১ জুন ২০২১, মঙ্গলবার, ১:১০

৮২ কোটি টাকার খরচ বেড়ে ৯৮৬ কোটিতে

অর্থনৈতিক জোন উন্নয়নে আড়াই বছরের প্রকল্প এখন সাড়ে ৭ বছরে

যথাসময়ে ও নির্ধারিত মেয়াদে শেষ হয় না দেশের উন্নয়ন প্রকল্প। সঠিকভাবে সমীক্ষার মাধ্যমে প্রাক্কলন না করার কারণেই প্রকল্পগুলোর এই দশা হচ্ছে। ৮১ কোটি ৯৫ লাখ টাকার বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের (পর্ব-১) বাস্তবায়ন খরচ এখন ৯৮৬ কোটি ৭০ লাখ টাকায় উন্নীত। তিন দফায় প্রকল্পের খরচ বাড়ল ৯০৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আড়াই বছরে যে প্রকল্পটি সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল, সেটা এখন তিন গুণ সময় অতিক্রম করে সাড়ে ৭ বছরে পা দিচ্ছে। এর সংশোধন অনুমোদনের জন্য আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশনের একনেক শাখা সূত্রে জানা গেছে।

সংশোধিত প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, অর্থনৈতিক জোন উন্নয়নে এই প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি উদ্দেশ্য হলো অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন ও পরিচালনায় স্থানীয় এবং বিদেশী বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করা। মংলা, মিরসরাই ও সোনাগাজীতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য অন-সাইট এবং অফ-সাইট মৌলিক অবকাঠামো এবং আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা এবং দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা এর লক্ষ্য। আর এই জন্য ৮১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে চারটি অর্থনৈতিক জোন নির্মাণকাজ আড়াই বছরে সমাপ্ত করার জন্য ২০১৪ সালের জুনে একনেক থেকে অনুমোদন দেয়া হয়, যা ২০১৬ সালের জুনে সমাপ্ত করার কথা। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে।

প্রকল্পের মূল কাজগুলো হলো, ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন ভূমি উন্নয়ন, বাঁধ নির্মাণ, রাস্তা নির্মাণ, ব্রিজ নির্মাণ, প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহ ইত্যাদি। এছাড়া কনসালট্যান্সি ফার্ম নিয়োগ, বিজ্ঞাপন, প্রশিক্ষণ প্রদান ইত্যাদি।

জানা যায়, বছর পার হতেই ২০১৫ সালের নভেম্বরে প্রকল্পটির খরচ বাড়িয়ে ১২২ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় অনুমোদন দেয়া হয়। ঠিক ছয় মাস পরই ২০১৬ সালের এপ্রিলে দ্বিতীয়বারের মতো আবার সংশোধন করে সময় ও খরচ বাড়ানো হয়। তাতে খরচ একলাফে বৃদ্ধি করা হয় ৭৮২ কোটি ৪৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। ফলে খরচ বেড়ে ৯০৫ কোটি ৩১ লাখ ৮৮ হাজার টাকায় উন্নীত হয়। আর মেয়াদ ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু শেষ হয় না প্রকল্পটি। প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন যখন ৯০৫ কোটি টাকার বেশি করা হয় তখন সেখানে বিদেশী অর্থায়ন আসে। বিশ্বব্যাংক সেখানে অর্থায়ন করে। আর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ (আইডিএ) ৯৪৫ কোটি ৫৫ লাখ ৪৮ হাজার টাকা এবং অনুদান (ডিএফআইডি) ২৯ কোটি ৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এরপর আবারো তৃতীয় দফায় খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এখন ব্যয় ৮১ কোটি ৩৮ লাখ ১২ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৯৮৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

তৃতীয় দফায় প্রকল্পটি সংশোধনের সময় পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে একনেকের অবগতির জন্য। আর সেগুলো হলো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের কাজের আওতা বৃদ্ধি, জালিয়ারদ্বীপ ও সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, টেকনাফ, আনোয়ারা-২, আনোয়ারা, এসইজেড, কেরানীগঞ্জ, মৌলভীবাজার, মৌলভীবাজার সদর, হবিগঞ্জ, চুনারুঘাট, বন্দর ও সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো কার্যকর করা সম্ভব না হওয়ায় মিরসরাই ও এর সংলগ্ন এলাকায় স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের উন্নয়নের জন্য অন্যান্য অঞ্চলের অব্যবহিত তহবিল ব্যবহার করা হবে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর অঞ্চলের বিনিয়োগকারী, বিভিন্ন এজেন্সি এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের জন্য অফিস স্পেসের সম্প্রসারণ করা হবে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে আগে প্রস্তাবিত এক লেনের রাস্তার পরিবর্তে দুই লেন রাস্তা নির্মাণ করা হবে।

এদিকে বিভিন্ন খাতে প্রাক্কলিত ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকা বৃদ্ধির কারণে জমি ভরাটের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভূমি উন্নয়ন খাতে ব্যয় প্রাক্কলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া ব্রিজ নির্মাণ, সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণ, ইছাখালী চ্যানেলের পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে স্লুইসগেট নির্মাণ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি কিছু খাতে ব্যয় কমেছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় পানি সরবরাহ এবং পয়ঃনিষ্কাশন খাত এবং সীমানা প্রাচীর নির্মাণে ব্যয় হ্রাস পাবে। এছাড়া অর্থনৈতিক কোডের নতুন করে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগ বলছে, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করে স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য প্রকল্পটি নেয়া হয়। কিন্তু মূল প্রকল্পে প্রস্তাবিত কিছু এলাকায় কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব না হওয়ায় ওই সব এলাকার অব্যবহিত তহবিল মিরসরাইয়ে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ব্যবহার করা হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/585510/