১৯ মে ২০২১, বুধবার, ৫:৩৯

খাদ্যনিরাপত্তা ও মজুদ পরিস্থিতি

ইবনে নূরুল হুদা : খাদ্য নিরাপত্তা (Food security) প্রত্যেক জাতিরাষ্ট্রের জন্যই অপরিহার্য অনুষঙ্গ। খাদ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। আর তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। বিশ্ব খাদ্যসংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে প্রায় ১০৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এমনকি বিশ্বের প্রায় ২শ কোটি মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা এখনও নিশ্চিত নয়। ২০০৭ সালের শেষ পর্যায়ে জৈবজ্বালানির জন্য কৃষিকাজের সম্প্রসারণ, বিশ্ববাজারে খনিজ তেলের উচ্চমূল্য ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তন, আবাসিক প্রয়োজনে ও শিল্পকারখানার প্রয়োজনে কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস এবং সম্প্রতি চীন ও ভারতে ভোক্তাদের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের মূল্য দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা পড়েছে বড় ধরনের ঝুঁকিতে। আর তার নেতিবাচক প্রভাবে পড়েছে আমাদের দেশেও।

আমাদের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে খাদ্যের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হলো সবার জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা। আমাদের সংবিধানের ১৫(ক) অনুচ্ছেদে সকল নাগরিকের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র সে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে কতখানি সফল হয়েছে সে প্রশ্নের এখন পর্যন্ত কোন সুরাহা করা যায়নি।

সরকারের কার্যবিধি অনুযায়ী জাতির জন্য একটি নির্ভরযোগ্য খাদ্যনিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব খাদ্য মন্ত্রণালয়ের। ১৯৯৬ সালের বিশ্বখাদ্য শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকল সময়ে সকল নাগরিকের কর্মক্ষম ও সুস্থ জীবন যাপনে প্রয়োজনীয় ও মানসম্পন্ন খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে বাংলাদেশ সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্তু তা অনেকাংশে কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

সরকার সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, গত দশকে বাংলাদেশে খাদ্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। একই সাথে সরকারি খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থাকে গতিশীল ও সুসংহত করে দরিদ্র ও দুস্থ পরিবারসমূহের জন্য অধিকতর সহায়ক করা হয়েছে। অধিকন্তু, খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি ও জাতীয় পর্যায়ে খাদ্যশস্যের লভ্যতা সন্তোষজনকভাবে বজায় থাকায় এবং পুষ্টিশিক্ষাসহ শিশু ও নারীর পুষ্টি উন্নয়নমুখী প্রচেষ্টাসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে সরকারের খাদ্যনীতির ব্যাপ্তি ঘটেছে। কিন্তু সরকারের দাবির সাথে বাস্তবতায় রয়েছে বড় ধরনের ব্যবধান। সম্প্রতি প্রাপ্ত খাদ্য মজুদ পরিস্থিতির অবনতি সেদিকেই অঙ্গুলী নির্দেশ করে।

দেশে খাদ্যনিরাপত্তা বিষয়ক সরকারের ভূমিকা ও তৎপরতা খানিকটা প্রচারসর্বস্বই বলা যায়। সবার জন্য খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দরিদ্র ও দুঃস্থ পরিবারগুলোর জন্য খাদ্য প্রাপ্তির ক্ষমতা ও সংগৃহীত খাদ্যের যথাযথ ব্যবহারে গতিশীল ও যুৎসই পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজন থাকলেও এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর উদাসীনতা রীতিমত ভাবনার। বিশ্ব খাদ্য শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণা ও সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু দেশের খাদ্য মজুদে ক্রমবর্ধন ঘাটতি সে দাবির অসারতাই প্রমাণ করে।
কোন দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে অভ্যন্তরীণ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তাহীন জনগোষ্ঠীর জন্য বর্ধিত খাদ্য প্রাপ্তির ক্ষমতা অর্জনে সহায়তা, খাদ্য প্রাপ্তির ক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে দরিদ্র ও দুস্থ জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো, সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ এবং খাদ্যের যথাযথ ব্যবহার ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পুষ্টিহীনতা নিরসনে প্রয়োজনীয় কার্য পদ্ধতি গ্রহণ করা দরকার। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে আমরা এখনো অনেকটাই সেকেলে। কৃষি ক্ষেত্রে আমরা আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং কৃষিকাজে দক্ষতা বৃদ্ধিতে কোন সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগাতে পারছি না। এমনকি জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি তো দূরের কথা বরং তা এখনও নিম্নমুখীই রয়ে গেছে। ফলে দেশে দারিদ্যতা এখন প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

নাগরিকদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সকলের জন্য একটি কর্মক্ষম, স্বাস্থ্যকর ও উৎপাদনমুখী জীবনযাপনের জন্য সকল সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপদ ও পুষ্টিমানস¤পন্ন খাদ্যের লভ্যতা ও প্রাপ্তির ক্ষমতা বিদ্যমান থাকা দরকার। খাদ্য নিরাপত্তার অন্যতম একটি উপাদান হলো জাতীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যের লভ্যতা ও পর্যাপ্ত মজুদ। যা প্রায়শই জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

অপর অপরিহার্য উপাদান হলো ব্যক্তি ও পরিবার পর্যায়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য প্রাপ্তির ক্ষমতা। খাদ্য নিরাপত্তার তৃতীয় অপরিহার্য উপাদান খাদ্যের জৈবিক ব্যবহার, যা অন্যান্য নিয়ামকসমূহ যেমন-সুস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের উপস্থিতি এবং পরিবার বা সরকার কর্তৃক সমাজের দুস্থ জনগোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদানের সামর্থ্যের ওপর নির্ভরশীল। সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের বিষয়টি পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন নিয়ামকের ওপর নির্ভরশীল যেখানে যুগপৎভাবে প্রত্যেকটি নিয়ামকই অতিগুরুত্বপূর্ণ। এ সকল নিয়ামকের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পারস্পরিক নির্ভরতা বিদ্যমান থাকায় খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কিত সকল বিষয়ের মধ্যে সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্যতার বিষয়টি অনস্বীকার্য।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে জাতীয় পর্যায়ে খাদ্যের লভ্যতা অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, সরকারি ও বেসরকারি মজুদ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিমাণের দ্বারা নির্ধারিত। বাণিজ্য উদারীকরণের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা বিধানে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যের সরবরাহ মূল্য পরিস্থিতির গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে আসছে। পরিবারের নিজস্ব উৎপাদন ও সংগ্রহণের ক্ষমতা, পরিবারের খাদ্য মজুদের পরিমাণ এবং স্থানীয় বাজারে খাদ্যের লভ্যতার ওপর পরিবার পর্যায়ে খাদ্যের লভ্যতা নির্ভর করে। তবে উল্লেখিত বিষয়াদি বাজার ব্যবস্থাপনা অবকাঠামো, অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের মৌসুমি ভিন্নতা, বাজার দক্ষতা ও সরকারি খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থার কার্যকারিতার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।

পারিবারিক খাদ্য প্রাপ্তির ক্ষমতা আয়, সম্পদ, বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থ প্রাপ্তি, ঋণ, আয় হন্তান্তর এবং খাদ্য সাহায্য প্রাপ্তির ওপর নির্ভরশীল। পারিবারিক আয় ও খাদ্য প্রাপ্তির ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পারিবারিক পরিসরে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। অধিকন্তু, বর্ধিত সম্পদভিত্তি পারিবারিক আয়ের সাময়িক ব্যাঘাতের ঝুঁকি হ্রাসসহ প্রতিকূল সময়ে পারিবারিক খাদ্য নিরাপত্তা হ্রাসের মাত্রা ঠেকানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

অভ্যন্তরীণ কৃষিতে দক্ষতা অর্জনসহ শস্য ও অশস্য খাদ্যের লভ্যতা বৃদ্ধি, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় টেকসইভাবে বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য প্রাপ্তির ক্ষমতা অর্জন এবং শিক্ষা-স্বাস্থ্য পরিচর্যার মাধ্যমে অপুষ্টির শিকার ব্যক্তির খাদ্যের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সার্বিক খাদ্য নিরাপত্তা সুসংহতকরণ সম্ভব। কিন্তু এই দায়িত্ব পালন ব্যক্তি ও পারিবারিক পরিসরে কোন ভাবেই সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন জাতীয় তথা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা বলয় তথা পর্যাপ্ত মজুদ গড়ে তোলা। এটি রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্বও।

প্রতিটি জাতিরাষ্ট্রই সেদেশের সকল নাগরিকের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা বলয় গড়ে মৌলিক দায়িত্ব। যাতে আপদকালীন সময়ে জনগণের খাদ্য ঘাটতি দেখা না দেয়। সরকার পক্ষ বরাবরই দাবি করে এসেছে যে, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে এবং দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন। কিন্তু বাস্তবতার সাথে তার অনেকটাই অমিল পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, দেশে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়টি এখন উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। নিরাপদ খাদ্য হিসেবে চাল ও গম মিলিয়ে মজুদ থাকার কথা ১০ লাখ মেট্রিক টন। সেখানে বর্তমানে তা রয়েছে ৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন। দফায় দফায় বিভিন্ন দেশ থেকে চাল ও গম আমদানির চেষ্টা করা হচ্ছে সরকার সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন। এখন নতুন করে ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমোদন চাওয়া হয়েছে।

খাদ্য অধিদফতরের হিসাব মতে, গত ২৪ মার্চ দেশে খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে চালের পরিমাণ ৪ লাখ ৫২ হাজার মেট্রিক টন, গমের পরিমাণ ৭৬ হাজার মেট্রিক টন। সংস্থাটি গত ফেব্রুয়ারিতে এক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করেছে, চলতি অর্থবছর (২০২০-২১) শেষে অর্থাৎ আগামী জুন শেষে খাদ্যের নিরাপত্তা মজুদ হিসেবে প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল এবং দুই লাখ মেট্রিক টন গম থাকা আবশ্যক। সে হিসাব ধরে অর্থবছরের অবশিষ্ট সময়ের জন্য আরো ১১ লাখ ৬ হাজার ৮৫৮ মেট্রিক টন চাল এবং ৩ লাখ ৪২ হাজার ৬৭১ টন গম প্রয়োজন হবে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন ইতিবাচক অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি।

সূত্রমতে, ইতোমধ্যে ২ দশমিক ০৮ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে তিন লাখ মেট্রিক টন চাল এবং জি-টু-জি ভিত্তিতে সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া জি-টু-জি ভিত্তিতে আরো সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের জন্য চুক্তি সম্পাদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জানা গেছে, এখন নতুন করে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে আরো ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন-বাসমতি সেদ্ধ চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। প্যাকেজ-১১-এর আওতায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স বাগাদিয়া ব্রাদার্স’ থেকে এ চাল আমদানি করা হবে। প্রতি মেট্রিক টন ৪১৬ ডলার হিসেবে চাল আমদানিতে বাংলাদেশী মুদ্রায় ব্যয় হবে ১৭৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বোরো মৌসুমে সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। এ ছাড়া চলতি আমন মৌসুমে ২ লাখ মেট্রিক টন ধান ও সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে গত ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৭ হাজার ৫৬৭ মেট্রিক টন ধান ও ৫২ হাজার ২৭৬ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাজারে খাদ্যশস্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বিদেশ থেকে চাল ও গম আমদানি করা ছাড়া কোন উপায় নেই।

সম্প্রতি দেশে খাদ্য মজুদ পরিস্থিতির আরও অবনতির খবর পাওয়া গেছে। সরকারি গুদামে এখন চালের মজুদ মাত্র ৩ লাখ টন। অন্য দিকে গমের মজুদ ২ লাখ টনের নিচে। গত ২৮ এপ্রিলের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদনে এমন তথ্যই দিয়েছে খাদ্যঅধিদপ্তর। কিন্তু দেশে নিরাপদ খাদ্য মজুদের ন্যূনতম পরিমাণ হওয়া উচিত চাল-গম মিলিয়ে ১১ লাখ টন।

মূলত, সরকারি খাদ্যের মজুদ নিরাপদ মাত্রার অর্ধেকে নেমেছে। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে হন্যে হয়ে বিদেশ থেকে চাল গম আমদানি করার চেষ্টা করছে। বেসরকারি ব্যবসায়ীদেরও আমদানির সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমদানি চিত্রও আশাব্যঞ্জক নয়। অনেক ব্যবসায়ী চাল আমদানির কথা বলে সময় মতো তা আনতে পারছে না বলে জানা গেছে।

২০২০ সালের বোরো মৌসুমে মোট সাড়ে ১৯ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু বছর শেষে এই লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫৪ ভাগ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। বোরো সংগ্রেহের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৮ লাখ টন বোরো ধান, ১০ লাখ টন বোরো সিদ্ধ চাল ও দেড় লাখ টন বোরো আতপ চাল ছিল। প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে বোরো ধান, আর ৩৬ টাকা দরে বোরো সিদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা দরে বোরো আতপ চাল কেনার দাম নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু তা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে সরকারকে বিদেশ থেকে চাল আমদানির দিকে ঝুঁকতে হয়েছে। কারণ সরকারি গুদামে চালের মজুদ কমে যাওয়ার কারণে এখন এই বাজারটি পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করছে চাল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীরা। তারা ইচ্ছেমতো চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এখন বাজারে প্রতি কেজি ৫০ টাকার নিচে কোনো মোটা চাল নেই। আর সরু চালের দাম কেজি ৬০ থেকে ৬৮ টাকা।

খাদ্যপ্রাপ্তি প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এই অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তাই রাষ্ট্রের উচিত দেশের জনসংখ্যাকে ভিত্তি ধরে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ নিশ্চিত করা। কিন্তু আমাদের দেশের মজুদ পরিস্থিতি এখন আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নেমে এসেছে। তাই জাতীয় স্বার্থে অনতিবিলম্বে এই পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটিয়ে মজুত পরিস্থিতিকে নিরাপদ পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। এজন্য কৃষি ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য আমদানী করা দরকার। অন্যথায় যেকোন সময় জাতীয় বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে; দেখা দিতে পারে দুর্ভিক্ষও।

https://dailysangram.com/post/452761