২৯ এপ্রিল ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:১০

লকডাউনে গণপরিবহন শ্রমিকদের দুর্দশা

লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। পরিবার নিয়ে এখন অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন কাটছে তাদের। শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে বা দিনমজুরদের জন্য সরকারের প্রণোদনার অর্থ থেকেও কোনো সহায়তাও তারা পাচ্ছেন না। নামমাত্র কিছু ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে- অভিযোগ করে গণপরিবহন চালুর দাবি জানিয়েছেন তারা।

সরজমিন দেখা গেছে, মহাখালি, মিরপুর ও গাবতলী এলাকায় রাস্তার পাশে যাত্রীবাহী শত শত বাস সারিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। মিরপুরে বসবাসরত কয়েকজন পরিবহন শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, পরিবহন সেক্টরের বেশির ভাগ শ্রমিকই দৈনিক কাজের ভিত্তিতে মজুরি পান। এই আয়েই তাদের সংসার চলে। সীমিত আয়ে যেখানে তাদের সংসার চালানোই কষ্টকর, সেখানে অর্থ সঞ্চয় করারও সুযোগও থাকে না।
এ অবস্থায় বাস বন্ধ থাকায় চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন তারা। হঠাৎ বন্ধ করে দেয়ায় বিকল্প কাজও খুঁজে পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে তারা সরকার থেকে যেমন সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছেন না, তেমনি মালিক পক্ষ ও শ্রমিক ফেডারেশন থেকেও কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না।

মিরপুর ১৪ নম্বরের বাসিন্দা আলিফ পরিবহনের হেলপার পারভেজ বলেন, লকডাউনে অফিস-আদালত, মার্কেট, দোকানপাট সব খোলা। কিন্তু বাস বন্ধ। এতে মানুষ আরো দুর্ভোগে পড়েছে। তাদের অফিসে যেতে সিএনজি রিকশা নিতে হয়। ভাড়াও বেশি লাগে। এরসঙ্গে আমরাও দুর্দশার মধ্যে পড়েছি। কাজ হারিয়ে বেকার অবস্থায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছি। ঘরে খাবার নাই। পকেটে টাকাও নাই। এ অবস্থায় কেউ আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছে না। না মালিকরা, না কোনো শ্রমিক সংগঠন। দুইদিন আগে মিরপুরে অল্প কিছু ত্রাণ দিয়েছে। কোনো আর্থিক সহায়তা পাইনি।

ইতিহাস পরিবহনের কন্ট্রাক্টর আলম বলেন, সরকার থেকে যা দেয়া হয় তা নেতারাই খেয়ে ফেলে। আর মালিকরা তো তাদের স্বার্থ নিয়ে চলে। গাড়ি চললে আয় হবে, না চললে না খেয়ে থাকতে হবে। তিনি বলেন, গত বছরও গাড়ি বন্ধ ছিল। সরকার থেকে টাকা দেয়া হয়েছে। ফেডারেশনের তহবিলে অনেক টাকা ছিল। কিন্তু আমাদের হাতে এক টাকাও পৌঁছায়নি। এ অবস্থায় আমাদের অর্ধাহারে-অনাহারে কাটাতে হয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমানে দেশের সড়ক পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে ৭০ লাখের বেশি শ্রমিকের রুটি-রোজগার জড়িত। কিন্তু করোনার প্রভাবে পরিবহন চলাচল বন্ধ ঘোষণার পর এসব শ্রমিক কার্যত বেকার হয়ে পড়েছেন। শ্রমিকরা বলছেন, তাদের কল্যাণ তহবিলের নামে প্রতিদিন যে অর্থ আদায় করা হয়, সেই টাকার সামান্য অংশও যদি তাদের জন্য ব্যয় করা হতো, তাহলে শ্রমিকরা উপকৃত হতো।

সূত্র জানায়, ব্যক্তিমালিকানাধীন সড়ক পরিবহন শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের বিপুল টাকা থাকলেও কোনো কাজে আসছে না। অন্যদিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের বিপুল অঙ্কের তহবিলও পরিবহন শ্রমিকদের হাতে পৌঁছায় না। দিনমজুরদের জন্য সরকার ঘোষিত ৭৬০ কোটি টাকার সহায়তাও পরিবহন শ্রমিকরা পাননি বলে অনেকের দাবি।

কয়েকজন শ্রমিক জানান, পরিবহন শ্রমিকদের একটি সংগঠন বিভিন্ন যানবাহন থেকে প্রতিদিন বড় অঙ্কের চাঁদা আদায় করে। শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য সংগঠনটির রয়েছে বিপুল টাকার ফান্ড। কিন্তু এই টাকা চলমান করোনা পরিস্থিতিতে উপার্জনহীন শ্রমিকদের কোনো কাজেই আসছে না। শ্রমিকরা যখন অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছেন তখন সরকার নিয়ন্ত্রিত শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে কোটি কোটি টাকা পড়ে আছে। এ তহবিল থেকেও অসহায় শ্রমিকরা কোনোরকম সহায়তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন তারা।

ওদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী বহন ও ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া নেয়ার শর্তে গণপরিবহন চালুর দাবি জানিয়েছেন বাস মালিক ও শ্রমিক নেতারা। গণপরিবহন চালুর বিষয়ে এরই মধ্যে বাস মালিক সংগঠনের নেতারা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবির কথা জানান। আর শ্রমিক নেতারা বিবৃতি দিয়ে গণপরিবহন চালুর দাবি জানিয়েছেন।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, লকডাউনে শুধু বাস ছাড়া অফিস-আদালত, দোকানপাট সবই চলছে। বাস বন্ধ। সাধারণ মানুষ বিকল্প পথে মাইক্রোবাস ভাড়া করে, ট্রাকে গাদাগাদি করে চলাচল করছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি আরো বাড়ছে। এর চেয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চলাচল করা ভালো। সেজন্য বাস মালিকদের পক্ষ থেকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের কাছে বাস চালুর দাবি জানানো হয়েছে।

প্রজাপতি পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, বাস বন্ধ থাকায় মালিকদের যেমন সমস্যা, তেমনি শ্রমিকদেরও সমস্যা। আমরা স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি নিশ্চিত করে বাস চালু করার দাবি জানাচ্ছি। আশা করি সরকার বিষয়টি বিবেচনায় আনবে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=272131&cat=3