১৯ মে ২০২১, বুধবার, ৫:৫২

ঢাকামুখী যাত্রীদের দুর্ভোগ

দূরপাল্লার বাস চালানোর চেষ্টা

লকডাউনের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জেলায় জেলায় চলাচল করছে দূরপাল্লার বাস। এসব বাসে ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রী বহন করা হচ্ছে। আদায় করা হচ্ছে বাড়তি ভাড়াও। নিষেধাজ্ঞা না মানায় অনেক জেলায় বাস আটকিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। দায়ের করা হয়েছে মামলাও। উত্তরাঞ্চল থেকে আসা যাত্রীবাহী শতাধিক দূরপাল্লার বাস মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে আটকে যাত্রী নামিয়ে দেওয়া হয়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে যাত্রীদের কথা কাটাকাটি হয়। শেরপুরের শ্রীবরদী থেকেও রাতের আঁধারে বিপুলসংখ্যক দূরপাল্লার বাস যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হয়। এসব গাড়িতে নির্দিষ্ট ভাড়ার কয়েকগুণ বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা। হবিগঞ্জেও দূরপাল্লার বাস চলাচল ও বাড়তি ভাড়া আদায়ের দায়ে একটি বাস কোম্পানিকে জরিমানা করে স্থানীয় প্রশাসন।

দূরপাল্লার বাস না পেয়ে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে কর্মস্থলে ফেরেন যাত্রীরা। তাদেরকেও কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, ঈদ উদ্যাপন শেষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার কর্মস্থলে ফিরতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ থাকায় আন্তঃজেলায় চলাচলরত বাস, সিএনজি, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসে গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে। এই সুযোগে যানচালকরা কয়েকগুণ ভাড়া আদায় করছেন।

বরিশাল থেকে রাজধানীমুখী যাত্রী মোশাররফ হোসেন জানান, সড়কে যানবাহন কম থাকার সুযোগে চালকদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। ভাড়াও দিতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। কোনো বাহনই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করছে না। গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করায় স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ছে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক আ. রহিম বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তায় দুই বাস টার্মিনালেই ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। বেশি ভাড়া আদায় ও হয়রানি বন্ধে পুলিশি কার্যক্রম চলমান আছে।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা যাত্রীবোঝাই শতাধিক বাস আটকিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার ভোরে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার সোনামুখী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় কাজীপুর থেকে ধুনট হয়ে শেরপুর-বগুড়ার দিকে অন্য কোনো যানবাহন যেতে পারেনি। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ভোগান্তির শিকার যাত্রীরা কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন।

মালেক, দুলাল, শহিদুল ও রহিম নামে কয়েকজন যাত্রী জানান, পিকআপ, ট্রাক ও মাইক্রোবাসে গাদাগাদি করে মানুষ কর্মস্থলে ফিরছেন। তাদের আটকাচ্ছে না পুলিশ। আর আমরা এক আসন করে খালি রেখে বাসে যেতে যাচ্ছি, তাতেই বাধা দিচ্ছে পুলিশ। এটা কেমন নিয়ম। পোশাক শ্রমিক ফারজানা, লাইলি, সাবিনা, সুলতানা ও সালমা বলেন, ঈদে বাড়ি আসব না। কিন্তু ছুটি দেওয়ায় বাধ্য হয়ে বাড়িতে আসি। এখন ঢাকায় ফিরতে না পারলে চাকরি চলে যাবে। মহাসড়ক দিয়ে না গিয়ে আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ঐশী ট্রাভেলস ও আল-রাহা পরিবহণের চালক শাহিন ও বাবু বলেন, ভেবেছিলাম মহাসড়ক দিয়ে না গিয়ে আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে সহজেই পাড় হয়ে যেতে পারব। কিন্তু এখানেও আটকে দিল পুলিশ। গাড়ি না চললে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কী করে বাঁচব। কাজীপুর থানার ওসি পঞ্চনন্দ সরকার জানান, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো দূরপাল্লার পরিবহণ চলাচলের সুযোগ নেই। ভোরে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা যাত্রীবোঝাই বাসগুলো সোনামুখীতে আটকে দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

শ্রীবরদী (শেরপুর) প্রতিনিধি জানান, সরকারের নির্দেশ অমান্য করে রাতের আঁধারে শ্রীবরদীতে চলেছে দূরপাল্লার বাস। এসব বাসে যাত্রীদের কাছ থেকে তিন থেকে পাঁচগুণ অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ভায়াডাঙ্গা, কর্ণঝোড়া, ঝগড়ারচর, ভারেরাসহ বিভিন্ন বাজার থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গাড়িগুলো ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হয়।

ভায়াডাঙ্গা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মোজাদেদ্দীয়া, নিউ মোজাদেদ্দীয়া, শাহীমনিসহ বিভিন্ন কাউন্টারে দূরপাল্লার বাসের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। ঢাকার যাত্রী মুসছিম উদ্দিন বলেন, কর্ণঝোড়া পাহাড়িয়া এলাকায় আমার বাড়ি। ৮শ টাকা দিয়ে টিকিট কিনেছি। আসার সময় পিকাপ ভ্যানে এসেছি। আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করি। ভাড়া বেশি হলেও আমাকে যেতে হবে।

মোজাদেদ্দীয়া গাড়ির কাউন্টার মাস্টার লাভলু মিয়া বলেন, সবাই বিক্রি করতেছে, তাই বিক্রি করতেছি। আটশ, এক হাজার টাকা করে টিকিট বিক্রি করছেন কেন-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গাড়ির মালিক বিক্রি করতে বলছেন। এ ব্যাপারে জেলা মিনি বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুজিত কুমার ঘোষ বলেন, সরকারের নির্দেশে দূরপাল্লার গাড়ি বন্ধ রয়েছে, তবে কিছু গাড়ির মালিক চুরি করে রাতের আঁধারে গাড়ি চালাচ্ছে। এগুলো দেখবে পুলিশ প্রশাসন। এ ব্যাপারে অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) ইসকান্দার হাবিবুর রহমান বলেন, গাড়িগুলোকে শেরপুর আটকে দেওয়া হবে।

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দূরপাল্লার বাস চলাচল, স্বাস্থ্যবিধি অমান্য এবং যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের অভিযোগে লাকি পরিবহণকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত ভাড়া তাৎক্ষণিক ফেরত দেওয়া হয়।

মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় কয়েকগুণ বেশি ভাড়ায় মাইক্রোবাসে কর্মস্থলে ফিরছেন যাত্রীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে যাত্রীপ্রতি দুই হাজার টাকা ভাড়ায় যাত্রী সংগ্রহ করেন চালকরা। নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জামিরুল ইসলাম ও বিপ্লব জানান, তাদের ছুটি ১৮ মে পর্যন্ত। এ কারণেই তারা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে মাইক্রোতে যাচ্ছেন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/422114/