২১ এপ্রিল ২০২১, বুধবার, ১১:৪৮

রোগীর তথ্য পাঠাতে সব হাসপাতালে নির্দেশনা

পূর্ণাঙ্গ হিসাব নেই করোনায় মৃত্যুর

বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা হয়; কিন্তু চিকিৎসাধীন ও মৃত্যু তথ্য কর্তৃপক্ষের কাছে নেই -ডা. জাহিদুর রহমান

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন কতজন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে-এর পূর্ণাঙ্গ হিসাব সরকারের কাছে নেই বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে রাজধানীর ২৯টি হাসপাতালে তথ্য থাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।

এর সঙ্গে থাকে চট্টগ্রামের ৮টি হাসপাতালের তালিকা। কিন্তু খোদ রাজধানীতেই শতাধিক হাসপাতালে কোভিড রোগীর চিকিৎসা করা হয়। অধিদপ্তর থেকে করোনায় দৈনন্দিন যে মৃত্যুর তথ্য দেওয়া হয়, এর ৯০ শতাংশই ঢাকার।

তাদের আরও অভিমত, বেসরকারি পর্যায়ে শুধু বড় হাসপাতালগুলোই নয়, এলাকাভিত্তিক গড়ে ওঠা হাসপাতালগুলোয়ও করোনা চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি যেসব ক্লিনিকে পরিপূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই, সেখানেও করোনা রোগীদের আইসোলেশন সেবা দেওয়া হচ্ছে।

এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসাধীন অনেক রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে দ্রুত আইসিইউতে (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট/নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) নিতে হবে বলে বের করে দেওয়া হয়।

সময়মতো আইসিইউ না-পেয়ে অনেক রোগীর অ্যাম্বুলেন্সে বা রাস্তায় মৃত্যুর ঘটনা কারও অজানা নয়।

এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে যেসব হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে, তাদের নিবন্ধনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গত ১৩ এপ্রিল অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা ‘বেসরকারি ক্লিনিক হাসপাতালসমূহে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা প্রসঙ্গ’ শীর্ষক এক নির্দেশনা জারি করেন।

সেখানে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি ক্লিনিক হাসপাতালসমূহে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সুষ্ঠু চিকিৎসা প্রদানের নিমিত্তে আবশ্যিকভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নিম্নোক্ত শর্ত পালনের মাধ্যমে কোভিড-১৯ চিকিৎসাসেবা প্রদানের অনুমতি নিতে নির্দেশ প্রদান করা হলো।

সেখানে যেসব নির্দেশনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো হলো : ১. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা থেকে ইস্যুকৃত হালনাগাদ অনলাইন লাইসেন্স থাকতে হবে।

২. কোভিড-১৯ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিদ্যমান গাইডলাইন, বিধিমালা ও নীতিমালাসমূহ অনুসরণ করতে হবে। ৩. হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের তথ্যাদি সংযুক্ত ছক মোতাবেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ই-মেইলে পাঠাতে হবে।

অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা জেলায় ৪৪০টি হাসপাতালের হালনাগাদ নিবন্ধন রয়েছে। তবে এর বাইরে অনেক হাসপাতাল রয়েছে, যেগুলোর হালনাগাদ নিবন্ধন নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা পাওয়া পর কোভিড চিকিৎসায় যুক্ত প্রায় ৮০টি বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিক ইতোমধ্যে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। এই সংখ্যা চলতি সপ্তাহে আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন যুগান্তরকে বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর অনেক নন-কোভিড হাসপাতাল কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দিতে শুরু করেছে।

কিন্তু কোভিড হাসপাতাল হিসাবে এরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত নয়। তাই এসব হাসপাতালে কতজন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন এবং কতজনের মৃত্যু হয়, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান সরকারের কাছে থাকে না।

করোনার ভয়াবহতা নিরূপণে এবং প্রকৃত তথ্য পেতে তিনি এসব হাসপাতালকে দ্রুত বিশেষ নিবন্ধনের আওতায় আনতে পরামর্শ দেন। পাশাপাশি নির্দিষ্ট ছকে সব হাসপাতাল থেকে দৈনন্দিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে করোনা সংক্রান্ত সব তথ্য পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি।

জানা গেছে, গত বছর দেশে করোনা মহামারির তীব্রতা শুরু হলে তৎকালীন পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) একটি সার্কুলার জারি করেন। সেখানে বলা হয়, বেসরকারি চিকিৎসাসেবায় যুক্ত সব হাসপাতালের ৫০ শতাংশ শয্যা কোভিড রোগীদের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। ওইসব শয্যা কোভিড রোগীদের চিকিৎসার উপযোগী করে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করতে হবে। ওই সার্কুলারের আলোকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বেসরকারি হাসপাতালগুলো কোভিড চিকিৎসা শুরু করে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীর বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি হচ্ছে এবং চিকিৎসা নিচ্ছেন। যাদের মধ্যে অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু এর কোনো হিসাব সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। কারণ, এসব হাসপাতাল কোভিড চিকিৎসায় নিবন্ধিত নয়। তিনি বলেন, কোনো বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা করাতে হলে অবশ্যই অধিদপ্তরের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত। পাশাপাশি এসব হাসপাতাল থেকে করোনা সংক্রান্ত সব ধরনের মৃত্যু, বিশেষ করে রোগী ভর্তি ও মৃত্যুর সঠিক তথ্য অধিদপ্তরে দিতে হবে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা যুগান্তরকে বলেন, গত বছরের তুলনায় অর্থাৎ করোনার প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে দ্বিগুণসংখ্যক বেসরকারি হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে। তবে এর সঠিক সংখ্যা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। গত বছর কোভিড শুরুর সময় তৎকালীন পরিচালকের একটি সার্কুলারের ভিত্তিতেই বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসা শুরু করা হয়। তিনি বলেন, কোভিড চিকিৎসায় যুক্ত সব বেসরকারি হাসপাতালকে একটি শৃঙ্খলায় আনতে ইতোমধ্যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক হাসপাতাল নিবন্ধনের আবেদন করেছে। বাকিরা চলতি সপ্তাহে আবেদন করবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সব হাসপাতাল নিবন্ধনের আওতায় এলে কোভিড চিকিৎসাধীন ও মৃত্যুর সঠিক চিত্র পাওয়া যাবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/413734/