৩১ মে ২০২১, সোমবার, ১২:৫২

সংক্রমণ ৫ শতাংশে নেমে না আসা পর্যন্ত লকডাউন থাকবে

বিধিনিষেধ বাড়ল ৬ জুন পর্যন্ত

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনের (বিধিনিষেধ) মেয়াদ আরো সাত দিন বাড়িয়েছে সরকার। আগামী ৬ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধের মেয়াদ গতকাল রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধিনিষেধ বহাল রেখে লকডাউন বর্ধিত করা হয়। সংক্রমণ ৫ শতাংশে নেমে না আসা পর্যন্ত লকডাউন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ভারত সীমান্তবর্তী কিছু এলাকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় কয়েকটি জেলায় ‘বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে’। পরিস্থিতি বুঝে এসব জেলার লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ এক সপ্তাহ বাড়ানোর আদেশের পর গতকাল সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

করোনাভাইরাসের ভারতে উদ্ভূত ধরনটির কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের প্রমাণ পাওয়ায় গত ২৪ মে থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউনের বিধিনিষেধ জারি করে জেলা প্রশাসন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক কমিটির বৈঠকে গত শনিবার এ বিষয়ে আলোচনা হয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমান্তবর্তী আরো সাত জেলা অবরুদ্ধ ঘোষণার সুপারিশ করা হয়। এই সাত জেলা হলোÑ নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও খুলনা। এসব জেলাতেও গত কিছুদিন ধরে সংক্রমণ হার ঊর্ধ্বমুখী।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর ওপর আমরা বিশেষ নজর রেখেছি, যদি সেখানে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, ওই জায়গাগুলোতে চলাফেরার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারব। বিষয়গুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আপাতত স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি বুঝে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের লকডাউনের বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের বিষয়টির আশঙ্কা থেকেই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সেটা আমরা করছি। সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলার স্থানীয়ভাবে বিধিনিষেধ দেয়ার বিষয়ে প্রস্তাব এসেছে, আমরা সেটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি। সেই বিষয়ে আমরা হয়তো জানাব, কী করা যেতে পারে।’

জানা যায়, অন্তত প্রায় ১৬টি দেশে করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ভারতীয় ধরনটি ছড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ধরনটিকে চিহ্নিত করেছে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ (ভিওসি) হিসেবে। ভারত থেকে আসা তিন বাংলাদেশীর দেহে করোনাভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের কথা গত ৮ মে প্রথম জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। দেশে এ পর্যন্ত ২৩ জনের শরীরে পাওয়া গেছে করোনাভাইরাসের এই ধরনটি।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, যশোর ও নাটোরের বিষয়টিও ‘গুরুত্ব সহকারে’ দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা চাইব যে জায়গাটিতে স্পেসিফিক্যালি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, সেই জায়গাটি শনাক্ত করতে। এমনও হতে পারে যে পুরো সাতক্ষীরা নয়, যে স্থানটিতে বেশি সংক্রমণ সেই জায়গাগুলোতে হয়তো (অবরুদ্ধ) করার চেষ্টা হবে, যাতে মানুষের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সরকার সে বিষয়টি খেয়াল রাখছে।’ ফরহাদ হোসেন বলেন, বর্তমানে দেশে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার ৯ শতাংশের বেশি; সরকার এই হার ৫ শতাংশের কাছাকাছি নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। ৫ শতাংশে নেমে এলে ধরে নেয়া হয়, পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছে, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নয়। আমরা সেই রকম অবস্থায় দিকে নিতে চাই।

লকডাউন আরো বাড়বে কি না জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা চাইছি ৫ শতাংশ আসার পরে। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত বন্ধ রেখেছি। তাতে করে মানুষের চলাচলের প্রয়োজনীয়তা বা বাধ্যবাধকতা নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ৫ শতাংশের মধ্যে থাকাটা স্বস্তিদায়ক।’ সংক্রমণের বর্তমান অবস্থায় স্কুল-কলেজ খোলা আরো পিছিয়ে যেতে পারে কি না জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী তেমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেটি তাদের বিষয়। উনি বলেছেন এটা নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত খুলবে না।’

তাহলে ৫ শতাংশের নিচে না আসা পর্যন্ত বিধিনিষেধ থাকছে কিনা- এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে পরামর্শ দেবেন। যদিও আমরা বিকল্প ব্যবস্থাগুলো চিন্তা-ভাবনা করছি স্কুল-কলেজ খোলার ব্যাপারে। যে রকম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। সেক্ষেত্রে অনলাইন পরীক্ষা, ক্লাস চলমান আছে। আমরা দেখি, অবস্থা বুঝে, আমাদের ছাত্রসংখ্যা অনেক বেশি। যখন তারা স্কুলে আসবে তখন সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। আমাদের বিধিনিষেধ থাকার কারণে কিন্তু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় গত ৫ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে লকডাউন শুরু হয়। সেই শিথিল লকডাউন ছিল অনেকটাই অকার্যকর। পরে গত ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে আট দিনের ‘কঠোর লকডাউন’ শুরু হয়। পরে পাঁচ দফা লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত ২৩ মে বিধিনিষেধের মেয়াদ আরো সাত দিন বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আন্তঃজেলা বাস, লঞ্চ ও ট্রেনসহ সব ধরনের গণপরিবহন চলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। একইসাথে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো আসনসংখ্যার অর্ধেক মানুষকে সেবা দেয়ার অনুমতি পায়। এছাড়াও লকডাউনে আগে থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা ছিল। খোলা ছিল শিল্প-কারখানা। জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া যথারীতি অফিস বন্ধ রয়েছে। সীমিত পরিসরে হচ্ছে ব্যাংকের লেনদেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/585262/