২ এপ্রিল ২০১৭, রবিবার, ১০:৩৪

মংডুর লুদাইংয়ের দুই শতাধিক রোহিঙ্গা আটক

আরাকানে রোহিঙ্গাদের ওপর ফের নির্যাতন শুরু যৌথবাহিনীর

ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধিদের কাছে মিয়ানমার সেনাসদস্যদের নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছেন রোহিঙ্গারা : নয়া দিগন্ত
মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিং অং হু লাই গত সোমবার নেইপিডোতে বার্ষিক সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের ভাষণে রোহিঙ্গাবিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ করার পর দেশটির সেনাবাহিনী আবার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এতে গত শুক্রবার থেকে আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর আবার নতুন করে শুরু হয়েছে নির্যাতন। অপর দিকে গত বৃহস্পতিবার আরকার রাজ্য সফরকালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিনিধিদের প্রশ্নের জবাবে নিজদের ওপর সেনাসদস্যদের বর্বর নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনাদানকারী বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা মহিলাকে বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) আটক করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন রোহিঙ্গারা। সূত্র জানিয়েছে, গত শুক্রবার (৩১ মার্চ) আরকান রাজ্যের মংডু জেলার উত্তরাঞ্চল লুদাইং এলাকায় গ্রাম ঘেরাও করে শত শত রোহিঙ্গাকে আটক করেছে সেনা ও বিজিপির সম্মিলিত যৌথ বাহিনী। আটককৃত নির্দোষ রোহিঙ্গাদের ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে। এই সময় বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নারীকে গুমও করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, গত শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় যৌথ বাহিনীর প্রায় ৩০০ সদস্য লুদাইং এলাকাটি ঘেরাও করে। পরে চিরুনি অভিযানের মতো করে রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষদের আটক করে। কোনো কারণ দর্শানো ব্যতীত আটক রোহিঙ্গাদের ব্যাপক মারধর করছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা প্রত্যদর্শীরা জানিয়েছেন, হঠাৎ করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী লুদাইং গ্রামটি চার দিক থেকে ঘোরাও করে। পরে রোহিঙ্গাদের যাকে যেখানে পায়, সেখানে আটক করে। আটকের পর রোহিঙ্গাদের কিল, ঘুষি ও মাটিতে ফেলে পায়ের বুট ও লাথি দিয়ে নির্দয় নির্যাতন করে। প্রত্যদর্শীরা আরো জানিয়েছেন, এ সময় রোহিঙ্গা নারীদের যৌন হয়রানিও করেছে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। পরে উক্ত লুদাইং এলাকা থেকে দুই শতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করে নিয়ে যায়। এদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে।
রোহিঙ্গাদের মতে, সেনাপ্রধান জেনারেল মিং অং হু লাই ‘রোহিঙ্গারা নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী নয়, বাঙালিদের রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই’ এমন দাবি করার পর আরাকান রাজ্যের পরিস্থিতি অত্যন্ত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য। গত শুক্রবার থেকে আবার নতুন করে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করছে মিয়ানমারের যৌথবাহিনী।
এ দিকে আরাকানের রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনী কর্তৃক সৃষ্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ওঠার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিন পরিদর্শন করতে আরাকান সফরে করে। প্রতিনিধিদলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন বিশেষ দূত, বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকর্মী রয়েছেন। গত বুধবার প্রতিনিধিদলটি আরাকানের স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। গত বৃহস্পতিবার মংডু জেলার বিভিন্ন রোহিঙ্গা পল্লী পরিদর্শনে যান দলটি। বিশেষ করে নাইসাপ্রু ও সাতঘর পাড়ার রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেন। এ সময় সেনাবাহিনীর দেয়া আগুনে রোহিঙ্গাদের ভস্মীভূত বাড়িঘরের ধ্বংসাবশেষের ছবিও রুলে নেয় দলটি।
সেনা তাণ্ডবে সবচেয়ে বেশি তিগ্রস্ত ও স্পর্শকাতর স্থান ছোট গজিবিল ও বড়গজি বিলে যেতে দেয়া হয়নি প্রতিনিধিদলটিকে।
এতে উক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধিদের প্রশ্নের জবাবে নিজদের ওপর সেনাসদস্যদের বর্বর নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনাকারী বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা মহিলাকে বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) আটক করে নিয়ে যায়।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/208826