২ এপ্রিল ২০১৭, রবিবার, ১০:৪৬

রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে দেয়া হবে নগদ সহায়তা

দুর্নীতি ও অনিয়মে চরম মূলধন ঘাটতি সরকারি ব্যাংকে

সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর প্রকট মূলধন ঘাটতি পূরণে কোনো বন্ড ইসু্যু করা হবে না। কারণ ব্যাংকগুলোর চাহিদামাফিক বন্ড ইস্যু করা হলে তা সরকারের ওপর দীর্ঘমেয়াদি দায় সৃষ্টি করবে। এই প্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে এসব ব্যাংকের বিপরীতে কোনো বন্ড ছাড়ার অনুমতি দেয়া সমীচীন হবে না। তবে সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মোকাবেলায় বাজেট থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে বেসিক ব্যাংক সরকারের কাছে তাদের মূলধন ঘাটতি মোকাবেলায় দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার অনুমতি চেয়েছিল। একই সাথে জনতা ও রূপালী ব্যাংকও মূলধন ঘাটতি পূরণে ‘সাব-অর্ডিনেট’ বন্ডে গ্যারান্টি দেয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি রয়েছে ১৪ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। এসব ব্যাংকের মধ্যে সোনালী, জনতা, রূপালী ব্যাংক রয়েছে। আর বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। এই মূলধন ঘাটতি কিভাবে মোকাবেলা করা যায় তার জন্য ব্যাংকিং বিভাগ থেকে সম্প্রতি চারটি পন্থা সরকারের নীতিনির্ধারকদের সামনে তুলে ধরা হয়। এসব পন্থার মধ্যে তিনটি রয়েছেÑ সরাসরি নগদ মূলধন সরবরাহ/শেয়ার ইস্যু; নিট মুনাফা বণ্টন না করে বোনাস শেয়ার ইস্যু করা এবং শ্রেণিকৃত ঋণ কমিয়ে প্রভিশন ঘাটতি কমানো। প্রথম পন্থার বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে মতামত দেয়া হয়Ñ এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনের চেয়ে বাজেট বরাদ্দ নিতান্ত অপ্রতুল। আর ২ ও ৩ নম্বর পন্থার বিষয়ে বলা হয়Ñ কাাক্সিক্ষত, তবে বাস্তবসম্মত নয়। অন্য দিকে রিক্যাপটালাইজেশন বন্ড ও সাব-অর্ডিনেট বন্ড ইস্যুর বিষয়ে ব্যাংকিং বিভাগের মন্তব্য হচ্ছেÑ এতে সরকারের নগদ কোনো দায় নেই, তবে ব্যাংকগুলো ক্রেতাদের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে এর দায় সরকারের ওপর বর্তাবে।
এ দিকে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে প্রস্তাবিত মূলধন সহায়তা প্রদানের বিষয়ে ব্যাংকিং বিভাগের মতামত হচ্ছেÑ এ পদক্ষেপ নেয়া হলে বেসেল-২ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বেসেল-৩) গাইডলাইন প্রতিপালনের লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর মূলধন অবস্থানের উন্নয়ন হবে। তবে বর্তমানে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিদ্যমান প্রয়োজন অতিরিক্ত তারল্য পরিস্থিতি ও গড় কস্ট অব ফান্ড বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবিত মূলধন সহায়তার ফলে ব্যাংকগুলোর ব্যালান্স শিটে উন্নতি হলেও ব্যাংকগুলোর ব্যবসার উন্নয়নে মুনাফা বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা নেই; বরং তফসিলি ব্যাংকের ঋণদানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে কুঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে।
বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে ২০ বছর মেয়াদি রিক্যাপটালাইজেশন বন্ড ইস্যু করা হলে তাতে সরকারের দায় নেই বলে ব্যাংকটি উল্লেখ করেছিল। কিন্তু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মতামত হচ্ছেÑ বেসিক ব্যাংকের এই মতামত সঠিক নয়। রিক্যাপটালাইজেশন বন্ড ইস্যু করা হলে তা সরকারের নগদ সহায়তার মতোই বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধি করবে। এ ছাড়া জনতা ও রূপালী ব্যাংকের জন্য প্রস্তাবিত সাব-অর্ডিনেট বন্ডে গ্যারান্টি প্রদান করাও সরকারের পক্ষে সমীচীন নয়।
তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, ব্যাংকিং বিভাগ থেকে মতামত দেয়া হয়েছেÑ অর্থ বিভাগের ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকের মূলধন পুনর্গঠন খাতে বরাদ্দকৃত দুই হাজার কোটি টাকা থেকে ব্যাংকগুলোর মূলধন অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে মূলধন সহায়তা দেয়া যেতে পারে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/208829