২ জুন ২০২১, বুধবার, ১:২৭

বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবীদের ধাওয়া খেলেন এমপি

খুলনার কয়রা উপজেলায় বাঁধ মেরামতে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবীদের ধাওয়া খেয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দশহালিয়ার ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধে ট্রলার নিয়ে পরিদর্শনে গেলে স্থানীয়রা তাকে তীরে ভিড়তে বাধা দেন। এ সময় উত্তেজিত জনতা তার ট্রলার লক্ষ্য করে ঢিল ও কাদা ছোড়েন। উপায়ান্তর না পেয়ে সেখান থেকে সটকে পড়েন সংসদ সদস্য। পরে পুলিশ প্রহরায় তিনি আবার এলাকায় যান।

স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকেই মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় বাঁধ মেরামতের কাজ করছিলেন স্থানীয় জনগণ। গত এক সপ্তাহ কাজ করেও ওই ভাঙন মেরামত করতে পারেননি স্বেচ্ছাসেবীরা। ভাঙনের কারণে মহারাজপুর ও পার্শ্ববর্তী বাগালী ইউনিয়নের অন্তত ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন এলাকার মানুষ। কয়েক দিনের চেষ্টার পর মঙ্গলবার সকাল থেকে আবার কাজ শুরু করেন স্থানীয় জনগণ। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খুলনা-৬ আসনের (কয়রা-পাইকগাছা) এমপি আক্তারুজ্জামান বাবু ট্রলার নিয়ে কপোতাক্ষ নদী ধরে দশহালিয়ার ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে যান। তার ট্রলারটি নদী তীরে ভেড়ানোর আগে স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়েন।

ক্ষুব্ধ জনগণ ঢিল ও কাদা ছুড়ে মারেন সংসদের দিকে। এ সময় তার ট্রলারে কয়রা থানার অফিসার ইনচার্জ রবিউল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। মানুষ প্রায় ১৫ মিনিট ধরে বৃষ্টির মতো কাদা ছুড়ে মারেন ট্রলার লক্ষ্য করে। এ সময় মাইকে ঘোষণা দিয়ে কাদা ছোড়া থেকে নিবৃত করা সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে উপায় না পেয়ে এমপি ট্রলার নিয়ে সেখান থেকে সটকে পড়েন। মানুষের ছোড়া কাদায় এমপি বাবুর শরীর জবুথবু হয়ে যায়। এ সময় প্রায় ঘণ্টাব্যাপী কাজ বন্ধ রাখা হয়। এরপর উত্তেজিত জনতা শান্ত হলে পুলিশ প্রহরায় এমপি ফের ভাঙন এলাকায় যান।

সেখানে গিয়ে এমপি বাবু বাঁধ মেরামতে নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি জানি দুর্বল বেড়িবাঁধের কারণে আপনারা ভোগান্তিতে রয়েছেন। আমরা চেষ্টা করছি টেকসই বাঁধ নির্মাণের। আপনারা শান্ত হোন শিগগিরই মজবুত বাঁধ নির্মাণ করা হবে।’ এরপর তিনি নিজে কাজে নেমে পড়েন। তবে তার কাজে যোগ দেওয়ায় অধিকাংশ লোকজন ভাঙন কবলিত স্থান থেকে চলে যান। এমপির ওপর কাদা ছোড়া ঘটনার ২ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, মানুষ বৃষ্টির মতো ঢিল-কাদা ছুড়ছেন। এক ব্যক্তি মাইকে জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন তবে সাধারণ মানুষ তা থেকে নিবৃত হচ্ছেন না।

এমপির ওপর সাধারণ মানুষের চড়াও হওয়ার বিষয়ে কয়রা থানার অফিসার ইনচার্জ রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ভুল বোঝাবুঝির কারণে সাধারণ মানুষ উত্তেজিত হয়েছিলেন। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।’

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, গত বছর আম্পানের আঘাতের পর দশহালিয়ার ভাঙন মেরামতের কাজ সম্পন্ন করেছে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জিএম আবদুল্লাহ আল মামুন ও এমপির নিজের লোকজন। তারা কাজ ঠিকভাবে না করে অর্থ আত্মসাৎ করায় এবার আবার বাঁধ ভেঙেছে। সে কারণে মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটেছে।

কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জিএম মহসিন রেজা যুগান্তরকে বলেন, এমপি স্থানীয় রাজনীতির শিকার। মাহমুদ আলী নামের একজন আওয়ামী লীগ নেতাকে এ ঘটনার জন্য দায়ী করেন তিনি।

কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন পানিবন্দি থাকায় মানুষ ক্ষুব্ধ। গত এক বছরে বাঁধের কাজও হয়নি ঠিকমতো। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জিএম আবদুল্লাহ আল মামুন ও এমপির লোকজন ওই বাঁধ মেরামতের কাজ করেছেন। তবে ঠিকভাবে মেরামত না করা নিয়ে মানুষ ক্ষুব্ধ। যে কারণে মঙ্গলবার এমপি সংশ্লিষ্ট এলাকায় গেলে ক্ষোভ প্রকাশ করে তার ওপর চড়াও হন মানুষ।

এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, এখানকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই কষ্টের মধ্যে রয়েছেন। তাদের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ। আমি নেমে তাদের কথার উত্তর দেই। এরপর তাদের শুকনো খাবার দেই। তবে কাদা ও ঢিল ছুড়ে মারার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/426830/