত ৮৭ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে। যার মধ্যে ১৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান জানান, সম্প্রতি দামুড়হুদা এলাকায় করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য কার্পাসডাঙ্গা এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ ছয়টি স্পট লকডাউন করা হয়েছে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=276593&cat=2