২ এপ্রিল ২০১৭, রবিবার, ১০:৪৩

নতুন করে বেড়েছে কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা

মোটা চালের দাম এখন বাংলাদেশেই বেশি

দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য চালের দাম আরেক দফা বেড়েছে। চাল কিনতে বাজারে গেলে এখন প্রতি কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। রাজধানীর বাজারে মোটা চালের খুচরা দর উঠেছে ৪০ থেকে ৪১ টাকায়। আর ঢাকায় মধ্যম আয়ের মানুষের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মিনিকেট চাল কিনতে গেলে প্রতি কেজিতে দিতে হচ্ছে ৫২ টাকা। এর মধ্যে মাঝারি আকারের কয়েকটি জাতের চাল কেজিপ্রতি ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সার্বিকভাবে এই অঞ্চলের ধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে এখন বাংলাদেশেই মোটা চালের দাম সবচেয়ে বেশি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত থেকে ৫ শতাংশ ভাঙা সেদ্ধ চাল আমদানি করলে এখন দেশের বাজারে প্রতি কেজির সম্ভাব্য মূল্য দাঁড়াবে ৩২ টাকার কিছু বেশি। পাকিস্তান থেকে আনলে তা কেজিপ্রতি প্রায় ৩৫ টাকা পড়বে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড থেকে আতপ চাল আমদানি করলে প্রতি কেজি ৩২ টাকা ৪৪ পয়সা ও ভিয়েতনাম থেকে আনলে পড়বে ৩৩ টাকা ৬৪ পয়সা।
চালের মূল্যবৃদ্ধির এ প্রবণতা চলছে গত বোরো মৌসুমের পর থেকে, অর্থাৎ এক বছর ধরে। এর আগে কয়েক বছর মোটা চালের খুচরা দর কেজি প্রতি ৩০-৩২ টাকার আশপাশে ছিল। মিনিকেট মিলত ৪২ থেকে ৪৪ টাকা দরে। অন্যদিকে মাঝারি আকারের চাল কেজিপ্রতি ৩৬ থেকে ৩৮ টাকার মধ্যেই পাওয়া যেত। এ দামের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, একটি পরিবারকে মাসে ৫০ কেজি চাল কিনতে ৪০০ টাকা বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে।
অবশ্য নিম্নআয়ের মানুষ সরকারের খোলাবাজারে চাল বিক্রির কর্মসূচি থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল কিনতে পারছেন। বাকিদের কিনতে হচ্ছে বাড়তি দাম দিয়েই।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ প্রথম আলোকে বলেন, এখন মূল্যবৃদ্ধি মৌসুমি ওঠানামা। তবে এবার কিছুটা বেশি বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে। এর সহজ ব্যাখ্যা হলো, এবার চাল আমদানি হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় চালের দাম কিছুটা বাড়তে দেওয়া উচিত। এতে কৃষক উৎসাহ পাবে। তবে ধান ওঠার পরে যাতে তারা ভালো দাম পায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে।’
কে এ এস মুরশিদ আরও বলেন, বাংলাদেশ কৃষিতে ভর্তুকি কম দেয়। তাই এ দেশে চালের উৎপাদন খরচ একটু বেশি।
ব্যবসায়ীরা চালের নতুন করে মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন। জানতে চাইলে চালকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অটো-মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, এখন পুরোনো ধানও শেষ পর্যায়ে, চালও শেষ পর্যায়ে। এ সময়ে দাম কিছুটা বৃদ্ধি স্বাভাবিক ঘটনা। তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ বাজার এ রকম থাকবে। এরপরে দাম কমতে শুরু করবে। ১০ দিন পরেই নতুন ধান উঠতে শুরু করবে।
আবদুর রশিদের চালকলের রশিদ ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল এখন ঢাকার খুচরা দোকানে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার মধ্যম ও সীমিত আয়ের পরিবারগুলো বস্তা হিসেবে রশিদ, এরফান, ডায়মন্ড, প্রাণ, তীরসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চাল কেনে। এ মাসের চাল কিনতে গেলে তাদের প্রতি বস্তায় ২০০ টাকা বেশি দিতে হবে, যা কেজিতে দাঁড়ায় ৪ টাকা।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের চালের আড়তে মোটা চাল পাইকারি ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সেখানে মাঝারি আকারের আটাশ নামে পরিচিত চাল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৪২ থেকে ৪৪ টাকা কেজি দরে। ওই বাজারের বরিশাল রাইস এজেন্সির ব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন রাজা প্রথম আলোকে বলেন, সব চালের দামই কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে।
কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের দোকানগুলোতেও খুচরা মোটা গুটি চাল ৪০ টাকা, আর স্বর্ণা চাল ৪১-৪২ টাকা। বস্তা নিলে কেজিতে এক টাকা কমে দেন বিক্রেতারা। বাজারের হাজি ইসমাইল অ্যান্ড সন্সের বিক্রেতা জসিম উদ্দিন বলেন, আটাশ চাল তো পাওয়াই যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে ৩ কোটি ৪৯ লাখ ৬৮ হাজার টন চাল উৎপাদিত হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ২ লাখ ৫৮ হাজার টন বেশি। উৎপাদন বৃদ্ধির পরেও মৌসুম শেষে এসে মিনিকেট ও আটাশ চালের সরবরাহে টান পড়েছে, এ দুটি চাল বোরোতে উৎপাদিত হয়।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে দেশে মোটা চালের জাতীয় খুচরা গড় দাম ছিল কেজিপ্রতি প্রায় ২৬ টাকা। পরের দুই বছর তা যথাক্রমে ৩০ ও ৩৩ টাকা ছিল। ২০১৫ সালে মোটা চালের গড় দাম ছিল কেজিপ্রতি ২৮ টাকা ৬৭ পয়সা। ন্যাশনাল ফুড পলিসি ক্যাপাসিটি স্ট্রেংদেনিং প্রোগ্রামের ওয়েবসাইটে দেওয়া ২০০৭ সাল থেকে চালের দাম ওঠানামার লেখচিত্রে দেখা যায়, চালের দাম এত বেশি কখনো ছিল না।

http://www.prothom-alo.com/economy/article/1130721/