১০ মে ২০২১, সোমবার, ১:৩৩

তীব্র যানজটে নাকাল নগরবাসী

লকডাউনে ঘরে নেই কেউ

লকডাউনে অফিস বন্ধ পেয়ে কেউ আর ঘরে নেই। সরকারি ছুটি মনে করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে শপিং করতে বেরিয়ে গেছেন সবাই। যার কারণে লকডাউনের মধ্যেও যানজটে নাকাল হয়ে পড়েছে নগরবাসী। কথাগুলো বলছিলেন, রাজধানীর ফকিরাপুলে কর্মরত কয়েকজন ট্রাফিক সদস্য। কারণ গতকাল সকাল থেকেই তীব্র যানজটে পুরো রাজধানী ছিল কার্যত বন্ধ। সড়কের শৃঙ্খলা সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা থেকে নাভিঃশ্বাস হয়ে পড়েছিলেন যাত্রীরা। পুলিশের ধারণা ঈদ নিকটে চলে আসায় অনেকেই পরিবার নিয়ে শপিংয়ে বের হয়েছেন। আবার অনেকে ঢাকা ছাড়ছেন। চলছে গণপরিবহনসহ সব ধরনের প্রচুর যানবাহন। এর মধ্যে দুপুরের দিকে হয়েছে এক পশলা বৃষ্টি। এসব নানা কারণে গতকাল ছিল চলমান লকডাউনের মধ্যে সব থেকে তীব্র যানজট।

সূত্র মতে, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চলছে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন। এই লকডাউনের কারণে বন্ধ রয়েছে অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংক খোলা থাকলেও সেটা বেলা ২টার পর বন্ধ হয়ে যায়। কিছু প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও সেখানে অর্ধেকের কম জনবল নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। অফিস বন্ধ থাকায় সবাইকে বাসাতে অবস্থান করার কথা রয়েছে। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে অফিসে না গেলেও কেউই বাসায় অবস্থান করছেন না। মার্কেট শপিং বাজার, দোকান, গণপরিবহন খোলা থাকায় সবাই ব্যক্তিগত কাজে বাইরে বের হচ্ছেন। ঈদ ঘনিয়ে আসায় প্রয়োজনীয় পরিবার নিয়ে ঈদ শপিংও সেরে নিচ্ছেন।

পুলিশের সূত্র মতে, গতকাল রাজধানীর উত্তর-দক্ষিণ প্রায় সব জায়গাতেই যানজট লেগে ছিল। কোথাও তীব্র যানজট আবার কোথায় তার চেয়ে কিছুটা কম। তবে সব থেকে বেশি যানজট ছিল মিরপুর রোড, সায়েন্সল্যাব, এলিফ্যান্ট রোড, শাহবাগ, অপর দিকে মহাখালী থেকে ফার্মগেট, বাংলামোটর শাহবাগ হয়ে প্রেস ক্লাব, মতিঝিল, আবার মহাখালী থেকে সাতরাস্তা হয়ে কাকরাইল পল্টন পুরোটাই ছিল যানজটে ঢাকা। বাদ যায়নি মগবাজার, মালিবাগ খিলগাঁও এলাকা।

মোহাম্মদপুর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে ফার্মগেট হয়ে কাওরান বাজার আসা মাহফুজুর রহমান বলেন, ভয়াবহ যানজটে আটকে ছিলাম দীর্ঘ সময়। অফিসে যাওয়ার জন্য মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে বের হয়েছি সকাল ১০টায়। গণপরিবহন এড়িয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে রওনা দিয়েছি, তবুও দুই ঘণ্টা লেগেছে কাওরানবাজার পৌঁছতে। আর করোনা পরিস্থিতি উপেক্ষা করে সড়কে মানুষের যেন ঢল নেমেছে।

উত্তরা হাউজবিল্ডিং থেকে মোটরসাইকেলে করে পুরান ঢাকায় পৌঁছতে সিদ্দিকুর রহমানের সময় লেগেছে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। প্রতিটি সড়কের মোড়ে মোড়ে তাকে যানজটে পড়তে হয়েছে। এমনকি কয়েকটি সিগন্যালে ১০-১৫ মিনিট করেও অপেক্ষা করতে হয়েছে। রোজা থেকে তীব্র গরমে প্রচণ্ড যানজটে পড়ে অসুস্থ বোধ করছিলেন তিনি। তিনি বলেন, মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন নম্বর করাতে উত্তরার দিয়াবাড়ি বিআরটিএতে যাব। সকালে পুরান ঢাকার বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। খুব সকালে রওনা হওয়ায় তখন বেশি যানজট পাননি। যার কারণে পৌনে এক ঘণ্টার মধ্যে তিনি দিয়াবাড়ি পৌঁছে গেছেন। কিন্তু দুপুরে ফিরে আসতে আড়াই ঘণ্টার মতো লেগেছে। এক দিকে যানজট আর অন্য দিকে গরম। সব মিলিয়ে অস্থির লাগছে।

ফকিরাপুলে দায়িত্বরত কয়েকজন ট্রাফিক সদস্য বলেন, লকডাউনে অফিস আদালত বন্ধ থাকায় অনেকেই ঈদের ছুটি মনে করছে। তারা করোনার ভয়াবহতার কথা চিন্তা না করে বাসায় না থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শপিংয়ে বেরিয়ে গেছেন। যার কারণে গণপরিবহনের সাথে ব্যক্তিগত ও অন্যান্য যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুণ। এতেই চরম যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মধ্যে চলমান লকডাউনের মধ্যে গতকালই ছিল সব থেকে বড় যানজট। যা সাবেক দিনের যানজটকেও পেছনে ফিরতে পারে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ বলেন, ঈদকে সামনে রেখে যানজট আগের রথকে কিছুটা বেড়েছে। তবে নগরীতে যানজট নিরসনে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মরত সদস্যরা সড়কে দায়িত্ব পালন করছেন। ট্রাফিক পুলিশের জনবল বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতে সরকারি নির্দেশনার মধ্যে থেকেই যানজট নিরসনে সড়কে দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি যানজট নিরসনে কমিউনিটি পুলিশও সহযোগিতা করছেন। রমজান মাসে সবাই যেন ইফতারের আগেই ঘরে ফিরতে পারেন সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/581246/