২ এপ্রিল ২০১৭, রবিবার, ১০:৩৯

পিডিবিএফ-এ যা হচ্ছে

নিয়োগ বেআইনি তারপরও পদোন্নতি

বিজ্ঞাপনে উল্লিখিত নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাকরির দরখাস্ত করেননি। পদের বিপরীতে উল্লেখ করা শর্ত অনুযায়ী অভিজ্ঞতার স্বপক্ষে কোনো প্রমাণও জমা দেননি। তারপরও চাকরি পান ‘পল্লী দারিদ্র্যবিমোচন ফাউন্ডেশন’ (পিডিবিএফ)-এর সাবেক ব্যবস্থাপক (কেন্দ্রীয় হিসাব) মদন মোহন সাহা। তার নিয়োগ নিয়ে এমন জালিয়াতির কথা বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের একাধিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে (অডিট রিপোর্ট) উল্লেখ রয়েছে। বিষয়টি সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচনা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু ব্যবস্থা নেয়া তো দূরে থাক উপরন্তু মদন মোহন দুই মাস আগে পিডিবিএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসাবে পদোন্নতি পান। এনিয়ে মন্ত্রণালয় ও পিডিবিএফে চলছে নানা কানাঘুষা। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে মদন মোহন সাহা মুঠোফোনে মানবজমিনকে বলেন, অবশ্যই আমি আবেদন করে নিয়োগ পেয়েছি। না হলে ১৮ বছর ধরে কিভাবে চাকরি করছি? তবে আমিসহ অনেকের বিরুদ্ধে অতীতে অডিট আপত্তি হয়েছিল। ৪৫ জনকে চাকরিচ্যুত করার কথা বলা হয়েছিল। তাদের কাউকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি। ওই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমাদের সময় নিয়োগ নিয়ে কিছু ভুলত্রুটি হয়তো হয়েছে। কারণ ওই সময় নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে মাত্র দুই জন দায়িত্ব পালন করেন। তাই কাগজপত্র এদিক সেদিক থাকতে পারে। এটাকে আমি অস্বীকার করছি না। নিয়োগ অবৈধ নিয়ে তার বিরুদ্ধে অডিট রিপোর্টের নিষ্পত্তি সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র আছে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আপনি অফিসিয়ালি লিখিত আবেদন করেন। তারপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ফাইল পাঠিয়ে সিদ্ধান্ত নেব। যদি তারা দিতে বলেন তাহলে আমি দেব। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের একাধিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে পিডিবিএফে নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়গুলো উঠে এসেছে। কয়েকটি অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে কর্মরত অতিরিক্ত পরিচালক (আইটি) শহীদ হোসেন সেলিম, অতিরিক্ত পরিচালক মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা আমিনুল হক এবং ভারপ্রাপ্ত এমডি মদন মোহন সাহা জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত এমডি মদন মোহন সাহা সম্পর্কে অডিট রিপোর্টে মন্তব্য কলামে বলা হয়েছে, আবেদনকারী মদন মোহন নির্ধারিত সময়ে আবেদন না করায় ওই আবেদনপত্র বিবেচনার সুযোগ ছিল না। এ কারণে তার নিয়োগ বেআইনি। অডিট রিপোর্টে সুপারিশ কলামে বলা হয়েছে, অবিলম্বে ওই নিয়োগ বাতিল, তার কাছ থেকে সব টাকা আদায় ও তাকে চাকরিচ্যুত করা হোক। নিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হোক। অডিট রিপোর্টে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ার জন্য আমিনুল হক এবং শহীদ হোসেন সেলিমের বিরুদ্ধেও একই ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। পিডিবিএফ সূত্রে জানা গেছে, নিরীক্ষা রিপোর্টগুলো সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২৯তম বৈঠকে আলোচিত হয়েছে। ওই বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তে বলা হয়, পিডিবিএফ নিয়ে অডিট রিপোর্টে বর্ণনা করা মন্তব্যের সঙ্গে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি একমত পোষণ করেছে। এসব অডিট রিপোর্টগুলো সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় (পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ) অডিটের মন্তব্য অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে এবং গৃহীত পদক্ষেপ আগামী ৩০ দিনের মধ্যে মহাহিসাব- নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিকে জানাবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এমন সুস্পষ্ট নির্দেশনার পরও বিষয়টি সম্পর্কে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ বা পিডিবিএফ। সর্বশেষ গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প অডিট অধিদপ্তর পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিবকে দেয়া এক চিঠিতে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৯তম বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তের অগ্রগতি বা জবাব চাওয়া হয়েছে। তবে নানা ছুঁতোয় বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখতে চাইছে পিডিবিএফ। পিডিবিএফ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ সংক্রান্ত সব অনিয়ম হয়েছে সাবেক এমডি এ কিউ সিদ্দিকীর আমলে। ওই সময় নিয়োগ অনিয়মে তার সঙ্গী ছিলেন তৎকালীন পরিচালক মোশারফ হোসেন ও ম্যানেজার বেগম রাজিয়া সুলতানা লুনা। এ বিষয়টি অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, উল্লেখযোগ্য অনিয়মের মাধ্যমে পিডিবিএফে ৪৫ জন কর্মকর্তা- কর্মচারীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব অনিয়মগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ নিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ সাতটি অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=59866&cat=3/