১ জুন ২০২১, মঙ্গলবার, ১:১৪

করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে মৌলভীবাজারে আতঙ্ক

করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা প্রবাসী, পর্যটন ও সীমান্তবর্তী জেলা মৌলভীবাজারে। গত কয়েকদিন থেকে নতুন করে এমন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কারণ, দেশের সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাই নবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরাসহ অন্যান্য জেলা থেকে করোনা আক্রান্ত অনেক ব্যক্তিই এ জেলায় অবস্থান করছেন। চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে আসা অধিকাংশ লোকজন ফেরিওয়ালা। জেলার সবক’টি শহরে ও গ্রামে এরা প্লাস্টিক সামগ্রী বিক্রি করে। আর অন্যরা রিকশাচালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও শ্রমিক। ঈদের আগে তারা গ্রামের বাড়ি যান। আর মৌলভীবাজারে ফেরেন ঈদের পর।

এসব জেলা থেকে আসা মানুষকে নজরদারিতে রেখেছে প্রশাসন। শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলা ছাড়া অন্য উপজেলাগুলোতে এরা অনেকেটাই গা ঢাকা দিয়েছে। এদের নিয়ে এখন নতুন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণ এ জেলার বাসিন্দাদের। তাছাড়া আম ও লিচুর ভরা মৌসুম থাকায় মৌসুমী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা বাগান মালিক ওখানের আড়তগুলোতে তা বিক্রির জন্য আসছেন। আর নিজের অজান্তেই সংক্রমিত করছেন অথবা হচ্ছেন।

চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে শ্রীমঙ্গলে আসা ৩৪ জনের মধ্যে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তাদের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে কিনা জানতে আইডিসিআর-এ নমুনা পাঠানো হয়েছে। এমন খবরে প্রবাসী ও পর্যটন অধ্যুষিত এ জেলার বাসিন্দারা নতুন করে উৎকণ্ঠায় পড়েছেন।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শ্রীমঙ্গল শহরের সিন্দুর খান সড়কসহ আশপাশের ৩৪ জন ঈদ পালনে চাঁপাই নবাবগঞ্জ যান। ঈদ শেষে ২৬শে মে শ্রীমঙ্গলে ফিরলে স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের প্রত্যেকের শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে সিলেট শাহ্‌জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিসিআর ল্যাবে পাঠায়। ২৮শে মে রাতে আসা রিপোর্টে ১৩ জনের শরীরে করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়। আর মৌলভীবাজার শহরের বড় কাপন ও চাঁদনীঘাট এলাকায় ৩০শে মে ৬৯ জন চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে আসা ব্যক্তির সন্ধান মিলে। খবর পেয়ে ওই এলাকায় ছুটে যান পৌর মেয়র মো. ফজলুর রহমান। তাদেরকে সতর্ক ও সচেতন করে বাসা লকডাউন করেন। মেয়র জানান, তাদের সবার করোনা পরীক্ষা করা হবে। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে। জেলার বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় এমনিতেই বাড়তি ঝুঁকি রয়েছে। যদিও বিজিবি’র বাড়তি সর্তকতা ও নজরদারি রয়েছে। তারপরও চোরাকারবারী ও অপরাধীদের দৌরাত্ম্য ও অপকৌশলতো রয়েছেই। সম্প্রতি জেলার কুলাউড়া উপজেলায় ভারতফেরত একটি পরিবারের সদস্যরা করোনা আক্রান্ত হন। পরে তাদের বাসা লকডাউন করা হয়। তাদের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে কিনা জানতে আইডিসিআর-এ নমুনাও পাঠানো হয়। তাছাড়া প্রবাসী অধ্যুষিত এ জেলায় অনেক প্রবাসী দেশে ফিরছেন। নানা ছলচাতুরিতে তারা হোম কোয়ারেন্টিনেও থাকছেন না। এ পর্যন্ত কত সংখ্যক প্রবাসী এসেছেন তারও সঠিক পরিসংখ্যান নেই সরকারি কোনো দপ্তরে।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মার্চের দিকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির দিক থেকে দেশের মধ্যে শীর্ষে ছিল (শতকরা ২২ থেকে ২৯ ভাগ পর্যন্ত) মৌলভীবাজার। করোনার দ্বিতীয় ঢে য়ের শুরুর দিকে এমন ঝুঁকি ও শঙ্কা ছিল চলমান। তারপর লকডাউন, মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর প্রদক্ষেপ অনেকেটাই ফলপ্রসু হয়। আক্রান্তের হারও অনেকটাই কমে আসে (১৬.১ ভাগ)।

সিভিল সার্জন চৌধুরী ডা. জালাল উদ্দিন মুর্শেদ মুঠোফোনে মানবজমিনকে জানান চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে আসা ৬৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের বাসা লাকডাউন করা হয়েছে। শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়ায় পজেটিভ ব্যক্তিদের করোনা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট কিনা তা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে চিঠি দেয়া হয়েছে। মূলত ল্যাবের মাধ্যমেই আইডিসিআর করোনার ধরন শনাক্ত করে থাকে। তিনি বলেন, চাঁপাই নবাবগঞ্জ ছাড়া অন্য জেলার কারো এখন পর্যন্ত পজেটিভ পাওয়া যায়নি।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=276262&cat=3