২৭ মে ২০২১, বৃহস্পতিবার, ২:৪৩

৫ বছর ধরে সমীক্ষার খসড়া প্রকল্প

১৭ পরামর্শক সাড়ে ১৫ কোটি টাকার প্রকল্পে

নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম ও টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর সেকশনে রেলওয়ে ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন প্রবর্তন করা হবে। অর্থাৎ এই লাইনে ইলেকট্রিক ট্রেন চলবে। কিন্তু এই বিষয়টির গুরুত্ব নিরূপণ করার জন্য সাড়ে ১৫ কোটি টাকার সমীক্ষা প্রকল্প তৈরি করতেই পাঁচ বছর শেষ। ছোট একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা বানাতে এত বছর লাগায় সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবার এই সমীক্ষার কাজটি করতে লাগবে ১৭ জন পরামর্শক। সমীক্ষা প্রকল্পে যতটা প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি পরামর্শক নেয়া হয়। ফলে প্রকল্পের খরচ বৃদ্ধি পায়।

প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম এবং টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর সেকশনে রেলওয়ে ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন প্রবর্তন করা বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য একটি মাইলফলক হবে। ইলেকট্রিক ট্রেন চালু হলে ভ্রমণ সময় ও অপারেশনাল ব্যয় কম আসবে। পাশাপাশি যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া বর্ণিত ওইসব শহরে ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। ইলেকট্রিক ট্রেন সর্বোচ্চ লোড ক্যাপাসিটির দরুন ক্ষমতাসম্পন্ন এবং পরিবহন খরচও কম। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ টু ঢাকা টু চট্টগ্রাম এবং টঙ্গী টু জয়দেবপুরের মধ্যে চলমান ডাবল লাইন প্রকল্পটি ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন ব্যবহারকে আরো বেশি কার্যকর করবে। সমীক্ষার জন্য ২০১৬ সালে ৯ কোটি ৫৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা খরচে এক বছরের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় পরিকল্পনা কমিশন থেকে প্রকল্পের ব্যয় কমিয়ে ৮ কোটি ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা প্রাক্কলন করে কমিশনে ডিপিপিটি আবার পাঠানোর সিদ্ধান্ত দেয়। সেই প্রকল্প আজো চূড়ান্ত করতে পারেনি রেলপথ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে, ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) ও টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরি, বিদ্যুতায়িত রেল পরিচালনার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর প্রস্তাব।

রেলপথ বিভাগের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, সমীক্ষা প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়। মন্ত্রী পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালের জুনে আলাপ করুন মর্মে নির্দেশ দেন। আর প্রকল্পটি গ্রহণের যৌক্তিকতা পর্যায়ের আলোচনার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের কারিগরি টিম, মহাপরিচালক এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে সভা করার নির্দেশ প্রদান করে। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে সিদ্ধান্ত হয়, নারায়ণগঞ্জ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সম্ভাব্যতা সমীক্ষার পরিবর্তে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে জয়দেবপুর পর্যন্ত ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন প্রবর্তনের লক্ষ্যে সমীক্ষা পরিচালনা করা যেতে পারে। এখানে ওভারহেড ক্যাটেনারি ও সাবস্টেশন নির্মাণও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এক বছর পর আবার দ্বিতীয় পিইসি সভা হয়। আরো এক বছর পর পুনর্গঠিত ডিপিপি রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। এখন প্রকল্পের খরচ ৯ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ১৫ কোটি ৩৭ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ১২ মাসের জায়গায় ১৭ মাস করে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

প্রকল্পের কাজের মধ্যে রয়েছে, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং বিশদ ডিজাইনের জন্য ১৭ জন পরামর্শক নিয়োগ। যার মধ্যে চারজন আন্তর্জাতিক পরামর্শক, প্রতিজন ৯ মাস করে ৩৬ মাস কাজ করবেন। আর স্থানীয় ১৩ জন পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়। এরা জনপ্রতি ৬ মাস ধরে ৭৮ মাস কাজ করবেন। প্রকল্প অফিসের জন্য যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র কেনা হবে।

খরচের হিসাবের প্রস্তাবনায় দেখা গেছে, ১৭ জন পরামর্শকের জন্য ব্যয় হবে ১৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। প্রকল্পে ৫৪ জন নিয়োগ দেয়া হবে আউট সোর্সিং থেকে। তাদের জন্য খরচ ১১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। একটি গাড়ি কেনা হবে ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকায়। সাড়ে ৫ লাখ টাকায় স্টেশনারি সামগ্রী কেনা হবে। টিএ বা ডিএ খাতে সাড়ে ১০ লাখ টাকা। প্রকল্পে পরামর্শকের পরও ৬ লাখ টাকা খরচ হবে সম্মানী খাতে। বিজ্ঞাপন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ টাকা। অফিস ইক্যুইপমেন্ট কেনার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ লাখ ২১ হাজার টাকা। আর ফার্নিচার ৭ লাখ টাকার।

পরিকল্পনা কমিশনের বিভাগগুলোর একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, পিইসি সভা থেকে যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়, সে আলোকে বেশির ভাগ সময়ই মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ডিপিপি পুনর্গঠন করে না। আবার অনেক সময় তারা মাসের পর মাস ফেলে রাখে। তারপর খরচ বেশি বানিয়ে আবার পিইসিতে পাঠায়। গত ২০১৬ সাল থেকে প্রকল্পটির ডিপিপি সঠিকভাবে করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/584402/