২৯ এপ্রিল ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:০৯

হাসপাতালে রোগী কমছে, স্বস্তি

ঢাকার একটি স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুরাইয়া তাহমিন (১৬)। কয়েক মাস ধরে কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। গত সপ্তাহে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে মহাখালী কিডনি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির কয়েক দিনের মাথায় তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ঝুঁকি না নিয়ে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা গতকাল তাহমিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে পাঠিয়ে দেন। তাহমিনের স্বজনরা ঢামেকের করোনা ইউনিটে এসে কোনো রকম ঝক্কিঝামেলা ছাড়াই ভর্তি করান। এ দৃশ্য শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই নয়। ঢাকার করোনা ডেডিকেটেড প্রত্যেকটি হাসপাতালেই রোগীরা এখন সহজে ভর্তি হতে পারছেন।

করোনা শয্যা পেতে রোগীদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সব হাসপাতালেই রোগীদের চাপ কমছে। খালি পড়ে আছে অনেক শয্যা। এতে করে করোনা রোগীদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে।

নারায়ণগঞ্জ থেকে ৫৫ বছর বয়সী করোনা আক্রান্ত বাবাকে নিয়ে গতকাল দুপুরে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন শাহরিয়ার হোসেন। এম্বুলেন্স থেকে রোগী নামিয়ে হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে নেয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে কোনো সিরিয়াল ছাড়া ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায়। শাহরিয়ার বলেন, এপ্রিলের শুরুর দিকে আমার ভগ্নিপতিকে নিয়ে মুগদা হাসপাতালে এসেছিলাম। তখন অনেক চেষ্টা করেও সিট পাইনি। কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে পরে অনেক কষ্ট করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি সিটের ব্যবস্থা করতে পেরেছিলাম। কিন্তু এবার জরুরি বিভাগে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সিটের ব্যবস্থা হয়ে গেছে।

হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৫ই এপ্রিলের পর থেকে করোনা রোগীদের চাপ কমেছে। অথচ মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রোগী সামাল দিতে নির্ধারিত শয্যার চেয়ে অতিরিক্ত শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবুও প্রতিদিন শত শত রোগীকে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। একটি আইসিইউ শয্যার জন্য রোগীদের হাহাকার ছিল। অথচ এখন সাধারণ শয্যার পাশাপাশি অনেক আইসিইউ শয্যাও খালি পড়ে আছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত ঢাকায় করোনা ডেডিকেটেড সরকারি ১৩টি হাসপাতালে ৩ হাজার ৩৫২টি সাধারণ শয্যা ছিল। এরমধ্যে খালি শয্যার সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭৪৯টি। এসব হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা আছে ২৪৭টি। খালি আছে ৫৬টি শয্যা। একইভাবে ঢাকার করোনা ডেডিকেডেট বেসরকারি ২৭টি হাসপাতালে সাধারণ শয্যা আছে ২ হাজার ১৮৭টি। এরমধ্যে শয্যা খালি আছে ১ হাজার ৩৫৩টি। এসব হাসপাতালে আইসিইউ আছে ৫১২টি। খালি আছে ২৭০টি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে সাধারণ শয্যা খালি আছে ১০১টি। আইসিইউ শয্যা ৫টি। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে সাধারণ শয্যা খালি ২২টি। এই হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা খালি নাই। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে সাধারণ শয্যা খালি ৯৮টি। আইসিইউ শয্যা ৭টি। সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে সাধারণ শয্যা খালি ৬৫টি। আইসিইউ ২টি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাধারণ শয্যা খালি ২১৮টি। হাসপাতালটিতে আইসিইউ শয্যা খালি নাই। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাধারণ শয্যা খালি ২১৬টি। আইসিইউ শয্যা ১টি। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাধারণ শয্যা খালি ১৮০টি। আইসিইউ শয্যা ২টি। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে সাধারণ শয্যা খালি ৩৫৬টি। আইসিইউ ১০টি। সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে সাধারণ শয্যা খালি ৮টি। হাসপাতালটিতে আইসিইউ শয্যা নাই। জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে সাধারণ শয্যা খালি ১২৩টি। এই হাসপাতালেও কোনো আইসিইউ শয্যা নাই। টিবি হাসপাতালে সাধারণ শয্যা খালি আছে ১৮৫টি। আইসিইউ ৪টি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে সাধারণ শয্যা খালি আছে ১০০টি। আইসিইউ ৮টি। মহাখালি ডিএনসি কোভিড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা খালি আছে ৭৭টি। আইসিইউ ১৭টি।

আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাধারণ শয্যা খালি আছে ১১৯টি, আইসিইউ ১৮টি। আসগর আলী হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ৪৬টি, আইসিইউ ৬টি। স্কয়ার হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ৩০টি, আইসিইউ ৪টি। ইবনে সিনা হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ৮টি, আইসিইউ ১টি। ইউনাইটেড হাসপাতালে সাধারণ ৪২টি, আইসিইউ ১১টি। এভারকেয়ার হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ২৭টি, আইসিইউ ৮টি। ইম্পালস হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ২১০টি, আইসিইউ ৪৬টি। এএমজেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ৪৫টি, আইসিইউ শয্যা ২টি। বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ৩৫টি, আইসিইউ ২টি। জাপান ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ৪৯, আইসিইউ ৯টি। হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ৮২টি, আইসিইউ ৪টি। গ্রীন লাইফ হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ৮০টি, আইসিইউ ৯টি। ল্যাবএইড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ৫১টি, আইসিইউ ৭টি। পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ৪৫টি, আইসিইউ ২৩টি। এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ৪৬টি, আইসিইউ শয্যা ২১টি। ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ১০টি, আইসিইউ ১২টি। সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ১৭৪টি, আইসিইউ শয্যা ১৭টি। জয়নুল হক সিকদার ওমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ৫৭টি, আইসিইউ ১১টি। ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ৪২টি, আইসিইউ ৩টি। উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ৯টি, আইসিইউ ১০টি। হাইকেয়ার হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ১৩টি, আইসিইউ ৬টি। বেটারলাইফ হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ৩৬টি, আইসিইউ ১৬টি। ফেমাস হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ১৫টি, আইসিইউ ৮টি। কমফোর্ট হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ২৭টি, আইসিইউ ৫টি। বিআইএইচএস হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ৩৭টি, আইসিইউ ৯টি। সাজেদা হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ১৪টি, আইসিইউ ২টি। গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ৪টি খালি আছে। এই হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা খালি নাই।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=272138&cat=2