২ জুন ২০২১, বুধবার, ১:২৯

রাজশাহী নাটোর সাতক্ষীরায় করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী

আমের মৌসুম চলায় উত্তরাঞ্চলে লকডাউনে অনীহা

রাজধানী ঢাকার বাইরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে। করোনা সংক্রমণের হার রাজশাহীতে ৫০, নাটোরে ৫৩ ও সাতক্ষীরায় ৪১.২ শতাংশ। এছাড়া সীমান্ত এলাকায় করোনার সংক্রমণের হুমকিও বাড়ছে। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা সীমান্তবর্তী কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের ২১ নারী-পুরুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এখানে এক সপ্তাহে দুই নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তের চোরাপথে যাতায়াত করায় করোনা সংক্রমণ হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সিলেট ও রংপুর বিভাগেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এদিকে, করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য বিভাগ কঠোর লকডাউনের সুপারিশ করলেও স্থানীয় প্রশাসন তা আমলে নিচ্ছে না। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় আমের মৌসুম চলায় লকডাউন কার্যকর করা হচ্ছে না। এ সম্পর্কে ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

রাজশাহী : করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে রাজশাহীসহ আশপাশের জেলাগুলোয় স্বাস্থ্য বিভাগ কঠোর লকডাউনের সুপারিশ করলেও স্থানীয় প্রশাসন তা আমলে নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবদুল জলিল যুগান্তরকে বলেন, এখানে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। এ নিয়ে আজ রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার দপ্তরে জরুরি সভা হওয়ার কথা রয়েছে। কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হবে কি না সে বিষয়ে সভার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে সোমবার দুপুর থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত সাত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচজন শনাক্ত ও দুজন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এরমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনজন, নওগাঁর দুজন, রাজশাহী ও নাটোরের একজন করে মারা গেছেন। একই সঙ্গে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে ২১৬ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন। রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল ইসলাম তালুকদার জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলেও রাজশাহীর পরিস্থিতির বেশ অবনতি ঘটছে। এখানে সংক্রমণের গড় হার ৫০ শতাংশের উপরে।

নাটোর : নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. কাজী মিজানুর রহমান জানান, জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ৩২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৭ জনের করোনা পজিটিভ হয়েছে। আক্রান্তের হার ৫৩ শতাংশ। সোমবার সংক্রমণের হার ছিল ৩৭ শতাংশ। আক্রান্ত ১৭ জনের মধ্যে ১৪ জনের অবস্থান নাটোর শহর ও শহরতলী এলাকায়। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। করোনা পজিটিভ ব্যক্তিদের চিকিৎসা এবং প্রয়োজনে খাদ্য সহায়তার সিদ্ধান্ত হয়।

সাতক্ষীরা : করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সাতক্ষীরা সীমান্তে কড়া নজরদারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেছেন, সীমান্ত পথে দেশে আসা ব্যক্তিদের কঠোর কোয়ারেন্টিনে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, রোববার ৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৭ জনের পজিটিভ পাওয়া গেছে। ২৩ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত শনাক্তের হার ৪১.২ শতাংশ। গত বছর থেকে এ পর্যন্ত ৪৭ জন মারা গেছেন।

করোনা রোধে বেশকিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল বলেন, ভোমরা স্থলবন্দরে আসা ভারতীয় ট্রাক ও হেলপারদের প্রকাশ্যে বেড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সিলেট : গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে ৮৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ৬৩ জন, সুনামগঞ্জে ২ জন, হবিগঞ্জে ৬ জন ও মৌলভীবাজারে ১ জন রয়েছেন। একই সময়ে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১২ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. সুলতানা রাজিয়া জানান, এ বিভাগে করোনায় আরও ৩ জন মারা গেছেন। তারা সবাই সিলেট জেলার বাসিন্দা।

রংপুর : রংপুর বিভাগের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর জেলাসহ পুরো বিভাগের আট জেলায় করোনার ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা বাড়ছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, সীমান্ত দিয়ে বৈধপথে দেশে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হলেও সেখানকার মানুষ তাদের সংস্পর্শে থাকছেন। এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। এছাড়া আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সীমান্তে অবৈধপথে চোরাকারবারিরা যাতায়াত শুরু করেছে। তাদের মাধ্যমেও করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগে ২৮২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) : দামুড়হুদা উপজেলা সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে করোনায় ৫১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সোমবার একদিনে ১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কার্পাসডাঙ্গা গ্রামে করোনায় ২১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এখানে করোনায় তিনজন মারা গেছেন। তারা হলেন- কার্পাসডাঙ্গা আব্দুল মান্নান (৫০), কুড়ুলগাছি গ্রামের আমেনা খাতুন (৫২), হাতিভাঙ্গা গ্রামের কদবানু (৫৫)। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) : দৌলতপুর সীমান্তের চোরাপথে বাংলাদেশিদের যাতায়াতে করোনার আশঙ্কা বাড়ছে। চোরাপথে ভারতের কেরালা থেকে ফেরত একজনকে আটক করে বিজিবি দৌলতপুর থানায় সোপর্দ করেছে। কুষ্টিয়ায় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার বেড়েছে। সিভিল সার্জন ডা. এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ভারত ফেরতদের মধ্যে তিনজনের করোনা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা খারাপ। তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়লেও মানুষের মধ্যে সচেতনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

টেকনাফ (কক্সবাজার) : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় টেকনাফে ৬ জুন পর্যন্ত কঠোর লকডাউন বাড়ানো হয়েছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ চৌধুরী জানান, উখিয়া উপজেলা ও উখিয়া-টেকনাফের পাঁচটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও লকডাউনের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামসুদ্দৌজা বলেন, উখিয়ার ২, ৩, ৪, ১৫ ও ২৪ নম্বর ক্যাম্পকে ১০ দিনের জন্য লকডাউন দেওয়া হয়েছিল। তা আরও ৬ দিনের জন্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। ক্যাম্পে চিকিৎসা, খাদ্যপণ্যসহ জরুরি কার্যক্রম ছাড়া সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/426833