২৭ এপ্রিল ২০২১, মঙ্গলবার, ৮:৫২

করোনা : একটি মর্মান্তিক মৃত্যু আমার অভিজ্ঞতা....

আলী আহমাদ মাবরুর : আমার এক আত্মীয় অতি সম্প্রতি করোনায় মারা গেলেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৪৭ বছর। ভদ্রলোকের তিনটি সন্তান। প্রথম দুটো মেয়ে হওয়ার পর অনেক বছর পর মাত্র গত বছরে আল্লাহ তাদেরকে একটি পুত্র সন্তান দিয়েছিলেন। গত বছর করোনার শুরুর আগ দিয়ে তার বাসায় আকীকার আয়োজন হয়েছিল। সেখানে যাওয়ার সুযোগও হয়েছিল। আজ সেই দেড় বছরের শিশুসহ দুই মেয়েকে এতিম করে তিনি চলে গেলেন। এরকম বহু মানুষের মৃত্যুই করোনায় হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে আমার একটি অভিজ্ঞতা আমি শেয়ার করতে চাই। হয়তো তাতে কিছু মানুষের উপকার হবে।

ভদ্রলোকের শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার পর তাকে বাসায় রেখেই চিকিৎসা দেয়া হয়। তিনি ব্যবসা করতেন। খুব বড়োলোক বলা যাবে না। আবার খুব অভাবীও নয়। একটি পর্যায়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে বাসায় অক্সিজেন দিতে শুরু করলেন। বড় একটি ১৫ লিটারের অক্সিজেন কেনা হলো। অক্সিজেন দেয়া শুরু হলে তিনি বেশ স্বস্তিও বোধ করলেন। কিন্তু তারপর হুট করেই সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ হয়ে গেলো। আধাঘন্টা থেকে এক ঘন্টাও যায়নি।

অথচ এত বড় সিলিন্ডারে তাকে যেই মাত্রায় অক্সিজেন দেয়া হচ্ছিলো তাতে দিব্যি অনেকটা সময় যাওয়ার কথা। পরে চেক করে দেখা গেলো, সিলিন্ডারের ভেতর যে পরিমাণ গ্যাস থাকার কথা, তার তিনভাগের একভাগও ছিল না। গ্যাসের পরিমাণ নিয়েও ভয়ংকর জালিয়াতির শিকার হলাম আমরা তাও একেবারে শুরুতেই।
অক্সিজেন শেষ হওয়ায় তার অবস্থা যেন হঠাৎ করেই আরো বেগতিক হয়ে গেলো। তখন তাকে নিয়ে যাওয়া হলো করোনার জন্য ডেডিকেটেড কুর্মিটোলা হাসপাতালে। সেখানে তিনি বেশ কয়েকদিন থাকলেন। নরমাল বেডেই থাকলেন। তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছিলো না। কিন্তু অবনতিও হচ্ছিলো না। অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রাও আহামরি ওঠানামা করছিল না। কিন্তু তিনদিন পর এক রাতে তার হার্টে সমস্যা আছে বলে পরিবারকে জানানো হয়। ডাক্তারের তরফ থেকে এমনও বলা হয় যে, তার একটি মাইনর হার্ট এ্যাটাক হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তাকে আইসিইউ সাপোর্ট দেয়া দরকার। কিন্তু ডাক্তার নিজেই জানান যে, কুর্মিটোলা হাসপাতালে কোনো আইসিইউ খালি নেই।

ডাক্তার নিজেই উত্তরার রেডিকেল হাসপাতালের খোঁজ দেন। বলেন, ঐ হাসপাতালে তিনি নিজেও বসেন। সেখানে আইসিইউ একটি বেড খালিও আছে। রোগীকে যেন সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। কুর্মিটোলার চিকিৎসা খরচ কম ছিল। তবে, পেসেন্টের এটেনডেন্টরা স্বস্তিতে ছিলেন না। প্রাইভেট হাসপাতালে যেভাবে ডাক্তারের তদারকি হয়, হয়তো অনেকটা সেরকম কিছু আশা করছিলেন বলেই বোধ হয়, তারাও মনে করলেন প্রাইভেট হাসপাতালে গেলে সবদিক দিয়েই ভালো হবে।

তাই ডাক্তারের কথায় সায় দিয়ে রোগীকে সেই অবস্থায় এ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে আসা হলো উত্তরার সেই হাসপাতালে। আমি সেখানে গিয়ে জয়েন করলাম। রোগীকে দেখলাম। রোগী তখনো নীচতলায় ইমারজেন্সিতে বসা। তাকে পূর্ণ সচেতনও দেখলাম। তিনি লুঙ্গি পরেছিলেন। তবে লুঙ্গির গিটটা দুর্বল ছিল। আমি সালাম দেয়ার সাথে সাথে হাত তুলে জবাব দিলেন। লুঙ্গির গিটটাও নিজেই শক্ত করে বাঁধলেন। অর্থাৎ এই পরিমাণ সচেতনতা তার মধ্যে ছিল।

রোগীকে দেখে বাইরে এসে দেখি তুলকালাম অবস্থা। সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের এ্যাডমিন অফিসার বলছেন, ওনার এখানে রাখা যাবে না। আমরা বললাম, ‘আপনাদের এখানে আইসিইউ খালি আছে-এই গ্যারান্টি পাওয়ার পর আমরা হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে এখানে এসেছি। তিনি বললেন, আইসিইউ বেড এখনো খালি আছে। তবে, ওনার হাইফ্লো লাগবে। হাইফ্লো সাপোর্ট দেয়ার মতো চারটি বেড আছে আমাদের। চারটাই বুকড। সো আমরা কিছু করতে পারছি না।’

আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। কুর্মিটোলায় সিট পাওয়া সোনার হরিণ। আমরা সেই সোনার হরিণ ছেড়ে এসে এখন কোন বিপদে পড়লাম। ডাক্তারকে কল দেয়া হলো। সে ডাক্তারকেই কল দিলাম যিনি আমাদেরকে উত্তরা হাসপাতালের ঠিকানা দিয়েছিলেন। তিনি ফোন ধরছিলেন না। খুবই অসহায় অবস্থা। তখন হাসপাতালের এ্যাডমিন অফিসার আমাদেরকে বললেন, “উত্তরাতেই শিন শিন জাপান আরেকটি হাসপাতাল আছে। সেখানে আমরা কথা বলছি। ওখানে একটা হাইফ্লো খালি আছে। ওরা সাপোর্ট দিতে পারবে। আপনারা চলে যান।”

ফিসফিস করে তিনি আরো বললেন, “সমস্যা একটা আছে। হাসপাতালটি কভিড চিকিৎসার জন্য নয়। আমরা একই এলাকায় আছি। তাই তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ আছে। আপনার রোগীর স্বার্থেই আমরা তাকে সেখানে এ্যারেঞ্জমেন্ট করে দিচ্ছি।”

রোগীর সাথে যারা এটেনডেন্ট তারা দেখছিলেন যে রোগীর প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই তারা খড়কুটো আঁকড়ে ধরতে চাইছিলেন। তারা যেকোনো স্থানেই নিতে রাজি। আমি মানলাম না। আমি এ্যাডমিন অফিসারকে বললাম, ‘আমাদেরকে পাঠানো হলো আপনার কাছে। আপনি এ্যাডমিট করালেন না। এখন আবার পাঠাচ্ছেন একটি নন-কভিড হাসপাতালে। কভিড হাসপাতালে কোনো সমস্যা হলে আমরা অন্তত কারো কাছে প্রতিকার চাইতে পারবো। আর যে হাসপাতালটি সরকারই কভিডের চিকিৎসার জন্য অনুমোদন দেয়নি, সেখানে যদি যাই, আর রোগীর কিছু একটা হয়ে যায়, তখন তো উলটো আমরাই ফলস পজিশনে পড়ে যাবো।’

এ্যাডমিন অফিসার আমার কথায় ভীষণ রিএ্যাক্ট করলেন। বললেন, “ভাই আপনাদের রোগী আপনারা ব্যবস্থা করেন। আমি এখানে রাখতে পারবো না। আপনাদের হেল্প করতে চাইলাম। আপনি উল্টো বেশি বুঝলেন। আপনারা যা ভালো বুঝেন, করেন।”

এ্যাডমিন অফিসারের সেই রুদ্রমূর্তি দেখে উল্টো রোগীর সাথে লোকেরা আমার ওপর রুষ্ট হলো। কেন আমি এভাবে বলতে গেলাম। তারা আবার এ্যাডমিন অফিসারকে ঠাণ্ডা করতে শুরু করলো। আমিও চুপ হয়ে গেলাম।

এ্যাডমিন অফিসার নরম হলেন। এ্যাম্বুলেন্স ঠিক করা হলো। উত্তরার ১২ সেক্টরের সেই হাসপাতাল থেকে ১১ সেক্টরের শিন শিন জাপান হাসপাতালে আসার জন্য আমাদেরকে ঐ এ্যাম্বুলেন্সকে ৪ হাজার টাকা দিতে হয়েছিল। যাহোক, যেহেতু বিপদে পড়েছি তাই সব মিলিয়ে সকালে কভিড হাসপাতাল কুর্মিটোলায় থাকা রোগীকে বিকেল ৪টার দিকে ভর্তি করা হলো একটি নন-কভিড হাসপাতালে। আস্তে আস্তে আরো কিছু সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা সামনে চলে আসলো। এ্যাডমিন অফিসারের তরফ থেকে বলে দেয়া হলো, যেহেতু হাসপাতালটি নন কভিড, তাই আমরা যেন সেখানে না বলি যে রোগীর করোনা হয়েছে। আমরা ভর্তির স্বার্থে চুপ হয়ে থাকলাম। নন-কভিড হাসপাতালে যখন আমরা রোগীকে নিয়ে নামালাম, তখন তার স্যাচুরেশন ছিল ৭২-৭৮ এর মতো। ভর্তির পর তাকে ওপরে নিয়ে যাওয়া হলো। হঠাৎ খবর পেলাম, অক্সিজেন লেভেল নাকি ৩৮ এ নেমে এসেছে। কী একটা ভয়ংকর অবস্থা।

এই হাসপাতালের লোকজন হাই ফ্লো দিয়েছিলেন বলে দাবিও করলেন। আমরা অবাক হলাম। হাই ফ্লো ছাড়াই যেখানে ৭২-৭৮ হলো, সেখানে দেয়ার পর কী করে ৩৮ হয়!! যাহোক কিছু সময় পর শুনলাম ৬৬তে উঠেছে। আমরা স্বস্তিবোধ করলাম। হয়তো আস্তে আস্তে একটা ভালো অবস্থায় চলে যাবে। সন্ধ্যার পর রাত সাড়ে ৭টা অবধি এই অবস্থা দেখে আমরা যে যার বাসায় চলে গেলাম।

এখানে উল্লেখ্য, এই হাসপাতালে ভর্তি বাবদ নগদ ১১ হাজার টাকা দিতে হয়েছিল। ভর্তির পরপরই হাসপাতালের ফার্মেসী থেকে ২৭ হাজার টাকার ওষুধও কিনতে হয়েছে। অর্থাৎ নন-কভিড হাসপাতালে আসার পর চিকিৎসা শুরু হওয়ারও আগে আমাদেরকে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা খরচ করতে হলো।

শুধু তাই নয়, চিকিৎসা নিয়েও নানা জটিলতায় পড়লাম। আমাদেরকে একটি দামী ইনজেকশন কিনে আনতে বলা হলো। তখনই মূলত সমস্যাটি অনুভব করলাম। যেহেতু উত্তরার প্রথম হাসপাতালের এ্যাডমিন অফিসারের অনুরোধে আমরা এই হাসপাতালে রোগীকে ভর্তি করার সময় করোনার বিষয়টি বলিনি, তাই ওনারা যদি এমন কোনো ওষুধ বা ইনজেকশন রেফার করেন যা এর আগে বিগত তিনদিনে কুর্মিটোলা হাসপাতালে থাকতে দেয়া হয়েছে, তাহলে কী হবে? কোনো ডোজ ডবল পড়ে গেলে আবার নতুন কী সমস্যা হয় কে জানে?’ নানা রকম দ্বিধাদ্বন্দ্বে থেকে একটা পর্যায়ে আমরা ডাক্তারকে সবই খুলে বললাম। ডাক্তার বললেন, “আপনারা না বললেও আমরা রোগীকে দেখেই যা বোঝার বুঝেছি।”
যাহোক আমরা বাসায় ফিরে আসলাম। এরপর রোগীর শ্যালক রোগীর কাছে দেড় মিনিটের জন্য যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি জানালেন যে, রোগী তাকে অনুরোধ করেছেন, এই হাসপাতাল থেকে যেভাবে পারে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে। এখানে থাকলে তিনি নাকি মারা যাবেন।
শ্যালক আমাদেরকে আরো জানালো, এখানে আদৌ কোনো হাই ফ্লো আছে কিনা সন্দেহ। রোগীর মুখে ও নাকে ম্যানুয়ালি অক্সিজেন দিয়ে তারা জোড়াতালি দিয়ে একটি হাইফ্লো সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করছে। আমি অবশ্য একথা শুনে অবাক হইনি। কারণ নন-কভিড হাসপাতালে জেনুইন হাই ফ্লো সাপোর্ট থাকারও কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ আমি খুঁজে পাইনি।

রোগী এই হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করার পর আত্মীয় স্বজন যারা বাইরে ছিল তারা সবাই যে যার মতো সিট অনুসন্ধানে নেমে পড়লো। শমরিতা হাসপাতালের কভিড সেকশনে একটি বেড পাওয়া গেলো। রুম বুক করতে বলা হলো। শমরিতা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বললো ৫০ হাজার টাকা নগদ জমা না দিলে তারা বুকিং দেয় না। রোগীর স্বজনেরা একদিকে বিকাশ থেকে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করলো আর অন্যদিকে উত্তরার এই নন-কভিড হাসপাতাল থেকে রোগীকে বের করার জন্য এ্যাম্বুলেন্সও জোগাড়ের যুদ্ধে নামলো। দুঃসহ একটি সময় পার করছিল সবাই।
উল্লেখ্য, তিন ঘন্টা রাখার পর উত্তরার এই নন-কভিড হাসপাতালের ডাক্তাররাও ফ্যামিলিকে এর মধ্যে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, রোগীর যে মাত্রায় হাইফ্লো সাপোর্ট দরকার তারা তা দিতে পারছেন না। ইচ্ছে করলে আমরা রোগীকে অন্য কোথাও শিফট করতে পারি। উত্তরার এই হাসপাতালে তিন ঘন্টায় ৯৩ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করে শমরিতায় যখন রোগীকে নেয়া হয়, তখন সেখানকার ডাক্তাররা দেখেই বলেছেন, অলরেডি রোগী মারা গেছেন। দু একজন ডাক্তার অবশ্য বললেন, ‘এখনো মরেনি, তবে তাকে নিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।’ যাহোক, শমরিতায় নেয়ার কিছু সময় পরই রোগীকে অফিসিয়ালি মৃত ঘোষণা করা হয়।

এই অভিজ্ঞতাটি শেয়ার করলাম মূলত, ভিন্ন একটি বাস্তবতা পরিষ্কার করার জন্য। পরে স্টাডি করে বুঝেছি, আমরা মূলত একটি সিন্ডিকেটেড দালালদের হাতে পড়েছিলাম। ডাক্তার থেকে শুরু করে ওয়ার্ডবয় পর্যন্ত সবাই সিন্ডিকেটের অংশ। নতুবা ডাক্তার কেন কুর্মিটোলা থেকে বের করে উত্তরার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠাবেন? সেই হাসপাতাল তো আমাদের এ্যাডমিশনই দিলো না। তাদের সাথে এলাকার অন্য হাসপাতালের এ্যারেঞ্জমেন্ট আসলে সিন্ডিকেট, আর কিছু না। একটা এ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারও এর বাইরে না। রোগী বাঁচলো না মরলো তা নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। কভিড হাসপাতাল না হওয়ার পরও এই সিন্ডিকেটের কারণে নন-কভিড হাসপাতালে ক্রিটিকাল রোগীকে নিয়ে তামাশা করা হলো। হাসপাতালগুলোর সামনে সিলিন্ডারের ডিপো। অথচ সিলিন্ডার পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তাতে যথাযথ পরিমাণে গ্যাস থাকে না। উত্তরার যে হাসপাতালে আমরা ছিলাম, তার বাইরের সিলিন্ডারের দায়িত্ব যার ছিল, তাকে দেখে রীতিমতো কিশোর গ্যাংয়ের মতো লাগে। পুরোটা হাসপাতাল চলছে এই সিন্ডিকেটের ওপর। তারা যার কাছ থেকে যা পারে ইনকাম করে নিচ্ছে।

আমরা সরকারের সমালোচনা করি। হাসপাতাল উধাও, দুই বছরেও পর্যাপ্ত নরমাল বেড, আইসিইউ, সিডিইউ, হাই ফ্লো- তারা ব্যবস্থা করতে পারেনি- এ সকল অভিযোগে সরকারের পদত্যাগও দাবি করি। এগুলো ঠিকই আছে। কিন্তু আমাদের নিজেদের মাঝে দানবীয় কায়দায় নীতিহীনতা, দুর্নীতি আর টাকার লোভ যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে- তা নিয়ে কোনো কথা বলিনা। শিক্ষিত ডাক্তার আর অশিক্ষিত এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার একই রকমের জালিয়াতি করছে। এক ঘন্টায় তিনটি প্রতিষ্ঠান আর কিছু ব্যক্তি একটি রোগীর পরিবার থেকে দুই লাখের বেশি টাকা ছিনিয়ে নিলো। টাকা না হয় গেলোই। কিন্তু রোগীটাও ছিনিয়ে নিলো।

দেড় বছরের শিশুসহ তিনটি বাচ্চাকে এতিম করে দিলো। ৩৬ বছরের স্ত্রীকে বিধবা করে দিলো। এর জবাব কার কাছে চাইবো? এক শ্রেণির অপেশাদার, লোভী আর টাকাখোর লোকদের কাছে গোটা চিকিৎসা সেক্টর জিম্মি হয়ে আছে। আমি যে অভিজ্ঞতা বললাম, তাতে আমাদের অনেক গ্যাপ চোখে পড়তে পারে কিন্তু বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের আনাচে কানাচে প্রতিদিন এরকম বীভৎস অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয় অসংখ্য নিরীহ মানুষ। প্রশাসনের নিরন্তর সমালোচনার মুখে স্থানীয় এইসব দালাল আর সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের গল্প হয়তো আড়ালেই থেকে যায়।

https://dailysangram.com/post/450936