৩০ এপ্রিল ২০২১, শুক্রবার, ৫:১৪

শেষের পাতা

অনুমাননির্ভর রেল প্রকল্পে বাড়ছে ব্যয়

নিয়মানুযায়ী ৫০ কোটি টাকার ওপরে প্রকল্প প্রণয়ন করতে হলে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এ নিয়ম না মেনে শুধু অনুমানের ওপরই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প তৈরির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এমনই একটি উদ্যোগ হচ্ছে, ২০১৭ সালের সৈয়দপুরে ক্যারেজ তৈরির কারখানা নির্মাণ প্রকল্প; যা আলোর মুখ দেখেনি, বরং প্রকল্পের সম্ভাব্য খরচ দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের সবচেয়ে বড় ওয়ার্কশপ 'সৈয়দপুর ওয়ার্কশপ'- যেখানে ১১২ একর জায়গার ওপর রেলওয়ের ক্যারেজ পুনর্বাসনের কাজ করা হয়। তাই এখানেই ক্যারেজ তৈরির কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কারখানাটি হলে বাংলাদেশ রেলওয়ে ক্যারেজ তৈরির সক্ষমতা অর্জন করবে।

বাংলাদেশের সর্বপ্রথম এই ক্যারেজ তৈরির কারখানা স্থাপনের জন্য ভারতীয় লেটার অব ক্রেডিট (এলওসি) ঋণ সহায়তায় ৭৫৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়। যেখানে ঋণের পরিমাণ ৬২৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে পরিকল্পনা কমিশনে এই প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। গুরুত্বপূর্ণ হলেও প্রকল্পটি এখনও আলোর মুখ দেখেনি। বরং বর্তমানে ব্যয় দ্বিগুণ বাড়িয়ে এক হাজার ৪৬১ কোটি টাকায় প্রকল্পটির প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর পরিকল্পনা কমিশনের এ-সংক্রান্ত প্রথম মূল্যায়ন কমিটির সভা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (রোলিং স্টক) নেতৃত্বে প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী ও সংশ্নিষ্ট প্রকল্প পরিচালককে সদস্য সচিব করে আইএমইডি, রেলপথ মন্ত্রণালয়, ভৌত অবকাঠামো বিভাগ, অর্থ বিভাগ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রতিনিধির সমন্বয়ে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি সৈয়দপুর কারখানা পরিদর্শন করে। এরপর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পুনর্গঠন করে ২০১৮ সালের ৬ মে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়।

এই ডিপিপিতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৪৬০ কোটি ৮৪ লাখ দুই হাজার টাকা। যেখানে সরকারি অর্থ ২৪৭ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা এবং প্রকল্প ঋণ এক হাজার ২১৩ কোটি ৪৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ প্রস্তাব করা হয় ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু ২০২১ সালের এপ্রিলে এসেও এ প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি।

প্রকল্প পর্যালোচনার ভৌত অবকাঠামোর তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাই করা হয়নি। তবে নতুন করে প্রস্তাবনায় সমীক্ষার কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় প্রকল্পটি রয়েছে। প্রকৌশলী নকশা ও বিডিং পরামর্শক খরচ ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। নির্মাণ তদারকিতে পরামর্শক ব্যয় ২০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। রেলওয়ের প্রকৌশলীদের বিদেশ প্রশিক্ষণে দুই কোটি টাকা, ওয়ার্কশপ তৈরির জন্য শিক্ষা সফরে এক কোটি টাকা এবং প্রকৌশলীদের চাকরিকালীন প্রশিক্ষণ খরচে ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। এ ছাড়া ব্যয় ধরা হয় প্রযুক্তি হস্তান্তর ও কারখানা নির্মাণে ৭০৭ কোটি ৮০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা, ইলেকট্রিক্যাল প্ল্যান্টস ও মেশিনারিজ সরবরাহ, স্থাপন ও কমিশনিংয়ে ২৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, দুটি গাড়ি কিনতে এক কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং পূর্ত কাজে ৩২৫ কোটি ৫৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।

২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ঋণচুক্তি সম্পাদনের সময় পরামর্শকের জন্য বরাদ্দ ও নিয়োগ অর্থাৎ পরামর্শক অংশটি দেশের সরকারি খরচের ভেতরে রাখতে হবে। তবে এই প্রকল্পে সংশোধিত ডিপিপিতে সেটা করা হয়নি।

এ-সংক্রান্ত ফিজিবিলিটি স্টাডির ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রথম পিইসি সভায় বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের দ্বিতীয় ভৈরব, তৃতীয় তিতাস সেতু নির্মাণ, খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশনের পুনর্বাসন, কাশিয়ানী-গোপালগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের আদলে এটি করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধান আতাউর রহমান খান বলেন, প্রথমে ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হবে। তারপর ওয়ার্কশপ নির্মাণ করা হবে। সাধারণত ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে দুই থেকে তিন বছর সময় প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে এখনই নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া ঠিক হবে না। প্রথমে সরকারি অর্থে এই সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। তারপর নির্মাণের জন্য ভারতীয় এলওসি ঋণের অর্থায়ন খুঁজতে যৌক্তিক হবে। আর ভারতীয় এলওসির তালিকায় প্রকল্পটি আছে কিনা, তাও দেখতে হবে।

https://samakal.com/todays-print-edition/tp-last-page/article/210496853