২৮ এপ্রিল ২০২১, বুধবার, ৮:৫৯

দৃষ্টিপাত

এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর পূর্ণাঙ্গ ঈদ উৎসব ভাতা প্রসঙ্গে

জাতীয় জীবনে অপরিসীম গুরুত্ব থাকায় শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড এবং শিক্ষককে আদর্শ মানুষ গড়ার কারিগর বলে অভিহিত করা হয়। মূলত শিক্ষকরা হচ্ছেন জাতির বিবেক। আর শিক্ষাই জাতীয় উন্নতির পূর্বশর্ত। সুশিক্ষার মাধ্যমে একটি জাতি এগিয়ে যায়, দেশ উন্নতির শীর্ষে পৌঁচে। সুশিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে যে জাতি যত বেশি অগ্রসর; সে জাতি তত বেশি উন্নত। সুতরাং এসব দিক বিবেচনায় নিলে শিক্ষার উন্নত করতে হলে যোগ্য, নিষ্ঠাবান ও আদর্শ শিক্ষকের বিকল্প নেই। আর যোগ্য শিক্ষক পেতে হলে তাদের উপযুক্ত সম্মানী, বেতন-ভাতা, পদোন্নতি, পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা ইত্যাদি দেয়া একান্তই প্রয়োজন।

বিগত জোট সরকার এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার কর্মচারীদের ৫০% এবং শিক্ষকদের ২৫% উৎসব ভাতার ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি ছিল বছরে দুই ঈদে দুইটি পূর্ণাঙ্গ ঈদ উৎসব অর্থাৎ বেতন স্কেলের ১০০% উৎসব ভাতা। শিক্ষক-কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতার দাবির যৌক্তিকতাও রয়েছে। বর্তমান সরকার প্রায় ১৩ বছর ধরে দেশ পরিচালনা করছে। স্বাভাবিকভাবে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা আশা করেছিলেন, এই সরকার তাদের বছরে দু’টি পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাস দেবে। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। তাই বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবিÑ ২০২১ সালের আসন্ন ঈদুল ফিতর থেকে পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাস প্রদানে উদ্যোগ নেবে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শিক্ষক ও কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাসের ব্যবস্থা করবে সরকার।

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশের শিক্ষকদেরও বেতন-ভাতার সরকারি অংশ, পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা পাওয়া তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার। আমরা জানি, বর্তমান সরকারের অনুসৃত নীতির লক্ষ্য, দেশের সব নাগরিককে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা। সমাজ থেকে নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও শিক্ষাকে উৎপাদনমুখী করে তোলা, কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ঘটানো এবং জনশক্তিকে শিক্ষিত, যোগ্য ও পেশাগত শিক্ষায় দক্ষ করে, জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করা।
ইতোমধ্যে বিগত সরকার ও বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে। তাই নীতিগত দিক থেকে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বছরে পূর্ণাঙ্গ দু’টি ঈদ বোনাসের দাবি শিক্ষা বিষয়ে সরকারের অনুসৃত নীতি ও লক্ষ্যের সাথে সাংঘর্ষিক নয় বরং পরিপূরক।
সুতরাং সরকারের অনুসৃত নীতি বাস্তবায়ন করতে হলে ২০২১ সালের ঈদুল ফিতরের আগেই এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায়সঙ্গত পূর্ণাঙ্গ ঈদ উৎসব ভাতা প্রদানসহ অন্যান্য যুক্তিসঙ্গত দাবি-দাওয়া মেনে নেয়া।

কেননা শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিকভাবে অভাব-অনটনে, কষ্টে রেখে উপযুক্ত সুশিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সুতরাং বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা ও অন্যান্য ন্যায়সঙ্গত দাবি-দাওয়া মেনে জাতীয় জীবন থেকে অনগ্রসরতা, দরিদ্রতা, কুসংস্কার ইত্যাদি দূর করার লক্ষ্যে তাদের উৎসাহ দেয়া সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। এই প্রেক্ষাপটে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাই আমরা। হ
লেখক : প্রাক্তন কলেজ শিক্ষক ও সাবেক সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

https://www.dailynayadiganta.com/post-editorial/578731/