২২ এপ্রিল ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১২:২০

ভয়াবহ সঙ্কটে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ

মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বপ্না। মিরপুরে ভাড়া বাসায় থাকেন। স্বামী নেই। দুই ছেলে নিয়ে তার সংসার। এক ছেলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। অন্যজন পাঠাও রাইডে মোটরসাইকেল চালাতেন। আর স্বাপ্না বাসার পাশে একটি ভ্যানে খাবার তৈরি করে তা বিক্রি করতেন। এতেই কোনোমতে সংসার চালাতেন তিনি। কিন্তু করোনা মহামারীতে লকডাউনে স্বপ্নার সব স্বপ্ন এখন ওলট-পালট। ছেলের চাকরি নেই, রাইডও বন্ধ। এ অবস্থায় দুই ছেলেই বেকার। আর তিনি যে ভ্যানে খাবার বিক্রি করতেন লকডাউনে পুলিশ তা উঠিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় বাসা ভাড়া বন্ধ। এত দিনে যা জমানো ছিল তা দিয়ে চলছে প্রতিদিনের খাবার খরচ। এরই মধ্যে বাসার মালিক বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়েছেন। এমন ভয়াবহতায় স্বপ্না এখন নিরুপায়। জানালেন এখন রাজধানী ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

রাজধানীর মীরবাগে ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন শামীম। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত এই যুবক জানালেন, লকডাউন শুরুর পর থেকেই অফিসে যেতে মানা করা হয়েছে। বলা হয়েছে সব যখন স্বাভাবিক হবে তখন পরবর্তী করণীয় জানানো হবে। বেতনও দেয়া হয়নি। এমন অবস্থায় তিনি এখন দিশেহারা। বাকি পড়েছে দুই মাসের বাসা ভাড়া। প্রতিদিনের বাজার করার মতো টাকা হাতে নেই। কী করবেন, কার কাছে টাকা চাইবেন, কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না। তার ভাষায় এরকম হলে চাকরি-বেতন না পেলে শেষ পর্যন্ত হয়তো রিকশা নিয়ে জীবন যুদ্ধে নামতে হবে।

শান্তিনগর ফুটপাথে ফল ব্যবসায়ী নজরুল জানান, তাদের অবস্থা ভয়াবহ। সকালে সামান্য সময় বসতে দিলেও লকডাউনের কারণে ক্রেতা নেই। তাই এখন বেঁচে থাকা দায় হয়ে গেছে। একই জায়গায় স্টেশনারি দোকানদার আরিফ জানালেন একই কথা। সামান্য সময় দোকান খোলা থাকে। এতে ইফতারির পয়সাও হয় না। অন্য দিকে পাশেই ভিক্ষুক পারভীন কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, তিন সন্তান নিয়ে না খেয়ে আছেন। গতবারের লকডাউনে মানুষের সহযোগিতা পেলেও এবার তার পরিমাণ অতি সামান্য।

শুধু স্বপ্না, শামীম আর পারভীন নয়। রাজধানীতে এদের মতো ভয়াবহ সঙ্কটে আছেন মধ্যও নি¤œ আয়ের অসংখ্য মানুষ। দীর্ঘমেয়াদি লকডাউনে গভীর সঙ্কটে এখন এদের বেঁচে থাকা দায়। বাসা ভাড়া আর পরিবারের নিত্যদিনের ব্যয় মেটাতে এরা এখন ক্লান্ত। একাধিক ব্যক্তি জানান, তাদের কেউ ছিলেন মধ্য আয়ের, কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, আবার কেউ চাকরিজীবী। কিন্তু লকডাউনে তাদের সব শেষ। এখন তারা না পারছেন সইতে না পারছেন বলতে।

আর সহযোগিতা যে চাইবেন সে সুযোগও নেই। কারণ সম্মানের কথা চিন্তা করে না খেয়ে হলেও কারো কাছে হাত পাতা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় সামনে তারা অন্ধকার দেখছেন।

শান্তিনগর বাজারে নিত্যপণ্যের দোকানদার বিল্লাল জানান, বাজার এখন ৩টায় বন্ধ করতে হয়। সকাল থেকে এ সময়ের মধ্যে যা বিক্রি হয় তাতে নিজে চলা তো দূরের কথা দোকান ভাড়াও দেয়া অসম্ভব। তিনি বলেন, সবাই জানে ব্যবসা করি। কিন্তু ব্যবসার যে কী অবস্থা তা তো বুঝাতে পারব না। এ অবস্থায় মাস শেষে বাসা ভাড়া ও পারিবারিক খরচ মেটাতে গিয়ে কঠিন সময় পার করছি। এরকম আর কিছুদিন চলতে থাকলে সব বন্ধ করে রাজধানী ছাড়তে হবে।

কয়েকজন ক্ষদ্র ব্যবসায়ী জানান, গত বছরের লকডাউনের প্রভাব কাটিয়ে না উঠতেই নতুন করে লকডাউন তাদের সব তছনছ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। তাদের মতে, আগে প্রতিদিন যা আয় হতো তা দিয়ে কোনোমতে চলতে পারতেন। কিন্তু এখন আয় রোজগার বন্ধ হয়ে তাদের কারো কারো না খেয়ে থাকার মতো অবস্থা হয়েছে। এরকম চলতে থাকলে সামনে কী করবেন তা নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/577305/