রাজধানীর মিরপুর সড়কে গাউছিয়া মার্কেটের সামনে শুক্রবার ছুটির দিনেও তীব্র যানজট -যুগান্তর
১ মে ২০২১, শনিবার, ২:১১

রাজধানীতে ‘লকডাউন’ আরও ঢিলেঢালা

গণপরিবহণ ছাড়া সব কিছুই স্বাভাবিক

লকডাউন বাস্তবায়নে নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে নেই আগের মতো চেকপোস্ট

করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ উপেক্ষিত হচ্ছে রাজধানী ঢাকার সড়ক ও বাজারে। শুক্রবার গণপরিবহণ ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল ছিল প্রায় স্বাভাবিক। যানজটও তৈরি হচ্ছে কোথাও কোথাও। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের চেকপোস্টেও ঢিলেঢালা তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে। সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় বিভিন্ন জিনিসপত্রের দোকান ও কাঁচাবাজারে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। শপিংমল এবং মার্কেটগুলোতেও ভিড় লক্ষ করা গেছে। শপিংমলগুলোতে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষদের কেনাকাটা করতে দেখা গেলেও মার্কেটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না।

বেলা ১১টায় মৌচাক মোড়ে দেখা যায়, যানবাহনের বেশ চাপ। সেখানে কথা হয় শান্তিনগরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী ওয়াহিদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, দেশে লকডাউন চলছে-এটা সরকার বলছে, মানুষ বলছে। কিন্তু কাজকর্মে কিন্তু তা বোঝা যাচ্ছে না। ‘সীমিত’ বলেন আর ‘বৃহৎ’ বলেন, অফিস বাদে সব কিছুই এখন খোলা। বিশেষ করে রমজান মাস হওয়ায় মানুষ এসব বিধিনিষেধ মানতে নারাজ। এদিন রাজধানীর টিকাটুলি মোড়, গুলিস্তান, জিপিও মোড়, পল্টন মোড়, কাকরাইল, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, নতুনবাজার পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায় একই চিত্র। এসব এলাকায় গণপরিবহণ বাদে সব ধরনের যানবাহনে যাত্রী ঠাসা ছিল। কোথাও কোথাও যানবাহনের চাপে যানজট সৃষ্টি হয়।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল খোলা থাকবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে বেচাকেনা করতে হবে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বেচাকেনা হয়েছে। সকালের দিকে ক্রেতাদের উপস্থিতি একটু কম দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। বিশেষ করে দুপুর ১২টার পর থেকে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে কেনাকাটা চলে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্কে। মাস্ক পরার পাশাপাশি, প্রতিটি প্রবেশপথে তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে কর্তৃপক্ষ। দোকানেও আলাদাভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হয়। এমন ব্যবস্থাপনায় খুশি ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই। তবে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা যায়নি নগরীর অন্য মার্কেটগুলোতে। দুপুরে নিউমার্কেট ও গাউসিয়া মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে, মানুষের ভিড়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সামনে এগুনো কঠিন। গাউসিয়া মার্কেট লাগোয়া এলিফ্যান্ট রোডেও ছিল অনেক ভিড়। একই চিত্র দেখা গেছে, মার্কেটের সামনের ফুটওভার ব্রিজেও। ফুটপাত থেকে শুরু করে মার্কেটের ভেতরের অলিগলিতেও ছিল উপচেপড়া ভিড়। কেউ কেউ মাস্ক পরলেও বেশির ভাগেরই মুখে তা দেখা যায়নি। দোকানিরা ক্রেতাদের সামাল দিতে হিমশিম খান। কোনও দোকানেই হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে দেখা যায়নি।

দুপুরে নিউমার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম জানান, সামনে ঈদ। তাই একটু বেশি ভিড়। ব্যবসাও ভালো হচ্ছে। অনেকেই মাস্ক ব্যবহার না করেই আসছেন। তাদের কিছু বলতেও পারছি না। মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে পুলিশ প্রশাসনের একটু কড়াকড়ি দরকার ছিল বলে জানান এই ব্যবসায়ী।

এদিকে ছুটির দিনে সকালের দিকে কাঁচাবাজারে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সেখানে অনেককেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে বাজার করতে দেখা গেছে। আবার অনেক দোকানিকেও মাস্ক পরতে দেখা যায়নি। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পূর্ব নাখালপাড়ার কাঁচাবাজারে (সকাল বাজার) সরেজমিন দেখা গেছে, মাছ-মাংস ও সবজির দোকানের সামনে উপচে পড়া ভিড়। এমনকি রাস্তার দুপাশেও পসরা সাজিয়ে সবজি ও ফল বিক্রি করা হয়েছে। সেখানেও স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিল না। একই অবস্থা হোটেল-রেস্টুরেন্টের ক্ষেত্রেও। সন্ধ্যার পর দেখা গেছে, প্রধান সড়কের আশপাশের খাবারের দোকানগুলো কিছুটা নিয়ম মেনে বিক্রি করলেও স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না অলিগলির দোকানে। নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হোটেলে বসেই চলছে খাওয়া-দাওয়া। হোটেল মালিকরা বলেন, এখন তো একটু শিথিল। তাই এভাবে খাওয়ানো হচ্ছে। নয়তো আমরা শুধু পার্সেল সার্ভিসই দেই। আমাদেরও তো পরিবার আছে। চলতে হবে তাদের নিয়ে।

কমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা : লকডাউন বাস্তবায়নে রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা কমেছে। শুরুর দিকে যেভাবে পুলিশের কড়া নজরদারি ছিল, তা এখন নেই বললেই চলে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লকডাউন বাস্তবায়নে নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে নেই আগের মতো চেকপোস্ট। সড়কে পুলিশের অবস্থান থাকলেও এখন গাড়ি চলাচলে সেভাবে জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে না। শাহবাগ, নিউমার্কেট, বাড্ডা, তেজগাঁও, কাওরানবাজার, নতুন বাজার, প্রগতি সরণি এলাকায় তেমনভাবে চেকপোস্ট চোখে পড়েনি। বিধিনিষেধের আওতামুক্ত পরিবহণ ও ব্যক্তি ছাড়া অন্যদেরও সেভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জেরার মুখে পড়তে হয়নি। গণপরিবহণ ছাড়া অন্যান্য পরিবহণ অনেকটা স্বাভাবিকভাবে চলেছে। কয়েকটি স্থানে সিএনজি চালিত অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে পুলিশকে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ চলবে আগামী ৫ মে পর্যন্ত।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/417208