২ জুন ২০২১, বুধবার, ১:২১

যানজট-জলজটে ভোগান্তি

রাজধানীর সড়কে হাঁটু পানি : আগের মতো অবস্থা হয়নি এবার-তাপস

রাজধানীতে গতকাল মঙ্গলবার মাত্র তিন ঘণ্টায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। মুষলধারায় একটানা বৃষ্টির কারণে বেশির ভাগ সড়কে হাঁটু পানি জমে যায়। ফলে গত কয়েক মাসে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে দুই সিটি করপোরেশনের ড্রেন-খাল-নালা পরিষ্কার পুরোপুরি ব্যর্থ প্রমাণিত হয়। জলাবদ্ধতার কারণে সকালে যেমন অফিসগামীরা বিপদে পড়েছেন, এর সাথে সারাদিনই জমে থাকা পানির কারণে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয় নগরজুড়ে। সব মিলিয়ে নগরবাসীকে এক অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।

আবহাওয়া অফিস বলছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের নানা জায়গায় গত রাত থেকে অল্প ও ভারী বর্ষণ হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১০৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে চট্টগ্রাম অন্য দিকে ঢাকায় সকাল ছয়টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। এর বাইরে নেত্রকোনায় ৯৭ মিলিমিটার ও ময়মনসিংহে ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

রাজধানীতে গতকাল ভোর থেকেই মুষলধারায় বৃষ্টিপাত হয়। তাতে তলিয়ে যায় বেশির ভাগ রাস্তা। বনানী, খিলক্ষেত ছাড়াও উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, কাজীপাড়া, মতিঝিল, গুলিস্তান, মালিবাগ, মৌচাক, রাজারবাগ, তেজগাঁও, কাওরান বাজার, ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর, মিরপুর-১২, মগবাজার, শান্তিনগর, বাড্ডা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। কোনো কোনো সড়কে জমে যায় হাঁটুপানি। কোথাও কোথাও ফুটপাথ ছাড়িয়ে মানুষের বাসাবাড়িতেও ঢুকে পড়ে পানি। এতে দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। বিশেষ করে অফিসগামী মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সকালে অনেক কর্মজীবী মানুষকে পানির মধ্যে প্যান্ট হাঁটু পর্যন্ত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আবার অনেক মানুষকে পানি ডিঙিয়ে অফিসের পথে যাত্রা করতেও দেখা গেছে। পরিবহনের জন্য মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অনেককে। এ দিকে সকালে বৃষ্টির কারণে গণপরিবহন সঙ্কট দেখা দেয়। এতে যাতায়াতে অফিসগামীদের সমস্যায় পড়তে হয়। দুপুরের দিকে সড়কে গাড়ি বাড়লে জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে সৃষ্টি হয় যানজট। এতে আবার নতুন সঙ্কট সৃষ্টি হয়।

গতকাল সকালে বৃষ্টির পর রাজধানী ঘুরে নগরবাসীকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়ার চিত্র দেখা গেছে।
গ্রিন রোডে হাঁটু পানি জমে থাকতে দেখা যায়। সড়ক থেকে ফুটপাথও পানিতে তলিয়ে যায়। এতে পানির মধ্য দিয়ে গাড়ি চলার সময় ঢেউ তৈরি হয়। ঢেউয়ের কারণে ফুটপাথে চলাচলকারীরাও বিপাকে পড়েন। তাদের পরিধানের কাপড় ভিজে যায়। সকালে রাজারবাগ, খিলগাঁও রেলগেট, মালিবাগ রেলগেট ও মৌচাকসহ বিভিন্ন এলাকায় অফিসগামী মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু এ সময় তারা পর্যাপ্ত গণপরিবহনও পায়নি। এ কারণে বাসের প্রতিটি সিটে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায়।

রামপুরার বাসিন্দা হামিদুর রহমান বলেন, প্রতি বছর বর্ষার শুরু হলে দুই মেয়র ও মন্ত্রীরা আশ্বাস দেন। কিন্তু কখনো জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধান হয় না; বরং দিন দিন নদী থেকে সাগরে পরিণত হচ্ছে রাজধানী। শরিফুল ইসলাম নামে একজন বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, সকাল ৯টায় খিলক্ষেত থেকে বের হয়েছি। রাস্তায় পানি, যানজটের কারণে ধানমন্ডি ৭/এ-তে আসতে দুই ঘণ্টা ২০ মিনিট লেগে গেছে।

ইয়াসিন মিয়া নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী জলাবদ্ধতার মধ্যেই ছাতা মাথায় নিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়েছেন। তিনি বলেন, মহাখালী অফিসে যাব, কিন্তু গণপরিবহন কম, তাই হেঁটেই সামনের দিকে এগোতে শুরু করেছি। কিন্তু সড়কেও জলাবদ্ধতা, হাঁটাও যাচ্ছে না। জলাবদ্ধতার কারণে এর মধ্য দিয়ে যখন গণপরিবহন চলছে তখন ফুটপাথেও ঢেউ এসে পড়ছে, জামা-কাপড়ও ভিজে যাচ্ছে। কিন্তু অফিসে তো যেতে হবে, তাই বাধ্য হয়ে এরমধ্যেই যাচ্ছি।

আরিফুর রহমান নামে এক পথচারী বলেন, প্রতি বছরই বৃষ্টি হলে রাজধানীতে এমন জলাবদ্ধতা হয়। সাধারণ মানুষ পড়ে ভোগান্তিতে। কিন্তু এই জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। যার মাশুল দিতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের। যারা আজ কাজে বের হয়েছেন তাদের প্রত্যেকে ভোগান্তিতে পড়েছেন। কোথাও হাঁটু পানি, কোথায় গণপরিবহন সঙ্কট সব মিলিয়ে ভোগান্তি যেন সাধারণ মানুষের। এ ছাড়া বৃষ্টি জলাবদ্ধতার মধ্যে যেসব মানুষ কর্মক্ষেত্রে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, সুযোগ বুঝে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকরা তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া হাঁকছেন।

চান মিয়া নামের একজন অটোরিকশা চালক বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে, এর মধ্যে গাড়ি নিয়ে গেলে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায় মাঝে মাঝে। তারপরও আমরা যাত্রী পৌঁছে দেই। মানুষের প্রয়োজন আর আমরাও বৃষ্টির মধ্যে যাত্রী সেবা দিচ্ছি। তাই সবাই একটু বেশি ভাড়াই চাই। হাতিরঝিলের দিক থেকে আসার সময় গুদারাঘাটের আগে পানি জমা ছিল, সেখানে আসার পর আমার গাড়িও ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। পরে ঠেলে এনেছি, এখন ঠিক হয়েছে। এসব কারণে আমরা একটু ভাড়া বেশি চাইছি এ সময়।

মিরপুর এলাকায় ইশতিয়াক হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, আমি গুলিস্তান যেতে চাচ্ছি। কিন্তু বৃষ্টির জন্য গাড়ি পেতে বেগ পোহাতে হচ্ছে। আধা ঘণ্টার বেশি সময় হলো দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু কোনো গাড়ি পাচ্ছি না।

সকাল সাড়ে ৮টায় বিমানবন্দর সড়কের জিল্লর রহমান উড়াল সেতুর কাছে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষারত সাদিকুল ইসলাম হিরু বলেন, রাস্তায় বাস কম। বাসের অপেক্ষায় আছি। বাসগুলো বিভিন্ন স্থানে আটকে আছে। বিমানবন্দর সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় সকাল থেকেই এ সড়কে যান চলাচল করছে ধীরগতিতে। খিলক্ষেত থেকে কুড়িল ও বনানী এলাকা প্রায় এক ঘণ্টায় পার হন প্রাইভেটকার চালক শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, বনানী সেতু ভবনের সামনে পানি থই থই করছে। এতে গাড়ি ধীরে চলায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

২০১৭ সালের আগস্টে প্রচণ্ড বৃষ্টিতে শহরজুড়ে ব্যাপক জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছিল। তখন এক দিনে ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিতে এমন পরিস্থিতি হওয়ার পর তীব্র সমালোচনার মুখে কর্তৃপক্ষ স্বল্পসময়ের মধ্যেই এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলছিলেন।

কিন্তু গতকালের সকালের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার ছবিতে সয়লাব হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তবে দু’বছর পরেও কেন পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হলো না তা নিয়ে ঢাকার দু’টি সিটি করপোরেশনের কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

যদিও গত বছরের ডিসেম্বরে জলাবদ্ধতার সাথে জড়িত বেশ কিছু খালের দায়িত্ব ওয়াসার কাছ থেকে সিটি করপোরেশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপর কয়েকটি খাল ও বক্স কালভার্ট থেকে বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু করার খবরও দিয়েছিল সিটি করপোরেশন থেকে।
নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশে প্লানার্স ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলছেন, ‘ঢাকার যে অবস্থা তাতে অতিবৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা হবে নাÑ এ ধারণাটাই বরং ভুল। ভুল পরিকল্পনার পাশাপাশি জলাধার জলাশয় সব শেষ করে দেয়া হয়েছে। এখন যতই প্রাতিষ্ঠানিক কাজ চলুক না কেন হঠাৎ এত বৃষ্টি হলে তা সামাল দেয়া বর্তমান ড্রেনেজ সিস্টেমের পক্ষে অসম্ভব।’ তিনি বলেন, মাত্র কিছু দিন আগে কয়েকটি খাল পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছে সিটি করপোরেশন কিন্তু সেটি এই পরিমাণ বৃষ্টির জন্য যথেষ্ট হবে না।

ঢাকাবাসীকে কোমর পানিতে নাজেহাল হতে হয়নি : তাপস
অতীতের মতো ঢাকাবাসীকে কোথাও কোমর পানি বা গলা পানিতে নাজেহাল হতে হয়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিটি করপোরেশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে তিনি এ কথা জানান।
ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আমরা লক্ষ করেছি, বেশ কয়েকটি জায়গায় জলজট হলেও বিগত সময়ের জলজটের পরিমাণ ও স্থান সংখ্যার তুলনায় তা অনেকাংশেই কম। বিগত পাঁচ মাসে আমাদের গৃহীত কার্যক্রম এবং সকাল থেকে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঠ পর্যায়ে তৎপরতার কারণে বৃষ্টির পানি দ্রুততার সাথে নেমে যায়।

‘সেজন্য আমি আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানাই। সাধারণত কোনো স্থানে তিন ঘণ্টার বেশি পানি জমে থাকাকে জলাবদ্ধতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আজকের বৃষ্টিতে আমরা তিন ঘণ্টার মধ্যে প্রায় শতভাগ পানি নিষ্কাশন করতে সক্ষম হয়েছি, যদিও আমাদের লক্ষ্য ১ ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন করা।’ তিনি আরো বলেন, আমি আগেও বলেছি, আমাদের কার্যক্রমের পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইস গেটগুলো দ্রুত আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হোক। তা এখনো হয়নি। এ ছাড়া ডিএনডি বাঁধ, হাতিরঝিল প্রকল্প, মেট্রোরেলের কার্যক্রমের ফলে জলাবদ্ধতার সম্পূর্ণ সমাধান এখন পর্যন্ত দেয়া সম্ভব না হলেও অতীতের মতো ঢাকাবাসীকে কোথাও কোমর পানি বা গলা পানিতে নাজেহাল হতে হয়নি।

‘আজকের বৃষ্টিতে যেসব জায়গায় জলজট সৃষ্টি হয়েছে আমরা সেসব স্থানকে আমাদের পরবর্তী কার্যক্রমে প্রাধিকার দেবো এবং আগামী দুই বছরের মধ্যে জলাবদ্ধতাকে একটি সহনীয় মাত্রায় আনতে সক্ষম হবো বলে আমি বিশ্বাস করি। আমাদের প্রত্যাশা হলো, দীর্ঘমেয়াদে ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেয়া। ’

‘আপনারা অবগত আছেন যে, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ওয়াসার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেয়ার পর ২ জানুয়ারি থেকে জিরানি, মান্ডা, শ্যামপুর, কালুনগর খালসহ খালগুলোর শাখা-প্রশাখা এবং পান্থপথ ও সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্ট থেকে আমরা বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু করেছি। ’

মেয়র তাপস আরো বলেন, ইতোমধ্যে এসব খাল ও বক্স কালভার্ট থেকে ১ লাখ ৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টনের বেশি বর্জ্য ও ৬ লাখ ৭৯ হাজার মেট্রিক টন পলি অপসারণ করেছি। এ ছাড়াও ওয়াসার কাছ থেকে বুঝে পাওয়া অচল দু’টি পাম্প স্টেশনের তিনটি পাম্প মেশিন সচল করতে সক্ষম হয়েছি এবং বাকি তিনটি সচল করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও ওয়াসার কাছ থেকে পাওয়া বদ্ধ নর্দমা ও আমাদের উন্মুক্ত নর্দমাগুলো পরিষ্কারের কাজ চলমান। এই জুনের মধ্যেই তা শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ’

ভারীবর্ষণে অচল গাজীপুর মহানগর
গাজীপুর মহানগর সংবাদদাতা জানায়, গতকাল ভোরের ভারীবর্ষণে গাজীপুর মহানগরীর সার্বিক জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছিল। অফিসগামী মানুষ বাসাবাড়িতে পানিবদ্ধ হয়ে আটকা পড়ে। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। বর্ষণের পানিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ নগরীর বেশির ভাগ অভ্যন্তরীণ সড়ক প্লাবিত হয়। পানি ঠেলে ধীরগতিতে পরিবহন চলাচলের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মঙ্গলবার দিনভর ছিল তীব্র যানজট। কলকারখানা, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি অনেক মসজিদের ভেতরও বর্ষণের পানি ঢুকেছে। সবচেয়ে দুর্ভোগের শিকার হন বস্তি এলাকার বাসিন্দারা। নগরীর টঙ্গী, পূবাইল, গাছা, বাসন, কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর এলাকার বেশির ভাগ রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি বর্ষণের পানিতে একাকার হয়ে যায়।

টঙ্গীর এরশাদ নগর (দত্তপাড়া পুনর্বাসন) এলাকাসহ বেশির ভাগ বস্তির ঘরে ঘরে বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার পানি ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র নষ্ট হয়। এ ছাড়া টঙ্গী নগর ভবন, টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল ও টঙ্গী পূর্ব থানা কম্পাাউন্ড হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে যায়। নগরীর মেঘডুবি, ৪০ নম্বর ওয়ার্ড, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বরুদা দক্ষিণ পাড়ার বেশির ভাগ রাস্তাঘাট দিনভর ছিল পানির নিচে। টঙ্গীর অভিজাত এলাকা হিসেবে খ্যাত ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজ রোড, সফিউদ্দিন রোড, সুরতরঙ্গ রোড, মোক্তার বাড়ি রোড, মোল্লা বাড়ি রোডে পানিবদ্ধতার কারণে গাড়ি চলাচলও বন্ধ ছিল। ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড এরশাদ নগরের বেশির ভাগ বাসাবাড়ির খাট, আসবাবপত্র পানিতে ভাসতে দেখা গেছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, বর্ষণের পানিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। টঙ্গী কলেজ গেট, বনমালা-সফিউদ্দিন সংযোগস্থল, হোসেন মার্কেট, এরশাদ নগর, তারগাছ এলাকায় ড্রেন উপচে মহাসড়ক ছিল হাঁটু পানির নিচে। এ ছাড়া মহাসড়কের বাসন ভোগড়া বাইপাস মোড় ও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা প্লাবিত হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি করে। নগরীর টঙ্গী-কালীগঞ্জ-নরসিংদী সড়কের মিরের বাজার এলাকাও প্লাবিত হয়।

টঙ্গী সরকারি কলেজ, সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজ, পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজসহ বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিচতলার শ্রেণীকক্ষ ছিল পানির নিচে। উন্নয়ন কর্মকা ও ময়লা-আবর্জনাসহ নানা কারণে নগরীর ড্রেনগুলোতে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়ক ছাড়াও নগরের বেশির ভাগ অভ্যন্তরীণ সড়ক ডুবে যায়। মঙ্গলবার বর্ষণের পানির কারণে টঙ্গী পূর্ব থানার ভেতর থেকে কোনো প্রাইভেট কার বের হতে পারেনি এবং থানার ভেতর যেতেও পারেনি। চারদিকে পানি বেষ্টিত টঙ্গী পূর্ব থানা কম্পাউন্ডকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো দেখা গেছে। থানা ও সরকারি হাসপাতালের সামনে কালীগঞ্জ সড়কে ছিল হাঁটু পানি। মহাসড়কের ওপরে পানি ভেঙে যান চলাচলের সময় বিভিন্ন পয়েন্টে বেশ কয়েকটি গাড়ি গর্তে পড়ে মারাত্মক যানজটের সৃষ্টি হয়। এসব গাড়ি সরাতে হিমশিম খেতে দেখা গেছে জিএমপি ট্রাফিক পুলিশকে। পানিবদ্ধ এসব পয়েন্টে রাস্তায় হাঁটু পানি মাড়িয়ে পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। বর্ষণ থেমে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই পানি কমতে থাকায় বিকেলে রাস্তাঘাট ধীরে ধীরে চরের মতো জাগতে থাকে। তবে ততক্ষণে সড়কে অসংখ্য গর্ত তৈরি হওয়ায় যানজট লেগেই ছিল।

এ দিকে এই জলাবদ্ধতাকে সাময়িক ও উন্নয়ন যন্ত্রণা দাবি করে গাজীপুর নগর কর্তৃপক্ষ জানায়, নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডেই রাস্তা-ড্রেন সংস্কারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাে র কারণে এবার একটু বেশি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ‘দ্রুত গতির বাস চলাচল’ (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ চলমান। বিআরটি ড্রেনের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় সিটি করপোরেশনের অভ্যন্তরীণ ড্রেনগুলোর পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিআরটি ড্রেনগুলো পরিপূর্ণভাবে চালু না হওয়া পর্যন্ত নগর কর্তৃপক্ষ কিছু বিকল্প পদ্ধতিতে পানি সরানোর চেষ্টা করছে।
গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, টানা বৃষ্টির কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে গতকাল বিকেল পর্যন্ত চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকসহ এলাকাবাসীকে।

তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিআরটি প্রকল্পের আওতায় গাজীপুরে সড়ক ও ড্রেন-সুয়ারেজ লাইনের নির্মাণ ও উন্নয়ন কাজ গত কয়েক বছর ধরে চলছে। কিন্তু ঢিলেঢালাভাবে কাজ করায় তা এখনো শেষ হয়নি। ফলে গত কয়েক বছর ধরেই বর্ষা মৌসুমে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সড়কের বিভিন্নস্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার মেহেদী হাসান জানান, টানা বৃষ্টির কারণে মহাসড়ক ও সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে না পারায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয় এবং বিকেল পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল।
গাজীপুর সওজর উপবিভাগীয় সহকারী প্রকৌশলী জামিল আক্তার লিমন ও বিআরটি প্রকল্পের প্রকৌশলী মোস্তফা মুন্সী বলেন, আমাদের লোকজন সকাল থেকেই রাস্তার পানি সরানোর কাজে নিয়োজিত ছিল। বিআরটি প্রকল্পে নালার কাজও বেশির ভাগ শেষ হয়ে গেছে। কিছুটা বাকি থাকায় পানি সরানো সম্ভব হচ্ছে না বলে বৃষ্টি হলে সড়ক ও সড়কের পাশে পানি জমে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সাইনবোর্ড থেকে শিববাড়ি পর্যন্ত সড়কের দুই পাশেই পাইপ বাসানোর বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। বাকি কাজ আগামী ১৫ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার আশা করছি। তখন আর এ এলাকায় পানি জমবে না।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/585713/