নওগাঁ জেলার সীমান্তে সতর্ক পুলিশ
১ জুন ২০২১, মঙ্গলবার, ১:১৪

লকডাউন বাড়লো চাঁপাইয়ে

সাত জেলায় কি হচ্ছে?

করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা দেয়ায় সীমান্তবর্তী ৭ জেলায় বিশেষ লকডাউন বাস্তবায়ন চায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে একটি সুপারিশ পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। গতকাল রাতে এ নিয়ে বৈঠক করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত আজ নির্দেশনা আকারে মাঠ প্রশাসনে পাঠানো হতে পারে। তবে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় চাঁপাই নবাবগঞ্জে দ্বিতীয় দফায় লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। ১লা জুন থেকে ৭ই জুন পর্যন্ত এ লকডাউন কার্যকর থাকবে। সারা দেশে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের মধ্যেই ২৪শে জুন চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন প্রথম দফার লকডাউন ঘোষণা করেছিল। তখন থেকে চাঁপাই নবাবগঞ্জের সঙ্গে সারা দেশের গণপরিবহন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে।
কিন্তু চাঁপাই নবাবগঞ্জের পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলেও এসব জেলায় বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ভারত সীমান্তবর্তী এসব জেলায় লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করতে দেরি হলে সংকট বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের সীমান্ত এলাকায় মৃত্যু এবং আক্রান্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য কারিগরি কমিটির পরামর্শ মতে, সীমান্তের সাত জেলায় দ্রুতই সর্বাত্মক লকডাউন দেয়া হবে। এ ছাড়া যেসব জেলায় কোভিডের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী সেখানে লকডাউন দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লকডাউন দিয়ে দেয়া উচিত, যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কোনো এলাকায় করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি খারাপ হলে স্থানীয় প্রশাসন, সিভিল সার্জন ও জনপ্রতিনিধিরা মিলে পুরো জেলা বা আংশিক এলাকায় লকডাউন দিতে পারবেন। এ বিষয়ে পরিষ্কার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটি সীমান্তবর্তী সাত জেলায় লকডাউনের সুপারিশ করেছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ কথা বলেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ ৭ জেলার মধ্যে ৪টি খুলনা বিভাগের এবং ৩টি রাজশাহী বিভাগের। জেলাগুলো হচ্ছে- সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁ। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে লকডাউন বাস্তবায়নের সুপারিশ আসলেও কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা বা জেলার নাম সুপারিশ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তিনি জানান, সোমবার রাত নয়টায় মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে লকডাউনের সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু কোন্‌ কোন্‌ জেলা ঝুঁকিপূর্ণ সেই তালিকা আমরা পাইনি। রাতের বৈঠকে আলোচনা করে মঙ্গলবার সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী ৭ জেলার ডিসিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কাছে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পৌঁছেনি। কয়েকটি জেলার পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। সারা দেশের জন্য সরকারের জারি করা বিধিনিষেধ অনুসরণ করছেন তারা। নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ পিএএ মানবজমিনকে বলেন, নাটোরে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে। এখানে সংক্রমণ হার কয়েকদিন আগেও ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের নিচে ছিল। বর্তমানে তা কমে এসেছে। আমরা নিয়মিতভাবে জেলায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আলাদাভাবে নাটোর জেলা লকডাউন করার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাননি বলে জানান তিনি। কুষ্টিয়া জেলার ডিসি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, কুষ্টিয়ায় সংক্রমণ পরিস্থিতি ওঠানামা করে। কখনও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, কখনও কমছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা বিধিনিষেধ অনুযায়ী কুষ্টিয়ায় মাইকিং করা হচ্ছে, বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে মানুষকে মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সীমান্তবর্তী জেলা যশোরে সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার ডিসি মো. তমিজুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এবং বন্দরের কার্যক্রম থাকায় যশোর জেলা প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় আছে। নিয়মিত সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মেনে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ধরনের কোনো নির্দেশনা পাননি বলে জানান তিনি। খুলনায় পৃথকভাবে লকডাউন ঘোষণার মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন সেখানকার ডিসি মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। তিনি বলেন, সংক্রমণ হার আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি। বর্তমানে যে হার তা ২০ শতাংশের নিচে। জেলা প্রশাসন এমনিতেই মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানানোর জন্য কঠোর অবস্থানে আছে।
চাঁপাই নবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চাঁপাই নবাবগঞ্জে করোনা পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক হওয়ায় আবারো ১লা জুন থেকে ৭ই জুন পর্যন্ত এক সপ্তাহের জন্য পুরো জেলায় লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ এই লকডাউন ঘোষণা করেন। এ সময় পুলিশ সুপার এ এইচ এম আব্দুর রকিব, সিভিল সার্জন ডাক্তার জাহিদ নজরুল চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাকিউল ইসলাম, সদর হাসপাতালের আর.এম.ও ডাক্তার জাহাঙ্গীর কবিরসহ স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। লকডাউন চলাকালে সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ থাকবে তবে রোগী পরিবহনে এম্বুলেন্স, জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক ও জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। লকডাউন চলাকালীন কোনো প্রকার যানবাহন রাজশাহী-নওগাঁ থেকে চাঁপাই নবাবগঞ্জে প্রবেশ করতে পারবে না এবং চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকেও কোনো যানবাহন জেলার বাইরে যাবে না। সকল ধরনের দোকানপাট ও সাপ্তাহিক হাট বন্ধ থাকবে। কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদি দোকান ও ফার্মেসি খোলা থাকবে। তবে প্রয়োজন ছাড়া কেউ এসব স্থানে যেতে পারবে না। আমের আড়ত/বাজার পৃথক পৃথক জায়গায় ছড়িয়ে আড়তদারের মাধ্যমে বিক্রয় করা যাবে। এ ছাড়াও বাগান থেকে আম ট্রাকে করে প্রেরণ করা যাবে। এ ছাড়া কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম পরিবহন চালু থাকবে। উপজেলা প্রশাসন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

জরুরি প্রয়োজনে চলাচলকারী সকলকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। শিল্প-কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহনে আনা নেয়া ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিসেবা যেমন কৃষি উপকরণ সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান বিদ্যুৎ, পানি, ফায়ার সার্ভিস, স্থলবন্দরের কার্যক্রম টেলিফোন, ইন্টারনেট, সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমকর্মীদের সরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ডাকসেবাসহ অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে। অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে টিকা কার্ড প্রদান সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে। খাবারের দোকান ও হোটেল- রেস্তরাঁয় কেবল খাদ্য বিক্রয় সরবরাহ করা যাবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমার নামাজ সহ প্রতি ওয়াক্তে নামাজের সর্বোচ্চ ২০ জন মুসল্লি অংশগ্রহণ করতে পারবে। অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে সমসংখ্যক ব্যক্তি উপাসনা করতে পারবে। এর আগে ১১ দফা নির্দেশনা দিয়ে জেলাজুড়ে ২৪শে মে রাত থেকে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন।

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, চাঁপাই নবাবগঞ্জে বিশেষ লকডাউন সত্ত্বেও রাজশাহী শহরের উপর দিয়ে মানুষের যাতায়াত, ভারতীয় ধরনের কারণে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন, রাজশাহীতে আমের বাজারে স্বাস্থ্যবিধি না মানা এবং সার্বিকভাবে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহার কারণে রাজশাহীতে সংক্রমণ প্রতিদিনই বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলাগুলোতে বিশেষ লকডাউন দেয়ার জন্য মাঠ প্রশাসনকে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তবে এখনই বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে বিশেষ লকডাউন যাচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণের জোর চেষ্টা চলছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে রাজশাহীতে মাঠে নেমেছে জেলা প্রশাসনের চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল বিভিন্ন মোড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করতে দেখা গেছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল মানবজমিনকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের ভেতরেই আছে, শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের নিচে। সারা দেশের জন্য ৬ই জুন পর্যন্ত সরকারের বেঁধে দেয়া সময়সীমাকে ফলো করছে। ওই নির্দেশনা শতভাগ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জেলা শহরে লকডাউন যেভাবে দেয়া যায় বিভাগীয় শহরে তা কঠিন। শ্রমজীবী মানুষের জীবন ধারণের কথা চিন্তা করতে হয়। আমরা করোনা পরিস্থিতি প্রতিদিনই কঠোরভাবে মনিটরিং করছি, যেভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাইউম তালুকদার বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীতে ৪২০ জনের করোনা টেস্ট করা হয়, যার মধ্যে ১২৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে টেস্ট বাড়াতে হবে। অন্য জেলা থেকে রোগীরা রাজশাহীতে না আসলে, রাজশাহী মেডিকেলের ওপর চাপ কমতো। নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাই নবাবগঞ্জের রোগীরাও রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসা নেয়, তাই চাপ বাড়ছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের লোকজন স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কাজ করছে, কিন্তু মানুষ কথা শোনে না। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন আটজন। এরমধ্যে পাঁচজনই করোনার নতুন হটস্পট চাঁপাই নবাবগঞ্জের বাসিন্দা। একই দিনে রাজশাহীতে দুজন এবং জয়পুরহাটে একজন মারা গেছেন। এদিনে বিভাগের আট জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩০০ জনের। এরমধ্যে ১২৭ জন রাজশাহীর বাসিন্দা। এই একদিনে চাঁপাই নবাবগঞ্জের আরও ৯৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গতকাল দুপুরে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. নাজমা আক্তার এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় মহামারি করোনায় চাঁপাই নবাবগঞ্জে ৫ জন, রাজশাহীতে দুজন এবং জয়পুরহাটে একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে বিভাগে করোনায় প্রাণহানি দাঁড়ালো ৫৫৮ জনে। এ পর্যন্ত বিভাগের আট জেলায় করোনা ধরা পড়েছে ৩৫ হাজার ৪৭৫ জনের। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ধরা পড়েছে ৩০০ জনের। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩১ হাজার ৪৭০ জন। গত একদিনে সুস্থ হয়েছেন ১১৯ জন। করোনা নিয়ে এ পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩ হাজার ৮৭৯ জন। এই একদিনে করোনা নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন ১৫ জন। বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত বিভাগের আট জেলায় যে ৫৫৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে তার মধ্যে সর্বোচ্চ ৩১৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন বগুড়ায়। এই জেলায় ১২ হাজার ২৭৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১১ হাজার ৬৮১ জন। বিভাগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ করোনায় প্রাণহানি ঘটেছে রাজশাহীতে ৮৬ জন। এই জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে মোট ৮ হাজার ৮৪৭ জনের। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৭ হাজার ৪৮৪ জন। নওগাঁয় এই পর্যন্ত করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪০ জন। এই জেলায় করোনা ধরা পড়েছে মোট ২ হাজার ২৩২ জনের। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ০১ জন। এ পর্যন্ত চাঁপাই নবাবগঞ্জে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩৭ জনের। এই জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৮৪৯ জনের। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ১৩২ জন। সিরাজগঞ্জে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৬৭০ জনের। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছে ২ হাজার ৯৭৯ জন। এই জেলায় করোনায় প্রাণ গেছে ২৪ জনের। করোনায় ২৪ জনের প্রাণ গেছে নাটোরেও। এই জেলায় মোট ১ হাজার ৭৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছে ১ হাজার ৪৯৩ জন। এ পর্যন্ত পাবনায় ৩ হাজার ১১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে মারা গেছে ২২ জন। করোনা জয় করেছে ৩ হাজার ৮৪ জন। বিভাগে করোনায় সবচেয়ে কম ১২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে জয়পুরহাটে। এই জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে মোট ১ হাজার ৭৪০ জনের। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছে ১ হাজার ৬১৬ জন।

নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর পাশের জেলা রাজশাহী ও চাঁপাই নবাবগঞ্জে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সীমান্ত জেলা নওগাঁতেও। তবে বর্তমানে করোনা সংক্রমণের হার কমছে বলে জানিয়েছেন নওগাঁর ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মুন্‌জুর এ মোর্শেদ। জেলায় গত ২১শে মে থেকে ২৭শে মে পর্যন্ত জেলায় ৩৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৯১ জন। স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাবে করোনা সংক্রমণের হার ২৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ। জেলায় বর্তমানে করোনা আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে আছেন ৩ জন, হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ১১১ জন। এ পর্যন্ত জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ২৩৪ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ০১ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৪২ জন। জেলা সদর হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার বেড রয়েছে ৩০টি এবং ১১ উপজেলা হাসপাতালে প্রতিটিতে রয়েছে ২টি করে করোনা বেড। নওগাঁর ১৬ বিজিবি’র অধিনায়ক লে.কর্নেল রেজাউল কবির জানান, চাঁপাই নবাবগঞ্জে করোনা সংক্রমণ বাড়ার কারণে লকডাউন দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে নওগাঁ সীমান্তে পাহারায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে সীমান্তের গ্রামগুলোতে করোনা নিয়ে মাইকিংসহ সচেতনতামূলক প্রচারণা করা হচ্ছে। কেউ যেন সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যাতায়াত করতে না এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি রয়েছে বিজিবি’র।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর দিয়ে ভারতীয় ট্রাকের ড্রাইভার ও হেলপার মিলে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে যাতায়াত করছে। তারা বন্দর এলাকায় ৬/৭ দিন করে থাকছেন। এ সময়ের মধ্যে তারা চায়ের দোকান ও হোটেলে খোলামেলাভাবে চলাচল করছেন। এতে করে করোনা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বন্দর এলাকায় বসবাসরত হাজার হাজার বাংলাদেশি। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বন্দরে ছোট ব্যবসায়ীরা। গতকাল জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত করোনা বিষয়ক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়াত, বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়নের উপ-পরিচালকসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন, সাতক্ষীরা সীমান্তের চোরাপথ দিয়ে অবৈধ লোকজনের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এজন্য সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী উপজেলা সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, কালিগঞ্জ, দেবহাটা এবং শ্যামনগরের কৈখালি ইউনিয়ন সংলগ্ন সীমান্ত পাহারায় স্থানীয়ভাবে প্রতিরক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে থাকছেন উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, বিজিবি প্রতিনিধি এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ। প্রতিরক্ষা কমিটি সীমান্তের চোরাচালানি, মানুষ পাচারকারী এবং অবৈধ যাতায়াতকারীদের চিহ্নিত করবে। একইসঙ্গে তাদের বাড়িঘর এবং চলাফেরার ওপর কড়া নজরদারি রাখা হবে। এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল আল মাহমুদ বলেন, বিজিবি সদস্যরা কয়েক সপ্তাহ যাবৎ সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে লাগাতার টহল চালিয়ে যাচ্ছেন। অবৈধ লোকজনের যাতায়াত রোধে এই সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রথমদিকে কয়েকজন লোককে গ্রেপ্তার করা হলেও বর্তমান সময়ে অবৈধ যাতায়াত দৃশ্যমান হচ্ছে না। ভোমরা বন্দর দিয়ে প্রতিদিন আসা ৩০০ পণ্যবাহী গাড়ির ৫ শতাধিক চালক ও হেলপার যাতে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে না পারে সে ব্যাপারেও বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। এদিকে করোনা সংক্রমণ রোধে প্রত্যেককে মাস্ক ব্যবহার করে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশ লঙ্ঘন করলে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারবে। বৈঠকসূত্র আরও জানিয়েছে, বর্তমান করোনা সংক্রমণের হার কতটা তা নিশ্চিত করে আগামী ৩রা জুন তারিখে সাতক্ষীরা জেলায় লকডাউনের সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখ্য যে, সাতক্ষীরায় গতকাল দুপুর পর্যন্ত ১৩৫ জন করোনা রোগী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৫ জনের করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। অপরদিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে করোনা রোগীর ধারণ ক্ষমতা না থাকায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে বেশ কয়েকজন রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=276283&cat=2