২০ মে ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৬:২৩

ঢাকা ছাড়ছেন করোনায় বিপর্যস্তরা

করোনায় ভেঙে পড়েছে মানুষের আয়-রোজগারের ব্যবস্থা। বেঁচে থাকার জন্য আয়ের পরিধি বৃদ্ধির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে মানুষ। কোথাও কর্মখালি নেই। আবার থাকলেও সেখানে বেতনভাতার পরিমাণ খুবই কম। টানাপড়েনের মধ্যে সংসার চালিয়েও পেরে উঠছেন না; যে কারণে নিরুপায় হয়ে ঢাকা ছাড়তে হচ্ছে তাদের। কথাগুলো বলছিলেন মিরপুর পীরেরবাগের বাসিন্দা মিজানুর রহমান। গতকাল মালামাল নিয়ে ঢাকা ছেড়ে গেছে তার পরিবার।

মিজানুর রহমান চাকরি করেন একটি ছোট প্রাইভেট কোম্পানিতে। বৈশ্বিক মহামারী করোনায় প্রতিষ্ঠানটির আয় কমে যাওয়ায় ছাঁটাই করা হয় অনেক স্টাফকে। তবে মিজানুরসহ কয়েকজনের চাকরি থাকলেও কমিয়ে দেয়া হয় তাদের বেতন। বর্তমানে যে টাকা বেতন পাচ্ছেন, তা দিয়ে ঢাকায় পরিবার নিয়ে বাসা ভাড়া করে আর থাকতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে বাসা ছেড়ে পরিবারের সদস্যদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন গ্রামে। শুধু মিজানুর রহমান নন, তার মতো মধ্য ও নিম্ন আয়ের অনেকেই ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।

গত বছর দেশে করোনা মহামারী দেখা দিলে অনেকেই ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। আবার কেউ ধারণা করেছিলেন, একটু কষ্ট করে চলি। সামনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারো আয়-রোজগার ফিরে আসবে। তাই ঢাকাতেই থেকে গিয়েছিলেন। কিন্তু এক বছর পরে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় সেই স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরতে পারছেন না; যে কারণে আবারো ঢাকা ছাড়ার সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।

এ দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভবনগুলোতে টু-লেটের সাইনবোর্ডের সংখ্যা বাড়ছে। কোনো কোনো বাড়ির মালিক ভাড়া কমিয়েও ভাড়াটে পাচ্ছেন না।

গতকাল বুধবার গাবতলী আমিনবাজারে গিয়ে দেখা যায় একটি পিকআপ ভ্যানে বাসার মাল নিয়ে গ্রামের উদ্দেশে রওনা করেছেন মিজানুর রহমান। ধারণা করা হয়েছিল তিনি বাসা পাল্টিয়ে নতুন কোথাও উঠছেন। কিন্তু তা নয়, সামর্থ্য না থাকায় ঢাকাই ছেড়ে যাচ্ছেন তিনি।

মিজানুর বলেন, বেতনের টাকা দিয়ে ভালোভাবেই চলছিল তার সংসার। ১২ হাজার টাকা ভাড়ার বাসায় থাকতেন দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে। কিন্তু এখন আর পেরে উঠছেন না। বেতন কমে যাওয়ায় বাসা ভাড়া দিয়ে খাবার টাকা থাকছে না। এ দিকে স্ত্রী-সন্তানদের চিকিৎসা, পড়াশোনা, পোশাক ও অন্যান্য খরচ তো রয়েছে। তিনি বলেন, কম খরচ করে অনেক চেষ্টা করেছি। বাড়তি রোজগারের চেষ্টাও করেছি। কিন্তু কোনোটাই সম্ভব হয়নি। করোনার প্রথম ঢেউ চলাবস্থায় ধারণা করেছিলাম সব ঠিক হয়ে যাবে। কলিগদের মধ্যে কয়েকজন ওই সময়ে পরিবার গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম একটু কষ্ট করে টেনে-টুনে চললে পরিবার নিয়ে একসাথে থাকতে পারব। কিন্তু তা আর সম্ভব হলো না। শুরু হলো করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। বেতনও কমলো। আবার নতুন কোনো কর্মক্ষেত্রও সৃষ্টি হচ্ছে না যে সেখানে যাবো। তাই ১৬ বছর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে একসাথে থাকার পর নিরুপায় হয়ে এখন আলাদা হতে হচ্ছে। তাদের গ্রামের বাড়ি রেখে মেসে থেকে চাকরি করবেন তিনি।

এ দিকে রাজধানীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, পীরেরবাগ, মনিপুরসহ আশপাশের প্রায় প্রতিটি ভবনে ঝুলছে বাড়ি ভাড়ার সাইনবোর্ড। কাজীপাড়ার একটি বাসার কেয়ারটেকার জালাল বলেন, সাত ভবনে ইউনিট রয়েছে ১০টি। যার মধ্যে দুই ফ্লোরে মালিকরা থাকেন। বাকিগুলো ভাড়া দেয়া। কিন্তু আটটি ইউনিটের মধ্যে এখনো চারটি খালি রয়েছে। করোনার মাঝে তিনটি পরিবার চলে গেছে। এরপর সেগুলোতে আর ভাড়াটিয়া ওঠেনি। তিনি বলেন, দুই রুমের বাসা প্রথমে মাসে ১৫ হাজার টাকা ভাড়া থাকলেও করোনার কারণে মালিকরা তা কমিয়ে ১৩ হাজার ও ১২ হাজার টাকা করেছেন। কিন্তু তার পরও ভাড়াটিয়া পাওয়া যায়নি।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/582852