৩ এপ্রিল ২০১৭, সোমবার, ১০:৩২

যুদ্ধে ২৩ কোটি শিশু বিপন্ন

ঢাকা থেকেই শিশুদের জন্য কিছু করার আহ্বান নোবেল বিজয়ী কৈলাস সত্যার্থীর

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ভারতের শিশু অধিকার কর্মী কৈলাস সত্যার্থী বলেছেন, বিশ্বে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান বেড়েই চলেছে। যুদ্ধের কারণে বর্তমান বিশ্বের প্রায় ২৩ কোটি শিশু সঙ্ঘাতপূর্ণ এলাকায় বসবাস করছে। এসব বিপদগ্রস্ত শিশুর শিক্ষা ও জীবন বিপন্ন। এসব এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ৯ হাজার শিশু ুধা ও দারিদ্র্যের কারণে মারা যাচ্ছে। যৌথভাবে এর সমাধান আমাদের দায়িত্ব। আজই সময়, এই ঢাকা থেকেই আমাদের শিশুদের জন্য কিছু করার বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই বিপদগ্রস্ত শিশুদের বাঁচাতে এবং তাদের জন্য সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে তিনি সংসদ সদস্যদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইন্টারপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘বিশ্বে দরিদ্র ও শিশু জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এ আহ্বান জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই সাধারণ সেমিনারে আলোচনায় আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী, আইপিইউ সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুংগং, ডা: দীপু মনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপনের পর এ বিষয়ে সাধারণ আলোচনা শুরু হয়। এতে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। এতে ১৩২টি দেশের দেড় হাজারেরও বেশি স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সংসদ সদস্য ও ডেলিগেট উপস্থিত রয়েছেন। এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বৈষম্যের প্রতিকার : সবার জন্য মর্যাদা ও কল্যাণ নিশ্চিত করা।


শিশু অধিকার কর্মী কৈলাস সত্যার্থী বলেন, টেকসই উন্নয়নে এর জন্য ফ্রেম ওয়ার্ক দরকার, শিশুদের উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে সব শিশুর শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য মাত্র ২২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন যা মাত্র ৩ দশমিক ৫ দিনের সামরিক ব্যয়ের সমান। আমি বিশ্বাস করি না এই অর্থ ব্যয় করার ক্ষমতা বিশ্বের নেই। তাই এখান থেকেই প্রতিশ্রতিবদ্ধ হওয়া উচিত শিশুদের কল্যাণে কাজ করার জন্য। বিশেষ করে শিল্পে উন্নত ও উন্নত দেশগুলোর শিশু কল্যাণে নেয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন প্রয়োজন।


কৈলাস সত্যার্থী বলেন, বিশ্বব্যাপী আয় বৈষম্যই হচ্ছে অর্থনৈতিক সহিংসতা। এই সহিংসতা মানব জাতির নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য বড় ধরনের হুমকি। বৈষম্যের একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, কয়েক দশক আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন সিইও ২০ জন শ্রমিকের সমান আয় করতেন। আর এখন এই বৈষম্য বেড়ে ১:২০০ তে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের ৫০ শতাংশ মানুষের সমপরিমাণ সম্পদ মাত্র আটজন ধনীর কাছে। দিন দিন এই বৈষম্য বাড়ছেই। তিনি বলেন, আমরা যখন এই সম্মেলন করছি তখন ২৭০ মিলিয়ন শিশু স্কুলে যেতে পারছে না। ২১ মিলিয়ন মানুষ বিক্রি হয়ে শ্রম দাসে পরিণত হয়েছে। এটা মেনে নেয়া যায় না, সহ্য করা যায় না। একদিকে ১০০ মিলিয়ন শিশু দাসত্ব, পাচার ও শিক্ষাবঞ্চনাসহ বিভিন্ন সহিংসতার শিকার হচ্ছে, অন্যদিকে ১০০ মিলিয়ন তরুণ রয়েছে যারা চাচ্ছে পৃথিবীকে বদলে দিতে। তাদের পৃথিবী বদলে দেয়ার শক্তি, ক্ষমতা ও আদর্শ আছে। আমরা কি এই তরুণদের পাশে দাঁড়াতে পারি না?


উপস্থিত সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে এই শিশু অধিকার কর্মী বলেন, আমরা যদি এই শক্তিকে কাজে লাগাতে না পারি তবে তারা হতাশাগ্রস্ত, অসহিষ্ণু এবং সহিংস হয়ে পড়বে। তরুণদের ক্ষমতা যদি নিশ্চিত করা যায়, তাদের কথা যদি শোনা হয়, তাহলে এই পৃথিবী আরো আনন্দময় এবং শক্তিশালী হবে। পৃথিবীকে সুন্দর করতে তরুণদের শক্তি আছে, আদর্শ আছে, সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে শিশুরাই বাল্যবিয়ে ও শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। আপনাদেরও (এমপি) দাঁড়ানো উচিত। বিশ্বের সব শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার জন্য মাত্র ২২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন যা বিশ্বের ৩ দশমিক ৫ দিনের প্রতিরক্ষা বাজেটের সমান।
কৈলাস আরো বলেন, আজই সময়, এই ঢাকা থেকেই আমাদের শিশুদের জন্য কিছু করার বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সহানুভূতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার এখনই সময়। তিনি আগামী ২০ সেপ্টেম্বর সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ স্কুলে গিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি নারীর ক্ষমতায়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, যদি নারীকে আমরা সমভাবে ক্ষমতায়িত করতে পারতাম তাহলে গত পাঁচ হাজার বছরের সভ্যতার ইতিহাসে অনেক সমস্যা আমাদের মোকাবেলা করা লাগত না যা এখন আমাদের করতে হচ্ছে।
কৈলাস যুব সমাজের নানা সমস্যা রয়েছে জানিয়ে বলেন, সংসদের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। যুব সমাজ খুব সহজেই ভুল পথে পরিচালিত হয়। বর্তমানে এক কোটি শিশু ও যুবক ভুল পথে রয়েছে। তাদের সঠিক পথে আনতে হবে। এ বিষয়ে আইপিইউ ও সংসদ কাজ করতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।
স্পিকার অব মঙ্গোলিয়া বলেন, প্রতিদিন যেসব শিশুুধা ও দারিদ্র্যের কারণে মারা যাচ্ছে। প্রকৃত অর্থে তারা মারা যাচ্ছে না, তাদের হত্যা করা হচ্ছে। ২৭ লাখ শিশু এই মুহূর্তে স্কুলে যাচ্ছে না। আড়াই লাখ শিশু পাচারের শিকার হচ্ছে।
আইপিইউ অ্যাসেম্বলির দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু


দ্বিতীয় দিনের মতো ১৩৬তম ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) অ্যাসেম্বলির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রোববার সকাল ১০টায় স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক দিয়ে আইপিইউ অ্যাসেম্বলির দিনের কার্যসূচি শুরু হয়। সভায় আইপিইউ সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীসহ স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর ইয়ং পার্লামেন্টারিয়ান্স, গভর্নিং কাউন্সিলসহ বিভিন্ন উপকমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এর আগে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী, সেক্রেটারি মার্টিন চুনগুং, আইপিইউ-ভুক্ত বিভিন্ন দেশের স্পিকার, সংসদ সদস্য, কূটনৈতিক কোরের সদস্য ও ডেলিগেটসরা উপস্থিত ছিলেন। ১৩২টি দেশ থেকে আসা ৭০০-এর বেশি এমপি ও পার্লামেন্ট স্পিকার অংশ নিয়েছেন আইপিইউর এই অ্যাসেম্বলিতে। রয়েছেন বিভিন্ন সংস্থার প্রায় এক হাজারের বেশি পর্যবেক্ষক। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও আইপিইউ এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। আগামী ৫ এপ্রিল আন্তর্জাতিক এই সম্মেলন সমাপ্ত হবে।

 

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/209070