৫ মে ২০২১, বুধবার, ২:৩৭

শনাক্ত বাড়ছে তৃতীয় ঢেউয়ের শঙ্কা

দেশে করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমলেও ফের সংক্রমণ হার ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। গতকাল শনাক্ত হয়েছেন ১৯১৪ জন। অথচ ২ দিন আগে ১৩৫৯ জন সংক্রমিত হয়েছিলেন। তার আগের দিন শনাক্ত হয়েছিলেন ১৭৩৯ জন। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের বেশকিছু কার্যকরী পদক্ষেপের কারণে দ্বিতীয় ঢেউয়ের শনাক্ত ও মৃত্যু দুটোই কমেছিল বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু শপিংমল খুলে দেয়াসহ মানুষের অবাধ বিচরণে সেটি আবার ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। এই যখন অবস্থা তখন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ কমো মডেলিং গ্রুপ দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের শঙ্কার কথা জানিয়েছে। আর সেটি জুনের শেষ অথবা জুলাইয়ের দিকে হতে পারে।

ওই সময় দিনে ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ শনাক্ত হতে পারেন। ৩১শে জুলাই থেকে ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত তৃতীয় ঢেউয়ের বিস্তার থাকবে। জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সর্বোচ্চ সংক্রমণ দেখা যাবে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারতে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় পার্শ্ববর্তী দেশ হিসাবে আমাদের ঝুঁকি রয়েছে। কারণ ভারতের সঙ্গে আমাদের ভালো যোগাযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ কমো মডেলিং গ্রুপের প্রধান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল মানবজমিনকে বলেন, জুনের শেষ দিকে তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে। আমাদের আপডেট কমো মডেলিংটাও তাই বলছে। এই ধাক্কাটা এখনকার চেয়ে আরো শক্তিশালী হতে পারে। যদিও পরিস্থিতি এখন অনেকটা শিথিল আছে। কারণ লকডাউন বা সরকারের কিছু পদক্ষেপ কার্যকরী হওয়াতে হয়তো এটা সম্ভব হয়েছে। আরো কিছুদিন শিথিল থাকবে বলে আশা করছি। তবে মানুষ যদি আবার বেপরোয়া হয়ে যায় বা সবকিছু খুলে দেয়া হয় তবে আবার সেই খারাপ পরিস্থিতি চলে আসবে। আর এভাবে আরো কিছুদিন চালালে ভারতের মতো ধাক্কা নাও আসতে পারে। বড় কথা হলো ভাইরাসকে ছড়ানো হচ্ছে কিনা। তিনি বলেন, অনেক দেশেই তৃতীয় ধাক্কাটা আসছে তাই আমাদের দেশে ঢেউটা আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেরকম কড়াকড়ি আছে এরকম থাকলে না-ও হতে পারে। মাস্ক ব্যবহার, ভ্যাকসিন নিলে এতো ভয়াবহ নাও হতে পারে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য লকডাউন দেয়া হয়েছিল। তখন আমরা দেখলাম মৃত্যু ও শনাক্ত কমতে শুরু করেছে। এখন শপিংমল খুলে দেয়ার কারণে সংক্রমণ আবার ঊর্ধ্বগতিতে। কিছুদিন আগেও সংক্রমণ ১৩৩৯-এ নেমেছিল। কিন্তু আবার সেটি ক্রস করেছে। ইতিমধ্যে ভারতে নতুন ধরনের করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। নতুন ধরনটি ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা সময়ের ব্যাপার। তিনি বলেন, করোনা সম্পর্কে এখনো অনেক কিছু জানা যায়নি। মাস্ক ও টিকা নিয়ে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সরকারকে টিকার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে জনসমাগম হয় এমন স্থানগুলো বন্ধ রাখতে হবে। তৃতীয় ঢেউয়ের সম্ভাবনা নিয়ে তিনি বলেন, অনেক দেশেই প্রথম ঢেউয়ের পর দ্বিতীয় ঢেউ, তৃতীয় ঢেউ এসেছে। তাই বাংলাদেশে তৃতীয় ঢেউ আসাটা অস্বাভাবিক কিছু না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বেনজির আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, আগামী ১৪ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে তৃতীয় ঢেউ আসার সম্ভাবনা নেই। এ সময়টাতে বড় ধরনের সংক্রমণের সম্ভাবনা নেই। তবে ভারতের কারণে আমাদের একটা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ভারতে সংক্রমণের পিক চলছে। আমাদের দেশ থেকে বহু লোক ভারতে যাওয়া-আসা করে। তারা যদি আসার সময় সংক্রমণ নিয়ে আসে তবে মে মাসের পরে দেশেও নতুন ধরনটা এটা ছড়িয়ে পড়তে পারে। লকডাউনের কারণে আন্তঃজেলা বাস সার্ভিস বন্ধ আছে। এতে করে ব্যাপক সংক্রমণের মাত্রাটা দেশে বেড়ে গেছে। এখন দেড় হাজারের মতো সংক্রমিত হচ্ছেন দেশজুড়ে। কিন্তু আগে এক এলাকাতেই এরকম শনাক্ত পাওয়া যেত। এই সুফলটা আমরা লকডাউনের কারণে পেয়েছি। এবং সেটা জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পেতে পারি। কিন্তু লকডাউন উঠিয়ে দিলে যদি নির্বাচন, সভা-সমাবেশ, ওয়াজ মাহফিল শুরু হয়। পর্যটন কেন্দ্র যদি খুলে দেয়া হয়। এছাড়া ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টটা যদি যুক্ত হয় তবে তৃতীয় ঢেউয়ের সম্ভাবনা পুরোপুরি আছে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=272897&cat=2