২৫ এপ্রিল ২০২১, রবিবার, ২:৩৫

দোকান-শপিং মল খুলছে আজ

দুশ্চিন্তার নাম মুভমেন্ট পাস

মুভমেন্ট পাসের শর্ত শিথিল ও ভিড়ভাট্টা এড়াতে সময় বাড়িয়ে রাত ১০টা করার দাবি ব্যবসায়ীদের

ক্রেতা কিংবা বিক্রেতা, ঘর থেকে বেরিয়ে দোকান বা শপিং মলে (বিপণিবিতান) পা রাখতে চাইলে পকেটে থাকা চাই পুলিশের ‘মুভমেন্ট পাস’। এবারের লকডাউনে পুলিশের ‘নতুন আবিষ্কার’ এই মুভমেন্ট পাস যাচাই করার জন্য বিপণিবিতানের সামনে পুলিশি পাহারা বসানোরও নাকি রয়েছে পরিকল্পনা! অ্যাপসের মাধ্যমে মুভমেন্ট পাস দেওয়া হচ্ছে মাত্র তিন ঘণ্টার জন্য। আর বিক্রেতাকে দোকানে থাকতে হবে কমপক্ষে সাত ঘণ্টা। শেষ চার ঘণ্টার ফায়সালা কী হবে এখনো অজানা। অন্যদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিপণিবিতানে ঢুঁ মারতে গেলেও যানবাহন স্বল্পতায় ক্রেতাকে হতে হবে গলদঘর্ম। বিক্রেতারাও দোকান-শপিং মল পর্যন্ত কিভাবে পৌঁছবেন, তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কার মেঘ। এ রকম ‘কঠিন’ শর্ত জারি রেখে আজ রবিবার খুলছে সারা দেশের দোকানপাট আর বিপণিবিতান।

এদিকে নানা বিপত্তি মাথায় নিয়ে গতকাল শনিবার দিনভর দোকান খোলার প্রস্তুতি নিয়েছেন মালিকরা। বন্ধ থাকা দোকানের পরিচ্ছন্নতা, ফ্লোর ঘষামাঝা, দোকানের বাড়তি মালপত্র সরিয়ে অতিরিক্ত জায়গা তৈরি করার মতো কাজগুলো সেরেছেন তাঁরা। ঈদের জন্য নতুন করে সজ্জার বিষয়টিও ছিল তাঁদের পরিকল্পনায়। ঈদের বিকিকিনিও জম্পেশ হবে, এমনটাই দোকান মালিকদের আশা। তাঁরা জানান, মানুষ কেনাকাটার জন্য মুখিয়ে আছে। তাই ক্রেতাসংকট হবে না। তবে সরকারের দেওয়া মুভমেন্ট পাসের শর্ত নিয়ে তারা কিছুটা বিচলিত। এ ছাড়া গণপরিবহন বন্ধ থাকাও ক্রেতা-বিক্রেতার জন্য আরেকটা প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করছেন তাঁরা। এর বাইরে দোকান মালিকদের দাবি—সময় কম থাকলে ভিড় বেশি হবে দোকানগুলোতে। এতে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন কঠিন হবে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য। দোকান খোলার সময় বাড়িয়ে বিকেল ৫টার পরিবর্তে রাত ১০টা পর্যন্ত করার দাবি তাঁদের।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর নিউ মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটজুড়ে চলছে পরিচ্ছন্নতার কাজ। মার্কেটের সিরাজ জুয়েলার্স, মেট্রো টেইলার্স, জামদানি স্টোরসহ অনেক দোকানের সামনের বারান্দায় জমে থাকা মালপত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ফ্লোর ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে। এসব কাজ তদারক করছেন নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহিনসহ আরো অনেকে। তিনি বলেন, ‘আমরা মার্কেটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কয়েক ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি। এগুলো শুধু যে আমরা করছি, তা নয়। দেশের সব মার্কেটে যাতে পরিপালন করা হয়, সে জন্য অনুরোধও করা হয়েছে মালিক সমিতিগুলোকে।’ তিনি বলেন, ‘প্রবেশপথে ব্লিচিং মিশ্রিত কার্পেট বিছানো, স্যাভলন মিশ্রিত হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা, মাস্ক ছাড়া যাতে মার্কেটে প্রবেশ করতে না পারে, এ জন্য সতর্ক করার ব্যবস্থা রাখা ইত্যাদি। এর বাইরেও প্রতিটি দোকানে আলাদাভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করবেন দোকান মালিক নিজে, অতিরিক্ত ক্রেতা যাতে দোকানে না থাকে, সে জন্য সতর্ক করা হয়েছে।’

তাঁর মতে, ‘বিক্রেতার সতর্কতার চেয়ে ক্রেতার ব্যক্তিগত সতর্কতাই সবচেয়ে বড়। ক্রেতা যদি কোনো দোকানে ভিড় দেখেন তবে সেখানে প্রবেশ না করে খালি দোকানে যাওয়া উচিত। আমরা দোকানের ভেতরের জিনিস কমিয়ে পর্যাপ্ত জায়গা তৈরি করছি ক্রেতাদের জন্য।’ দোকান খোলা রাখার সময় বাড়ানো, মুভমেন্ট পাসের শর্ত শিথিল করা এবং গণপরিবহন খুলে দেওয়ার দাবিও জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।

শুধু নিউ মার্কেট নয়, আশপাশের চাঁদনী চক, গাউছিয়া, মৌচাক, বায়তুল মোকাররমসহ রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটেও গতকাল দিনভর ছিল দোকানিদের ব্যস্ততা। বায়তুল মোকাররমের সানন্দা জুয়েলার্সের মালিক রঞ্চিত ঘোষ বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। তার পরও আজ দোকানে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগুলো রয়েছে কি না তার তদারকি করলাম। মার্কেটের অনেক দোকানদারই আজ এসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছেন।’

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণা আসে। এতে বন্ধ হয়ে যায় দোকান ও শপিং মল। পরে লকডাউনের সময় আরো এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ২৮ এপ্রিল করা হয়। ব্যবসায়ীদের দাবিতে গত শুক্রবার চলমান লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিং মল খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘দেশজুড়ে চলাচল নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর বিধি-নিষেধ চলমান রয়েছে। যারা জরুরি সেবাদানের কাজে জড়িত, শুধু তাদেরই মুভমেন্ট পাস লাগবে না। এরই মধ্যে সরকার ও পুলিশ জরুরি সেবার মধ্যে অন্তর্ভুক্তদের তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকার বাইরে যারা তাদের সবাইকে মুভমেন্ট পাস নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’ লকডাউনে জরুরি প্রয়োজনে সাধারণের চলাচলের অনুমোদন দিতে গত ১৩ এপ্রিল রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে ‘মুভমেন্ট পাস’ অ্যাপসের উদ্বোধন করা হয়।

দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘মানুষ বাজারে যেতে কোনো মুভমেন্ট পাস লাগে না। তাই আমাদের আশা বিপণিবিতানে আসতেও মুভমেন্ট পাসের প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। তার পরও আমি সরকারের কাছে দাবি জানাব, ক্রেতা-বিক্রেতাদের যেন মুভমেন্ট পাসের জন্য আটকানো না হয়। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রেতারা যেন নির্বিঘ্নে তাদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে পারে।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2021/04/25/1027312