৩ মে ২০২১, সোমবার, ২:২৮

সিএনজি অটোর দখলে রাজপথ গলা কাটা ভাড়া আদায়

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান কঠোর লকডাউনের মধ্যে গত ২৫ এপ্রিল থেকে দোকানপাট ও শপিং মল খুলেছে। রাজধানীতে গণপরিবহন ছাড়া প্রায় সব ধরনের যানবাহন চলছে। তবে এখন সিএনজিচালিত অটোরিকশার দখলে যেন রাজধানীর রাজপথ। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অটোরিকশা ছাড়া কোনো পরিবহনই পাচ্ছে না রাজধানীবাসী। কাছে, দূরে—যেকোনো গন্তব্যে যেতে অটোরিকশাই তাদের ‘একমাত্র’ ভরসা। এই সুযোগে ইচ্ছামতো ভাড়া দাবি করছেন অটোরিকশাচালকরা। আর নিরুপায় মানুষজনকে গন্তব্যে পৌঁছার জন্য দিতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। একরকম সিন্ডিকেট করে অটোরিকশাচালকরা ১৬০ টাকার ভাড়া ৪০০ টাকা নিচ্ছেন। ২০০ টাকার ভাড়া নিচ্ছেন ৫০০ টাকা। এক অটোরিকশায় চারজন যাত্রী এক কিলোমিটার পথ গেলেও প্রতিজনকে ৫০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। এই সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে যাত্রীরা।

গতকাল রবিবার রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই একদল চালক অটোরিকশা নিয়ে সিন্ডিকেট করে যাত্রী ওঠাচ্ছেন। তাঁদের গন্তব্য রামপুরা, নতুন বাজার, মহাখালী, মিরপুর, কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা। প্রত্যেক চালক চারজন করে যাত্রী নিচ্ছেন। এখানে কোনো সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। চারজন করে যাত্রী নিলেও প্রত্যেক যাত্রীকে ভাড়া গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি। যাত্রীদের কাছে অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ার কারণে অনেক চালকের সঙ্গে যাত্রীদের বাগবিতণ্ডা করতেও দেখা গেছে।

যাত্রীরা জানায়, তারা সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক সিন্ডিকেটের কাছে একপ্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছে। অটোরিকশা ছাড়া অফিসে যাওয়ার অন্য কোনো মাধ্যম নেই। তাই বাধ্য হয়েই এই দৌরাত্ম্য মেনে নিতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবশ্যই নজর দেওয়া উচিত। অতিদ্রুত গণপরিবহন চালুর দাবি জানায় যাত্রীরা।

যমুনা ফিউচার পার্কের পোশাকের দোকানের কর্মী মো. সাজ্জাদ। তিনি মার্কেটে আসার জন্য আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ডে অটারিকশার অপেক্ষা করছিলেন। সাজ্জাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অফিস, মার্কেট সব খোলা রেখে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখার মতো অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। গাড়ি চলছে না। তাই বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে সিএনজিতে (অটোরিকশা) যেতে হচ্ছে। সিন্ডিকেট করে সকাল-বিকাল ভাড়া বাড়াচ্ছে সিএনজিচালকরা। মার্কেট চালু হওয়ার পর থেকেই গণপরিবহন বন্ধ থাকায় প্রতিদিন সিএনজি করে যাওয়া-আসা করতে হয় আমাকে। দুই দিন আগেও আব্দুল্লাহপুর থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক পর্যন্ত চারজন যাত্রী উঠিয়ে জনপ্রতি ৪০-৫০ টাকা করে ভাড়া নিত। এখন চারজন যাত্রী উঠিয়ে প্রতিজনের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছে ১০০ টাকা। ১৬০ টাকার ভাড়া হয়ে গেল ৪০০ টাকা! এগুলো দেখার কেউ নেই।’

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জোবায়ের হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে বা অফিস ও দোকানপাট-শপিং মল খোলা থাকায় রাজধানীবাসীর অনেককেই বাইরে যেতে হচ্ছে। দীর্ঘ পথ তো হেঁটে যাওয়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই সবাইকে সিএনজি নিয়েই গন্তব্যে ছুটতে হচ্ছে। এই সুযোগেই সিএনজিচালকরা ভাড়া বেশি নিচ্ছেন।’

সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে কালের কণ্ঠকে বলেন, লকডাউনের মাঝে অনুমতি ছাড়াই অটোরিকশা চালাচ্ছেন তাঁরা। রাস্তায় পুলিশ ধরলে বড় অঙ্কের মামলা দেয়। মামলার ভয় দেখিয়ে তাঁদের কাছ থেকে টাকাও নেয়। তাই বাধ্য হয়ে যাত্রীদের কাজ থেকে বাড়তি টাকা নিচ্ছেন তাঁরা।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2021/05/03/1029876