৩ মে ২০২১, সোমবার, ২:২৫

খুলনার ১০ হাজার পরিবহন শ্রমিক চরম খাদ্যসংকটে

খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে আন্তঃজেলার ১৮টি রুটে গড়ে দিনে সাড়ে ৪শ’টি বাস চলাচল করতো। খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির আওতায় আন্তঃজেলা ও পার্শ্ববর্তী উপজেলায় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২২০টি, আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতি এবং খুলনা মোটর বাস মালিক সমিতির আওতায় যশোর-কুষ্টিয়া রুটে সরাসরি ও লোকাল মিলে ১৫০-১৮০টি এবং রূপসা-গোপালগঞ্জ বাস মালিক সমিতির আওতায় ১২০টি গাড়ি চলাচল করে। সরকারি ত্রাণ ও পরিবহন নেতাদের পক্ষ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা না পাওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে। অনাহারে অর্ধাহারে থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চালক, হেলপার, সুপারভাইজার, টিকিট মাস্টার, কাউন্টার মাস্টার, টার্মিনাল লাইনম্যান, কলারম্যান-স্ট্যাটাররা।

জানা যায়, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদশের ন্যায় খুলনায় বন্ধ রয়েছে পরিবহন। এতে মহানগরীর প্রায় ১০ হাজার পরিবহন শ্রমিক সংকটে পড়েছেন। সরকারি কোনো ত্রাণ তারা পাচ্ছেন না। মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে যা দেওয়া হয়েছিল, তা ফুরিয়ে গেছে। ফলে এখন শ্রমিকরা অনাহার অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন।

আবেগতাড়িত হয়ে সোনাডাঙ্গা-মোংলা রুটের বাসচালক আব্দুস সামাদ বলেন, ‘আমরা ডিউটি করলে পরিবার ভালোভাবে চলে। এক, দুই-তিন দিন ডিউটি না করলে চলে কিন্তু যখন একটানা ১৫ দিন ডিউটি না করলে এখন চলবে কি করে। মে দিবসে আমরা গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। আমরা মরি বাঁচি রোডে মরি। এতে তো সরকার দায়ী নয়। আমাদের তো খেয়ে বাঁচতে হবে। সরকার গাড়ি ছেড়ে দিক এটা হলো আমাদের শতভাগ দাবি। আমরা কামাই করে খাই। মরি বাঁচি সেটা আমাদের ব্যাপার। আমাদের যা হয় হোক। ঈদ আসতেছে ছেলে-মেয়েদের কিছু দিতে পারবো না। এই গাড়ি বন্ধ রেখে আমাদের লাভটা কী? এ রকম বেঁচে থেকে লাভটা কী? এ বেঁচে কী হবে?’

ফাল্গুনী পরিবহনের বাসচালক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কোনো জায়গা থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাইনি। আমরা আছি অনেক কষ্টের মধ্যে কারে বলবো। আমাদের তো বলার লোক নাই। আমরা নিজেরা আছি সমস্যার মধ্যে। কাউরে বলতে পারি না। মধ্যবিত্ত ফ্যামিলিতে জন্ম নিয়েছি ১০ দিন না খেয়ে থাকলেও না পারবো হাত পাততে না পারবো কিউরে বলতে। সবকিছুই চলছে শুধু আমরা আছি কষ্টের মধ্যে। ভ্যান, রিকশা, অটোরিকশা সবকিছু চলে। দোকান খোলা। শুধু পরিবহন চলে না। আমরাই আছি বিপদের মধ্যে। এখনও পর্যন্ত কেউ বলতে পারবে না পরিবহন চালকরা চার আনা পয়সা কোথা থেকে পেয়েছে বা কেউ দিয়েছে। আর কারও কাছে গিয়ে হাতও পাততে পারি নাই। খুবই কষ্টের মধ্যে জীবন পার করছি। যা কোনো ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমাদের মালিক পক্ষ শুধু কিছু সহযোগিতা করেছে। এটা অস্বীকার করতে পারবো না’।

সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালের স্ট্যাটার শাহীন বলেন, ‘চলমান লকডাউনে ভীষণ কষ্টে আছি। ধারদেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে। গত এক মাসের মধ্যে শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে মাত্র ৫ কেজি চাল ছাড়া কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। আমার মতো ১০ হাজার পরিবহন শ্রমিক এভাবে কষ্টে দিনযাপন করছেন’।

খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব বলেন, ‘লকডাউনে পরিবহন খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সবকিছুই চলছে। শুধু আমাদের পরিবহন চলছে না। এতে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক মহা সংকটে পড়েছে। আমাদের কেউ সহযোগিতা করছে না শ্রমিক ইউনিয়ন ছাড়া। জেলা প্রশাসন থেকে আমাদের তালিকা নিয়েছে। ঈদের আগে নাকি ২৫০ টাকা করে দেবে। তা কবে দেবে জানি না’। খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস-কোচ মালিক সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সোনা বলেন, ‘চলমান লকডাউনে কোনো ধরনের ত্রাণ না পাওয়ায় অনাহারে অর্ধাহারে রয়েছেন খুলনার প্রায় ১০ হাজার পরিবহন শ্রমিক। আমরা মালিক পক্ষ থেকে কিছু সহযোগিতা করেছি। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। যার কারনে দীর্ঘদিন লকডাউন থাকায় শ্রমিক মানবেতন জীবনযাপন করছেন’। তিনি দ্রুত পরিবহন ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানান।

https://dailysangram.com/post/451471