বাংলাদেশে দীর্ঘ মেয়াদের করোনায় স্বাস্থ্য খাতে নানা ধরনের ঝুঁকি বৃদ্ধি করবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক গবেষকরা। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। তাদের মতে করোনা থেকে সেরে ওঠার পরও করোনার মতো বেশ কিছু উপসর্গে ভুগতে পারেন করোনামুক্ত রোগীরা। গবেষণালব্ধ এসব নানা বিষয়ে মতামত দিয়ে একটি তথ্যচিত্রও প্রকাশ করা হয়েছে।
চিকিৎসকদের গবেষণা টিমের প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত বলছে বাংলাদেশে ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষ করোনা থেকে সেরে ওঠার পরও ৭ মাস পর্যন্ত ‘লং কোভিড’ সমস্যায় ভুগছেন। গবেষণায় অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সুইডেন ও আরব আমিরাতের বিশেষজ্ঞের সমন্বিত গবেষক দল। তারা বলছেন, করোনাপরবর্তী সময়ে দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। করোনা থেকে রোগমুক্তির পর বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা চিহ্নিত করা ও তা সমাধানেরও পথনির্দেশনা দেয়া হয়েছে গবেষণাপত্রে।
সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি), কেন্ট ব্রেইন ইনজুরি ফাউন্ডেশন এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত গবেষক দল ১৪ হাজার ৩৯২ জন রোগীর ওপর ‘ইনসেপশান কোহট’ গবেষণা করে এ তথ্য প্রদান করেছেন।
গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ডা: মোহাম্মদ সাকেল, মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এবং ড. ইকবাল কবির জাহিদ গবেষণায় নেতৃত্ব দেন। বাংলাদেশের কে এম এমরান হোসেন ও যুক্তরাজ্যের কোরেন সন্ডার্স গবেষণা ফলাফল উপস্থাপনায় বলেন, কোভিড-১৯ পরবর্তীতে দুর্বলতা, অবসাদ, শরীরব্যথা, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট, মাথাব্যথা, ক্ষুধামন্দা, অনিদ্রা, মনযোগে সমস্যা বা মনে রাখতে না পারা
সমস্যাগুলো বাংলাদেশে বেশি দেখা যাচ্ছে এবং তা ২৮ সপ্তাহ ধরে পুরাপুরি সারছে না। তারা বলেন, মহিলারা লং কোভিডে বেশি সময় ধরে ভুগছেন। স্ক্রানটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. লরি ওয়ালটন, ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জাকির উদ্দিন, শারজাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ভিনা রাইগংগার, কেন্ট ফাউন্ডেশনের আই এম মোস্তাজির বিল্লাহ ও ফৌজিয়া নুসরাত, যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা: ফিরোজ কবির, সিআরপি এর ফারজানা শারমিন, কেরোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের ড. মনজুর কাদের এবং কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা: রাফি ফারুকি গবেষণা শেষে আয়োজিত ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে বলেন, ফিজিক্যাল একটিভিটি, এক্সারসাইজ, ঘুম ও পরিমিত আহার লং কোভিড সমস্যার সমাধান হতে পারে। ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও দুর্বলতা কমাতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সিআরপির নির্বাহী পরিচালক ড. মো: সোহরাব হোসেন বলেন, সিআরপিতে মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিমের মাধ্যমে লং কোভিডের পুনর্বাসন চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এখন দরকার সচেতনতার। কেননা করোনাপরবর্তী চিকিৎসা ধাপে ফিজিওথেরাপি খুবই দরকারি একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। সরকারকে এ বিষয়ে আরো বেশি যতœশীল হতে হবে। পাশাপাশি করোনায় আক্রান্ত রোগীকেও দীর্ঘ মেয়াদে এই চিকিৎসাসেবার আওতায় থাকতে হবে।