২ এপ্রিল ২০১৭, রবিবার, ১০:৪০

চাকরিজীবন শুরুই হলো না তাঁদের

‘আমি যে বিসিএস ক্যাডার হয়েছি, সেটা এখন আর কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। বিষয়টা প্রচণ্ড বিব্রতকর।’ চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর দীর্ঘদিনেও চাকরিতে যোগদান করতে না পেরে ফেসবুকে এভাবেই নিজের হতাশা ব্যক্ত করেছেন ৩৫তম বিসিএসে উত্তীর্ণ এক প্রার্থী।

চূড়ান্ত ফল প্রকাশের প্রায় আট মাস হয়ে গেছে। অথচ ৩৫তম বিসিএসের গেজেট প্রকাশ হয়নি। এতে ওই বিসিএসে উত্তীর্ণরা এখনো চাকরিতে যোগ দিতে পারেননি। চাকরিজীবন শুরুর আগেই আমলাতান্ত্রিক এই দীর্ঘসূত্রতায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ ওই বিসিএসে উত্তীর্ণ ২ হাজার ১৭৪ জন প্রার্থী।
২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ৩৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল পিএসসি। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় দুই বছর লাগার পর ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। ডিসেম্বরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষ করেই এই বিসিএসে উত্তীর্ণরা গেজেটের আশায় বসে আছেন। কিন্তু মাসের পর মাস পেরোলেও গেজেট প্রকাশ হচ্ছে না।
গেজেটের অপেক্ষায় থাকা শতাধিক প্রার্থী গত কয়েক দিনে প্রথম আলোকে তাঁদের ক্ষোভ ও হতাশার কথা জানিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে প্রশাসন ক্যাডার পাওয়া এক ছাত্র প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারুণ্যের সেরা সময়টা যেখানে একজন সরকারি চাকরিতে দিতে পারেন, সেখানে তাঁর তিন-সাড়ে তিন বছর সময় চলে যাচ্ছে পরীক্ষা আর গেজেটে। বিশেষ করে চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর আট মাস সময় লাগা কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না।’
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম-কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়ে দিয়েছি। এরপর আর পিএসসির কিছু করার থাকে না। বিভিন্ন ধরনের যাচাই-বাছাই আর ২৭টি ক্যাডারের সমন্বয় করে গেজেট প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।’
অবশ্য শুধু ৩৫ নয়, বিসিএসের গেজেট প্রকাশের এই দীর্ঘসূত্রতা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। ২৮তম বিসিএস থেকে প্রতিবার গেজেট প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা বাড়ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কোনো বিসিএসের চূড়ান্ত ফল হয়ে গেলে পিএসসি থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন যায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। এরপর শুরু হয় পুলিশ যাচাই। সেই যাচাই প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে জনপ্রশাসনে আসে। ইতিমধ্যে যাদের মুক্তিযোদ্ধা কোটা আছে সেটা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় যাচাই করে। সব প্রতিবেদন এলে প্রধানমন্ত্রী ও পরে রাষ্ট্রপতির দপ্তর হয়ে জনপ্রশাসনে এলে সেখান থেকে গেজেট প্রকাশ করে যোগদানের জন্য ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ৩৫তম বিসিএসের গেজেট প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে।’ বিসিএসের গেজেট প্রকাশের দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশি যাচাই, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মুক্তিযোদ্ধা কোটার সনদ যাচাইসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য এই দেরিটা হয়ে যায়।’
তবে এই দেরিকে স্বাভাবিক মনে করেন না সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারুণ্য একজন মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়। বাংলাদেশের শিক্ষিত মেধাবী তরুণ-তরুণীদের জীবনের একটা বড় অংশই চলে যায় বিসিএস পরীক্ষা দিতে। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর গেজেট প্রকাশ হতে আরও সাত-আট মাস লাগাটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। মূলত, যাচাই প্রতিবেদনের কারণে এই দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়। আমি মনে করি, সবাই আন্তরিক হলে ফল প্রকাশের দুই মাসের মধ্যেই যোগদান করানো সম্ভব।’

 

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1130646/