২৩ এপ্রিল ২০২১, শুক্রবার, ২:১০

সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে খুলনার ইজিবাইক চালকরা

খুলনা মহানগরীর শতাধিক গ্যারেজে অচলভাবে পড়ে রয়েছে প্রায় আট হাজার ইজিবাইক। এভাবে বসে থাকায় একদিকে যেমন ব্যাটারিগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে, অন্যদিকে উপার্জন বন্ধ থাকায় অভাব অনটনের মধ্যে দিন কাটছে ইজিবাইক চালকদের।

ইজিবাইক চালক সাদ্দাম হোসেন গত মার্চ মাসের ২৪ তারিখে সুদে ৫৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে নতুন এক সেট ব্যাটারি কিনেছেন। এখন লকডাউনে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে ইজিবাইক রাস্তায় বের করতে পারছেন না । তিনি জানান, ঋণের টাকার সুদ বাবদ প্রতি সপ্তাহে ১,২৫০ টাকা কিস্তির বোঝা টানতে হয় তাকে। একদিকে ঋণের বোঝা অন্যদিকে প্রতিদিনের সংসার খরচ এই দুই নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। আর এই টাকা জোগাড়ে গত তিন দিন থেকে গ্রামে গিয়ে দিনমজুরের কাজ করেছেন তিনি।

এই গ্যারেজের আরেকজন ইজিবাইক চালক ওয়াহিদ। তিনিও গত এপ্রিলের ২২ তারিখে ৫২ হাজার টাকা দিয়ে নতুন ব্যাটারি কিনেছেন। লকডাউনের কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় এই নিয়ে সাত দিন তার ইজিবাইকটি গ্যারেজে পড়ে রয়েছে। তিনি জানান, এভাবে গাড়ি অচল হয়ে পড়ে থাকলে নতুন ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ঝুঁকি নিয়েই আজ রাস্তায় নামছেন তিনি।

খুলনা মহানগরীর মডার্ণ মোড়ের ইজিবাইক গ্যারেজের সুজন। ইজিবাইক নিয়ে যাত্রীর আশায় দাড়িয়ে আছেন সাত রাস্তার মোড়ে। বলছিলেন, সাতদিন পরে আজ বাধ্য হয়েই ভাড়ার গাড়িটি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। লকডাউনের কারণে সাতদিন আয় রোজগার বন্ধ, যাত্রী কম থাকায় দিনশেষে গাড়ি ভাড়ার ৪০০ টাকা উঠবে কি না তা নিয়েও রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।

সাত রাস্তার মোড়ের আরেকজন ইজিবাইক চালক পান্না শেখ জানান, করোনার লকডাউনের কারণে চার সদস্যের পরিবার নিয়ে দুর্দিন চলছে তার। পুলিশের ধর-পাকড় এর মধ্যে তাই ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে বের হয়েছেন। তবে রাস্তায় বের হয়েও শঙ্কায় আছেন তিনি। একদিকে রাস্তায় যাত্রী কম, গাড়ি আটকাচ্ছে পুলিশ অন্যদিকে গাড়ি না চালালে ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাবে আবার না খেয়েও থাকতে হবে পরিবার নিয়ে।

নগরীর লাইসেন্সধারী প্রায় আট হাজার ইজিবাইক চালকের অধিকাংশের অবস্থাই এরকম। কেউ খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে, আবার কেউ বা লকডাউন পার হওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছেন।

এদিকে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়েছে সরকার। তবে এখনো পর্যন্ত খেটে খাওয়া এ মানুষ গুলোর জন্য কোনো প্রকার ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়নি।

খুলনা মহানগর ইজিবাইক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মিলন জানান, করোনার কারণে অসহায় ইজিবাইক চালকদের পরিবারগুলো দুর্দিন পার করছে। লাইসেন্সভুক্ত চালকদের ত্রাণ সহায়তার বিষয়ে সিটি মেয়র, জেলা প্রশাসক ও শ্রম অধিদপ্তরে কথা চলছে। আশা করছি ৮ হাজার ইজিবাইক চালকের সকলকে ত্রাণ সহায়তা না দিতে পারলেও ৫ হাজার ড্রাইভারদের জন্য ত্রাণ সহায়তা পাবো।

তিনি আরো বলেন, ইজিবাইক চালকরা না বুঝে লকডাউনে বের হওয়ায় পুলিশ তাদের গাড়ি আটকিয়ে রাখছে। আটককৃত গাড়িগুলো পড়ে থাকায় ব্যাটারি অকেজো হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমরা গাড়িগুলো ছেড়ে দেওয়ার জন্য খুলনা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছি।

https://dailysangram.com/post/450523