২৬ এপ্রিল ২০২১, সোমবার, ২:৫০

সড়কে সেই চিরচেনা যানজট

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত ‘লকডাউন’র ১২তম দিনে রোববার দোকানপাট ও শপিংমল খুলেছে। এ কারণে সকাল থেকেই রাজধানীর সড়কে মানুষের চলাচল ও ভিড় ছিল। অনেক সড়কে চিরচেনা যানজটও লক্ষ করা গেছে। সরকারের নানামুখী প্রচার ও কঠোরতার পরও স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে মানুষের চরম উদাসীনতা লক্ষ করা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, দোকানপাট, মার্কেট ও শপিংমল খুলে মালিক-কর্মচারীরা ঝাড়ামোছার কাজ করছেন। এ অবস্থার মধ্যে কোনো ক্রেতা এলে কষ্ট করে সামলাচ্ছেন তারা। তবে ক্রেতাদের উপস্থিতি অনেক কম ছিল। বিক্রেতারা বলেন, গণপরিবহণ বন্ধ। কাছের মানুষ যারা, তারাই আসবে। দূরের ক্রেতারা আসতে পারবে না। বাস চলাচল শুরু হলে হয়তো বেচাবিক্রি জমে উঠবে।

যাত্রাবাড়ী মোড়ে সকাল ১০টার দিকে শত শত মানুষকে পরিবহণের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। গাদাগাদি করে ভ্যানে করে অনেকেই গন্তব্যস্থলে যান। একই চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর সুপারমার্কেটের সামনে। সেখানে রীতিমতো যানজটের সৃষ্টি হয়। গুলিস্তান ফিরে গেছে পুরোনো রূপে। ফুটপাতে পসরা সাজিয়েছেন বসেছেন হকাররা।

যাত্রাবাড়ীর তাজ সুপারমার্কেটে শতাধিক দোকান খোলা দেখা গেছে। তবে ক্রেতার সংখ্যা কম। সেখানকার বিক্রয়কর্মীরা বলেন, ‘টানা ১১ দিন বন্ধের পর দোকান খুলেছে। এখনো ঈদের বাকি অনেক দিন। আশা করছি বাকি দিনগুলোতে ক্রেতা পাব।’ বঙ্গবাজার এনেক্স সুপারমার্কেটে দেখা যায়, দোকানপাট সব খোলা, কিন্তু ক্রেতা নেই। এটি পাইকারি বাজার। বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা গেছে। তারা মাস্ক পরে আছেন। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করছেন। ক্রেতারাও যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাকাটা করেন, সে ব্যাপারে তারা সতর্ক। এছাড়া মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, আজিমপুর, গুলিস্তান, পুরানা পল্টন এলাকা, মগবাজার, হাতিরঝিল, বাড্ডা, প্রগতি সরণি এলাকার সড়কেও ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, সিএনজি চালিত অটোরিকশার ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।

শিবচর (মাদারীপুর) থেকে প্রতিনিধি জানান, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌর্নুটে সীমিত আকারে ফেরি চলাচল করায় যাত্রী চাপ রয়েছে প্রচণ্ড। স্বল্প সংখ্যক ফেরি দিয়ে কোনো মতে জরুরি পরিবহণ পারাপার নির্বিঘ্ন রাখতে হচ্ছে বিআইডব্লিউটিএকে। ঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কে কেন্দ্র করে যাত্রীদের সঙ্গে ইজারাদারের লোকজনের মারধরের ঘটনা ঘটেছে। যাত্রী চাপ বাড়ায় ২টি ডাম্ব ফেরি যুক্ত হয়ে ফেরির সংখ্যা বাড়িয়ে ৭ করা হয়েছে। গণপরিবহণ বন্ধের সঙ্গে ফেরি চলাচল সীমিত, লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় গন্তব্যে পৌঁছাতে গিয়ে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির পাশাপাশি প্রত্যেক যাত্রীকেই গুনতে হয়েছে কয়েকগুণ ভাড়া।

যাত্রীরা এ ঘাট ও ঘাট হেঁটে গিয়ে প্রখর গরমে রোজার মধ্যে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহান। যাত্রী চাপ সামাল দিতে গিয়ে ঘাট এলাকায় পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিসিকে কাজ করতে দেখা গেছে। তবে কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই ছিল না। লকডাউনের পর থেকে লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ থাকায় ফেরিগুলোতে যাত্রী চাপ ব্যাপক বেড়েছে। মাত্র ৭টি ফেরি দিয়ে জরুরি পরিবহণ পারাপার করা হচ্ছে।

নড়াইল থেকে আসা যাত্রী আহসান মিয়া জানান, ফেরি ঘাটের কাছাকাছি এক শ্রেণির লোক ব্যারিকেড দিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ার কারণে ঘাটে ইজারাদারের লোকজন যাত্রীদেরকে মারধর করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহনে বাড়তি ভাড়া দিয়ে ঘাটে আসেন যাত্রীরা। ইজিবাইক, সিএনজি, মোটরসাইকেলে বরিশাল থেকে ৫শ থেকে ৬শ টাকা, গোপালগঞ্জ ৫শ টাকা, খুলনা এক হাজার ৭শ টাকা, মাদারীপুর থেকে ২শ’ টাকা, বাগেরহাট থেকে ৬শ’ ৫০ টাকা অর্থাৎ প্রতিটি যানবাহনেই কয়েকগুণ ভাড়া আদায় করা হয়। এদিন ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের চাপও ছিল।

নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রতিনিধি জানান, লকডাউনেও প্রতিদিন শীতলক্ষ্যার দু’পাড়ের কয়েক লাখ মানুষ পারাপার হচ্ছেন গাদাগাদি করে। যাদের বেশির ভাগের মুখে মাস্ক দেখা যায় না। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে এভাবে নদী পাড়ি দেওয়ায় করোনা সংক্রমণ আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। সরেজমিনে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ সেন্ট্রাল খেয়াঘাটে সবচেয়ে বেশি ভিড় থাকে সকাল ৭টা থেকে ১০টা এবং বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। একই সময়ে সেন্ট্রাল খেয়া ঘাট ছাড়াও হাজার হাজার মানুষের ভিড় থাকে বন্দর ও একরামপুর খেয়া ঘাট, টানবাজার ঘাট, বরফ কল ঘাট, নবীগঞ্জ ঘাট, চিত্তরঞ্জন ঘাটসহ কমপক্ষে ১৪টি খেয়া ঘাটে। সকালে এসব ঘাট দিয়ে শহরে আসেন কর্মজীবী মানুষেরা। নির্দিষ্ট সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছতে স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব মানার বিষয়টি মনে রাখার মতো সময় তাদের থাকে না। বিশেষ করে সকালে নদীর ওপারে বন্দর সেন্ট্রাল খেয়া ঘাটের জেটিতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। অনেকটা বাধ্য হয়েই ট্রলারে ও নৌকায় গাদাগাদি করে উঠতে হয় তাদের। নৌকাতে ১০ জনের বেশি যাত্রী ওঠানোর ব্যাপারে বিধিনিষেধ থাকলেও পারাপার হয় ২৫ থেকে ৩০ জন। ট্রলারগুলোতে সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ জন যাত্রী বহনের কথা থাকলেও পারাপার হচ্ছেন ৭০ থেকে ৮০ জন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/415505