১২ মে ২০২১, বুধবার, ২:৫১

রাস্তায় ঘরমুখো মানুষের ঢল

দূরপাল্লার বাসের বিকল্প এখন সব পরিবহন

নাড়ির টানে বাড়ি যেতে সড়কগুলোতে নেমেছে মানুষের ঢল। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে যানবাহনের সন্ধান করছেন। আগে দূরপাল্লার বাস চলাচল করায় ঘরমুখো মানুষের বেশি চাপ দেখা যেত বিভিন্ন বাস, লঞ্চ ও ট্রেন স্টেশনে। কিন্তু করোনায় চলমান কঠোর লকডাউনে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। যার কারণে যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমে যে যার মতো পরিবহন ভাড়া করে বাড়ির উদ্দেশে ছোটার চেষ্টা করছেন। এ দিকে দূরপাল্লার বাসের বিকল্প হয়ে উঠেছে অন্যান্য সব ধরনের যানবাহন। বাসের স্থানে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, পিকআপ ভ্যান, ছোট-বড় ট্রাক, অটোরিকশা এমনকি মোটরসাইকেলে কয়েক গুণ বাড়তি ভাড়া দিয়ে বাড়ি ফিরছেন মানুষ। শুধু রাজধানীর গাড়ি নয়, ঢাকা থেকে যাত্রী নিতে বিভিন্ন জেলা থেকেও আসছে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, পিকআপ ভ্যান ছোট-বড় ট্রাক। তাতেই গন্তব্যে রওনা হচ্ছেন সবাই। খোলা যানবাহনে বৈরী আবহাওয়ায় ঝড়বৃষ্টিতে পড়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এসব ঘরমুখো মানুষ। বাড়ি ফেরার তাগিদে করোনার ভয়াবহতা ও বিভিন্ন ভোগান্তির কথা যেন বেমালুম ভুলে গেছেন তারা।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তানে গিয়ে দেখা যায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি। কিভাবে শিমুলিয়া (মাওয়া) ঘাটে যাবেন তারা। রাস্তায় কোনো যানবাহন দেখলেই ছুটে যাচ্ছেন সে দিকে। থামানো বা ধীর গতিতে চলন্ত অবস্থায় চালকের সাথে কথা বলে কেউ কেউ ফিরে আসছেন। আবার কেউ উঠে যাচ্ছেন গাড়িতে।

গোপালগঞ্জ থেকে আলী আজগর মোবাইলে জানান, গুলিস্তান থেকে শেয়ারে সিএনজি অটোরিকশায় শিমুলিয়া ঘাটে যান তিনি। এতে জনপ্রতি ৩০০ টাকা করে নেয়া হয়। সিএনজি অটোরিকশায় তিনজন যাত্রী নেয়ার কথা থাকলেও গতকাল নেয়া হয় ৪-৫ জন করে। এরপর ফেরিঘাটে গিয়ে ২৫ টাকা দিয়ে পার হয়ে ওপারে যান। সেখান থেকে ৩০০ টাকা করে ভাড়া দিয়ে শেয়ারে একটি মাইক্রোবাসে চলে যান গোপালগঞ্জ। আজগর বলেন, খুব সহজে কথাগুলো বললেও বাড়ি ফেরার পরিবেশটা এত সহজ ছিল না। চরম ঝামেলার শিকার হয়েই তাকে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। ফেরিতে উঠতে মানুষের ঠাসাঠাসি। সেখানে ওঠার পর পা রাখার জায়গা পাওয়া যায়নি। প্রতিটি মানুষ একে-অপরের শরীরের সাথে লেগেছিল। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার মুখের মাস্কও খুলে রেখেছিলেন।

গুলিস্তানে নুর আলম জানান, শত শত মানুষ রাস্তায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। আগে নির্দিষ্ট একটি কাউন্টারে গিয়ে ওই পরিবহনের বাসে চেপে বসেছি। কিন্তু এখন তা নয়, চলন্ত রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করে যানবাহন ঠিক করতে হচ্ছে। পরিবার নিয়ে যারা বাড়ি যাচ্ছেন তাদের অবস্থা আরো নাজেহাল। কমলাপুর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী নিজামুল বলেন, বাস-ট্রেন না চলায় বিকল্প যানবাহনের সন্ধান করছিলেন। বাড়ি যাওয়ার অনেক গাড়িও রয়েছে। কিন্তু ভাড়া অনেক বেশি। তিনি বলেন, তার বাড়ি যেতে যেখানে ২৫০ টাকা খরচ হওয়ার কথা সেখানে প্রতিটি মাইক্রোবাসে জনপ্রতি নেয়া হচ্ছে এক হাজার টাকা করে। পিকআপ ভ্যানে নিচ্ছে ৫০০ টাকা করে। আর ভেঙে ভেঙে যেতে গেলেও এমনই খরচ পড়বে। খরচ বেশি হওয়ায় গতকাল আর বাড়ি যাননি তিনি। আরো একদিন পর মানুষের চাপ কমলে ভাড়া হয়তো একটু কমবে। তখনই যাবেন নিজামুল।

এ দিকে যাত্রী নিতে জামালপুর থেকে পিকআপ ভ্যান নিয়ে রাজধানীতে এসেছেন চালক সবুজ মিয়া। গত সোমবার রাতে তিনি বাংলামোটর এলাকা থেকে কয়েক পরিবারের ২০ জনকে নিয়ে জামালপুরের উদ্দেশে রওনা হয়ে যান। রাতে চালক সবুজের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ঢাকায় কোনো গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না বলে খবর পান। পরে বাংলামোটরে তার এক আত্মীয়কে বলেন, এলাকার যাত্রী জোগাড় করতে। তিনি ২০ জন যাত্রী জোগাড় করে সবুজ মিয়াকে খবর দিলে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। যাত্রী আক্কাস আলী বলেন, বাস চলাচল বন্ধ। প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস ভাড়া করে যাওয়ার মতো সামর্থ্য তাদের নেই। তাই জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে দিয়ে এই পিকআপ ভাড়া করেন।

গোপালগঞ্জ থেকে ব্যবসায়ী ওহিদুল ইসলামের পরিবারকে নিতে মাইক্রোবাস নিয়ে ঢাকায় এসেছেন চালক রিপন। তিনি বলেন, ঢাকায় রেন্টে কার পাওয়া যাচ্ছিল না। আবার যেটা পাওয়া যাচ্ছে তাতে অনেক বেশি ভাড়া। তাই পরিচিত ব্যবসায়ী ওহিদ ভাই ফোন করায় চলে আসছি। তিনি আরো বলেন, শুধু গোপালগঞ্জ থেকে নয়, আরো অনেক জেলা থেকে গাড়ি এসেছে ঢাকায়। দূরপাল্লার বাস না চলায় এসব গাড়ির চাহিদা বেড়েছে বলে জানান তিনি।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/581688