৩০ এপ্রিল ২০২১, শুক্রবার, ৫:১২

ধুঁকছে কারিগরি শিক্ষা

মহামারিতে অনলাইনে তত্ত্বীয় ক্লাস চললেও নেই ব্যাবহারিকের সুযোগ

করোনার গ্যাঁড়াকলে পড়ে প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অনলাইনে কিছু ক্লাস নেওয়া হলেও ব্যাবহারিক নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অথচ কারিগরি শিক্ষায় কমপক্ষে ৬৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যাবহারিক শিক্ষা নিতে হয়। ফলে কারিগরি শিক্ষায় তত্ত্বীয় ক্লাসের চেয়ে ব্যাবহারিকের গুরুত্বই বেশি। এ অবস্থায় ঝুঁকিতেই পড়েছে ব্যাবহারিকনির্ভর কারিগরি শিক্ষা।

জানা যায়, সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কারিগরি শিক্ষার চলতি বছরের এসএসসির (ভোকেশনাল) জন্য ৬০ কর্মদিবস ও এইচএসসির (ভোকেশনাল) জন্য ৮৪ কর্মদিবসের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিপ্লোমা পর্যায়েও কোর্স ছোট করা হয়েছে। অথচ ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৬৫ শতাংশ এবং ভোকেশনালে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যাবহারিক রয়েছে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে শিক্ষার্থীদের পক্ষে যথাযথ ব্যাবহারিক করা সম্ভব হবে না। এতে তাদের দক্ষতা অর্জনও দুরূহ হয়ে পড়বে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাধারণ শিক্ষার শিক্ষার্থীরা এক শ্রেণিতে কম পড়লেও পরবর্তী শ্রেণিতে তা সমন্বয় করতে পারে। কিন্তু কারিগরি শিক্ষা দক্ষতানির্ভর। বিশেষ করে এসএসসি বা ডিপ্লোমা শেষে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই চাকরিতে ঢুকে যায়। এখন তাদের যদি ব্যাবহারিকে ঘাটতি থেকে যায়, তাহলে তারা চাকরি জীবনেও জটিলতায় পড়বে। এমনকি তাদের যে দক্ষতার জন্য চাকরিতে নেওয়া হবে তা তারা দেখাতে পারবে না।

করোনায় এক বছর বন্ধ থাকার পর ফেব্রুয়ারি থেকে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ ও অষ্টম বর্ষের পরীক্ষা শুরু হয়। প্রতিটি বিষয়ের মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে পরীক্ষা দিতে হয় ৫০ নম্বরের। আর তিন ঘণ্টার পরীক্ষা দুই ঘণ্টা এবং দুই ঘণ্টার পরীক্ষা দিতে হয় এক ঘণ্টা ৩০ মিনিটে। প্রতিটি বিষয়ে পরীক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরকে প্রশ্নপত্রে উল্লিখিত মোট নম্বরের বিপরীতে রূপান্তরিত করে ফল নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত হয়। এসব শিক্ষার্থীর গত বছরের মার্চের আগে ৮০ শতাংশ ক্লাস ও ব্যাবহারিক শেষ হয়েছিল, কিন্তু পরীক্ষা আটকে ছিল। তাই তাদেরই শুধু পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, কারিগরির কিছু শিক্ষার্থী হয়তো অনলাইনে তত্ত্বীয় ক্লাস করেছে। কিন্তু ব্যাবহারিক ক্লাস করতে না পারায় তাদের তত্ত্বীয় ক্লাসগুলোও কাজে লাগাতে পারছে না।

রাজধানীর মহানগর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. সলিম উল্লাহ সেলিম বলেন, ‘এই বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস না করিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। তাই যখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলুক না কেন, আমরা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে তাদের তত্ত্বীয় ও ব্যাবহারিক দুটোই করাব। এতে হয়তো তাদের শেখায় কিছুটা ঘাটতি থেকে যাবে। কিন্তু আমাদের হাতে অন্য কোনো বিকল্পও তো নেই।’

দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান। এর মধ্যে রয়েছে ৯টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাঁচটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চারটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ইঞ্জিনিয়ারিংসহ নানা প্রযুক্তি বিষয়কেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। যাদের শিক্ষাও অনেকটা ব্যাবহারিকনির্ভর। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস হলেও তাদের খুব সামান্যই পরীক্ষা হয়েছে। আগামী ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৭ মে থেকে হল খোলার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। যদি তখন বিশ্ববিদ্যালয় খোলা সম্ভব হয়, তখন হয়তো দ্রুততার সঙ্গে তাদের ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করা হবে। এতে তারাও কার্যকর অর্থে ব্যাবহারিক করতে পারবে না।

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ইদ্রিস আলী বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে কারিগরি শিক্ষাকে কোনোভাবেই মেলানোর সুযোগ নেই। অনলাইনে তত্ত্বীয় ক্লাস নেওয়া গেলেও ব্যাবহারিক নেওয়া যায় না। ব্যাবহারিকের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, কাঁচামালের প্রয়োজন হয়। যা সরাসরি ক্লাসরুম ছাড়া অসম্ভব। তাই করোনায় কারিগরির শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আগামীতে তাদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া উচিত।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/news/2021/04/30/1029013