৩০ এপ্রিল ২০২১, শুক্রবার, ৫:০৮

দেশে প্রতিবছর ১৮ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে

২৫ জুলাইকে পানিতে ডুবে মৃত্যুরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। স্থানীয় সময় গত বুধবার ঐতিহাসিক এই রেজুলেশন সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। রেজুলেশনটি উত্থাপন করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। জাতিসংঘের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এ ধরনের রেজুলেশন এটাই প্রথম। রেজুলেশনটিতে পানিতে ডুবে মৃত্যুকে একটি নীরব মহামারি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। গত এক দশকে ২.৫ মিলিয়ন মানুষ পানিতে ডুবে মারা গেছে, যা ছিল প্রতিরোধযোগ্য। বিশ্বে প্রতিবছর ২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়, এরমধ্যে ৪০ শতাংশই শিশু। মোট মৃত্যুর ৯০ শতাংশই ঘটে বাংলাদেশের মতো মধ্যম ও নিম্ন আয়ের দেশে। মহাদেশগুলো মধ্যে এশিয়াতে পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি।

বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১৮ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেন, আর যাতে কোনো মূল্যবান জীবন পানিতে ডুবে শেষ না হয় সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে শেখ হাসিনা সরকার। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে শিক্ষা, নারী ও শিশু, সমাজকল্যাণ, যুব ও ক্রীড়া এবং ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সসহ ১২টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এই টাক্সফোর্স পানিতে ডুবে মৃত্যু হ্রাস সংক্রান্ত জাতীয় কৌশল প্রণয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে প্রতিবছর ২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করছে। বেশ কয়েকটি দেশে পানিতে ডুবে মৃত্যু, বিশেষ করে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। রেজুলেশনটিতে পানিতে ডুবে মৃত্যুরোধ পদক্ষেপটির সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস সম্পর্কিত বৈশ্বিক কাঠামোগুলোর সংযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জাতিসংঘ গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বেশ কয়েকটির অর্জনকে এগিয়ে নেয়ার জন্য এটি তাৎপর্যপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

এদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, দেশে প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন শিশু-কিশোর পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে। বছরে মরছে সাড়ে ১৪ হাজার শিশু-কিশোর। এই সমস্যা প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু সমস্যা সমাধানে কোনো সামাজিক আন্দোলন বা সচেতনতামূলক কোনো উদ্যোগ নেই। দেখা যাচ্ছে, ৮০ শতাংশ মৃত্যু হচ্ছে পুকুর, ডোবা, বালতি বা পানির পাত্রে। ৮০ শতাংশ মৃত্যু হচ্ছে বাড়ির ২০ মিটারের মধ্যে। আর এই মৃত্যুগুলোকে কপালের দোষ বলে মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি একরকম প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে। গবেষণা বলছে, দেশে প্রথম জন্মদিনের পরপরই শিশুদের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে। পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মারা যায় এক থেকে চার বছর বয়সের শিশুরা। এসব ঘটনায় দেখা যায়, বড় পরিবার অর্থাৎ যেসব পরিবারের সদস্যসংখ্যা বেশি, সেসব পরিবারের শিশুদের ডুবে মরার ঝুঁকিও বেশি।

নীরব এই বৈশ্বিক মহামারির বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ২০১৮ সালে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। দীর্ঘ পথ পরিক্রমার পর রেজুলেশনটি পাস হয়। বাংলাদেশের পাশাপাশি রেজুলেশনটিতে সহ-নেতৃত্ব দেয় আয়ারল্যান্ড। আর এতে সহ-পৃষ্ঠপোষকতা করে ৮১টি দেশ।

পানিতে ডুবে মৃত্যু বিশ্বের প্রতিটি জাতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে রেজুলেশনটিতে। পাশাপাশি অগ্রহণযোগ্য উচ্চহারের এই মৃত্যু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে একটি কর্ম কাঠামোও প্রদান করা হয়। রেজুলেশনটিতে বলা হয়, পানিতে ডুবে বিভিন্ন দেশে শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। এই মৃত্যু প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি, জাতীয় পদক্ষেপকে উৎসাহিত করা এবং এ বিষয়ক সর্বোত্তম অনুশীলন ও সমাধানসমূহ পারস্পরিকভাবে ভাগ করে নেয়ার লক্ষ্যে ২৫ জুলাইকে বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যুরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয় সাধারণ পরিষদ।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অব হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই) এর ২০১৭ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডি শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ২০১৭ সালে ১৪ হাজার ২৯ জন মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী পানিতে ডুবে মৃত্যুর দিক থেকে কমনওয়েল্থ দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে পানিতে ডুবে মৃত্যু নিয়ে কোনো তথ্যব্যবস্থা না থাকায় এর প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনা থেকে পানিতে ডুবে মৃত্যুর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। সাধারণত পানিতে ডুবে মৃত্যুর সবগুলো ঘটনা গণমাধ্যমে উঠে আসে না। এখানে বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রাপ্ত প্রবণতাগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যম ও স্থানীয় পর্যায়ের অনলাইন নিউজ পোর্টালে ২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৫৭৯টি ঘটনার কথা প্রকাশিত হয়েছে। এসব ঘটনায় সারাদেশে ৮০৮ শিশুসহ মোট ৯৬৮ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা যায়। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী পানিতে ডুবে মৃত্যুর দিক থেকে কমনওয়েল্থ দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে পানিতে ডুবে মৃত্যু নিয়ে কোনো তথ্যব্যবস্থা না থাকায় এর প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনা থেকে পানিতে ডুবে মৃত্যুর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। সাধারণত পানিতে ডুবে মৃত্যুর সবগুলো ঘটনা গণমাধ্যমে উঠে আসে না। এখানে বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রাপ্ত প্রবণতাগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যম ও স্থানীয় পর্যায়ের অনলাইন নিউজ পোর্টালে ২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৫৭৯টি ঘটনার কথা প্রকাশিত হয়েছে। এসব ঘটনায় সারাদেশে ৮০৮ শিশুসহ মোট ৯৬৮ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা যায়।

গবেষণায় দেখাযায়, পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটনা ঘটে ঢাকা বিভাগে, ২১১ জন। এছাড়া চট্টগ্রামে ১৮৪ জন, রংপুরে ১৪৩, রাজশাহীতে ১২১, ময়মনসিংহে ১০৬, বরিশালে ৮৩ ও খুলনা বিভাগে ৭২ জন মারা যায়। এ সময়ে সবচেয়ে কম মৃত্যু ছিল সিলেট বিভাগে, ৪৮ জন। নেত্রকোনা জেলায় গত ১৫ মাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়, ৫১ জন। পরবর্তী স্থানগুলোতে রয়েছে কুড়িগ্রাম, ঢাকা, নোয়াখালী, দিনাজপুর ও গাজীপুর জেলা। এসব জেলায় যথাক্রমে ৪৬, ৪৬, ৩৩, ৩৩ ও ২৮ জন মারা যায়। বান্দরান, শরীয়তপুর ও নড়াইল Ñ এ তিনটি জেলায় কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।

গবেষণায় বলছে শিশুরা বেশি মারা যাচ্ছে: পানিতে ডুবে মৃতদের ৮৩ শতাংশই শিশু। চার বছর বা কম বয়সী ৩৪৮ জন, ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী ৩০৮ জন, ৯-১৪ বছরের ১২০ জন এবং ১৫-১৮ বছরের ৩২ জন। ১৬০ জনের বয়স ১৮ বছরের বেশি। এ সময়ে ৭০টি পরিবারের ১৮৪ জন সদস্য পানিতে ডুবে মারা যায়। যাদের মধ্যে শিশুর সঙ্গে ভাই অথবা বোনসহ ৬৮ জন, বাবা-মাসহ ১৯ জন, দাদা-দাদি বা নানা-নানিসহ ৪ জন, চাচাত বা খালাতো ভাই বা বোনসহ ৮১ জন, চাচা-খালাসহ ১৩ জন মারা যায়। পানিতে ডুবে নিহতদের মধ্যে ৩৫২ জন নারী। এদের মধ্যে কন্যা শিশু ৩১৯ জন। পুরুষ মারা যায় ৬১০ জন, যাদের মধ্যে ৪৮৩ জন শিশু। প্রকাশিত সংবাদ থেকে ছয় জনের লৈঙ্গিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দিনের প্রথম ভাগে অর্থাৎ সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ৩৯৪ জন এবং দুপুর থেকে সন্ধ্যার আগে ৩৮৮ জন মারা যায়। এছাড়া সন্ধ্যায় ১৫৪ জন মারা যায়। ২০ জন রাতের বেলায় পানিতে ডোবে। ১২ জনের মৃত্যুর সময় প্রকাশিত সংবাদ থেকে নিশ্চিত হয় যায়নি।

গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৫ মাসে ২০২০ সালের জুন থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে সর্র্বোচ্চ সংখ্যক ৫৭৭ জন মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে আগস্ট মাসে, ১৭১ জন। জুন মাসে ৯১ জন, জুলাই মাসে ১৬৩ জন। ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে ৫৯ জনের মৃত্যুর বিপরীতে ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে মৃত্যুবরণ করে ১৫৮ জন, যা গত বছরের তুলনায় ১৬৮ শতাংশ বেশি। এক্ষেত্রে ধারণা করা যায় যে, প্রকৃত অর্থেই মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে অথবা গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ গতবছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ৭৮৩ জন কোনো না কোনো ভাবে পানির সংস্পর্শে এসে ডুবে যায়। ১১৮ জন মারা যায় নৌযান দুর্ঘটনায়। প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে পানিতে ডুবে মৃতদের মধ্যে ৫৫ জন বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। পরিবারের সদস্যদের যথাযথ নজরাদারি না থাকায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পানিতে ডোবার ঘটনা ঘটে। অধিকাংশ শিশু বড়দের অগোচরে বাড়ি সংলগ্ন পুকুর বা অন্য জলাশয়ে চলে যায় এবং দুর্ঘটনার শিকার হয়। নৌযান দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে ২০২০ এর ২৯ জুন। বুড়িগঙ্গা নদীতে এমএল মর্নিং বার্ড নামের একটি লঞ্চ ময়ূর-২ নামের আরেকটি বড় লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায়। এতে ৩২ জন মারা যায়। ৫ আগস্ট নেত্রকোনার মদন উপজেলায় হাওরে নৌকা ডুবে ১৭ জন মারা যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৭ সালে প্রকাশিত প্রিভেন্টিং ড্রাওনিং: অ্যান ইমপ্লিমেন্টেশন গাইডে স্থানীয় পর্যায়ের মানুষজনকে সম্পৃক্ত করে দিবাযতœ কেন্দ্র বা ডে কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে। এছাড়া পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি ও জাতীয়ভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করার উপরও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠান সুপারিশ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল রিপোর্ট অন ড্রনিং প্রিভেনটিং এ লিডার কিলার প্রতিবেদনে পানিতে ডুবা প্রতিরোধে ১০টি উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে প্রতিটি দেশকে তার উপযোগী জাতীয় পানি নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কাসহ আরো কয়েকটি দেশ এ নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। আর্থ-সামাজিক ও ভৌগোলিক পার্থক্যের কারণে বিভিন্ন দেশে পানিতে ডুবার কারণ ভিন্ন ভিন্ন। পানিতে ডুবে মৃত্যুরোধে বাংলাদেশেরও উপযোগী কৌশল তৈরি করা জরুরি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় এই খসড়া কর্মকৌশল তৈরি করা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কিন্তু দৃশ্যমান সরকারি উদ্যোগ নেই। উল্লেখ্য যে, এই হতাশা-নিরাশার মধ্যে আশার প্রদীপ জেলে বিশিষ্ট কবি, অধিকারকর্মী ও ফটো আর্টিস্ট বন্ধুবর ওচমান জাহাঙ্গীর। তারা ক’জনে গড়ে তুলেছেন ‘সাঁতার ক্লাব’ নামের একটি সামাজিক আন্দোলন। সাতাঁর ক্লাবের লক্ষ্য হচ্ছে সাঁতার শেখানোর পাশাপাশি জাতীয় আন্তর্জাতিক মানের সাঁতারু সৃষ্টি করা, পুকুরে, নদী, সমুদ্রের পানিতে ডুবে আর কারো মৃত্যু না ঘটে সে লক্ষ্যে সচেতনতামূলক সামাজিক যোগাযোগ কর্মসূচী গ্রহণ করা। ওচমান বলেন,‘সাঁতার জানা জীবনের অংশ, সাঁতার না জেনে পানিতে নামাটা অপরাধ, যেহেতু পানিতে ডুবে মারা আত্মহত্যার সামিল, তাই সাঁতার শেখা বাধ্যতামূলক হওয়া চাই। এ ব্যাপারে স্থানীয় জাতীয় পর্যায়ে বাস্তবভিত্তিক প্রোগ্রাম গ্রহণ করতে সাঁতার ক্লাব বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

সাঁতার জানা, সাঁতার শেখা এই মৃত্যু প্রতিরোধের প্রধান উপায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১০ বছর বয়সে শিশু সাঁতার শেখার উপযুক্ত হয়। আবার শিশুদের যদি দিনের ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে পানি থেকে দূরে রাখা যায়, তাহলে বিপদ এড়ানো সম্ভব। এই চিন্তা থেকে বেশ কয়েকটি জেলায় প্রতিরোধ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিআইপিআরবি। প্রতিষ্ঠানটি দেখেছে, ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে শিশুদের রাখলে ৮০ শতাংশ এবং সাঁতার শেখালে ৯৫ শতাংশ মৃত্যু কমানো সম্ভব।

সিআইপিআরবির প্রতিরোধ কার্যক্রম নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। সরকারের দিক থেকেও এ ধরনের প্রকল্প চালু করা যেতে পারে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিশুদের সাঁতার শেখার বিষয়ে আগ্রহী করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। বর্ষাকালে গ্রামীণ এলাকায় বাড়িঘরের চারপাশ যখন জলমগ্ন হয়, তখন বিপদের ঝুঁকি বেশি থাকে। বিশেষ করে এই সময়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালালে বহু শিশুকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে।

আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী, পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ পানিতে ডুবে যাওয়া। কিন্তু এই মৃত্যু স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় কম খরচে প্রতিরোধ যোগ্য, যা গবেষণায় প্রমাণ করেছে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)। ২০০৫ সাল থেকে সিআইপিআরবি পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গবেষণায় দেখা গেছে এক থেকে পাঁচ বছর বয়সীদের জন্য শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র ‘আঁচল’ পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধ করতে পারে ৮২ শতাংশ। অন্যদিকে ৬-১০ বছর বয়সী শিশুদের সাঁতার শিখিয়ে তা প্রতিরোধ করা যায় ৯৬ শতাংশ। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে এই দুই উদ্যোগকে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা।

সিআইপিআরবির ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর এবং ইন্টারন্যাশনাল ড্রাউনিং রিসার্চ সেন্টার এর ডাইরেক্টর ড. আমিনুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতি বছর ২৫ জুলাই পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস পালনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের সকল শ্রেডু পেশার মানুষ এ বিষয়ে অধিক সচেতন হবে এবং যথোপযুক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হবে। এবং এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পানিতে ডুবে মৃত্যুহার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস’ ঘোষণার জন্য জাতিসংঘ, সহযোদ্ধা আয়ারল্যান্ডসহ ৭৯টি সদস্য রাষ্ট্র এবং জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সম্মানিত রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধিকে কৃতজ্ঞতা জানায় সিআইপিআরবি।

https://dailysangram.com/post/451257