২০ এপ্রিল ২০২১, মঙ্গলবার, ৪:৪৩

দিনে ৫ থেকে ঘণ্টায় ৫ জনে উঠল মৃত্যু

করোনায় গত বছর এক দিনে সর্বোচ্চ মৃতের সংখ্যা ৬৪ (জুলাই মাসে) থেকে নেমে এসেছিল পাঁচে। ফেব্রুয়ারি মাসের দুই দিন পাঁচজন করে মৃত্যু হয়েছে এবং সর্বশেষ গত ৩ মার্চ পাঁচজনের মৃত্যু ঘটে। এর পর থেকে ৪৭ দিনের মাথায় গতকাল সোমবার মৃত্যু হয়েছে ১১২ জনের। অর্থাৎ ২২ গুণ বেড়েছে মৃত্যু।

এর মধ্যে সর্বশেষ গত সাত দিনে গড়ে প্রতি ঘণ্টায় মারা গেছে চারজন (৩.৬০) এবং সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টার হিসাবে প্রতি ঘণ্টায় পাঁচজন মারা গেছে। গত ১৩ এপ্রিল থেকে গতকাল পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ৬০৬ জনের। এর মধ্যে গত চার দিন যথাক্রমে ১০১, ১০১, ১০২ এবং গতকাল ১১২ জন মারা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা গত দেড় মাসে মৃত্যুর এই ঊর্ধ্বমুখী লাফালাফিকে গত ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত অবাধে সংক্রমণ বিস্তারের পরিণতি বলে

ব্যাখ্যা করেছেন। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহ আগে যখন দেশে দৈনিক শনাক্ত ছয়-সাত হাজারে ছিল, তার বিজ্ঞানভিত্তিক প্রভাবই এখন চলছে। এ ক্ষেত্রে ৩৪ সপ্তাহের শেষ দিকেই মৃত্যু নিচের দিকে নামতে শুরু করবে, আর যদি সংক্রমণ বিস্তারের উৎসগুলো এখনকার মতো আটকে রাখা যায়, তাহলে মৃত্যু দ্রুত কমে যাবে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সংক্রমণ ঘিরে যা কিছু হচ্ছে সবটাই বিজ্ঞানভিত্তিক। সংক্রমণ যে হারে বৃদ্ধি পাবে, মৃত্যু সেই আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাবে। সংক্রমণ কমে গেলে মৃত্যুও কমে যাবে। এ ক্ষেত্রে পার্থক্য হচ্ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর মধ্যে দুই থেকে তিন সপ্তাহ। অর্থাৎ দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে যারা আক্রান্ত হয়েছিল, তাদের মধ্যে যারা উচ্চ ঝুঁকিতে ছিল, সেই পর্যায়ের একটি অংশের মৃত্যু ঘটছে এখন। এটি আগে থেকেই বারবার সতর্ক করা হয়েছিল। এখনো আমরা বলছি, যেকোনো পরিবারে যাঁরা বয়স্ক মানুষ আছেন এবং বয়স তুলনামূলক কম হলেও যাঁরা বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত আছেন, তাঁরা করোনায় আক্রান্ত হলে অন্যদের তুলনায় বেশি মাত্রায় মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ে যাবেন। ফলে এসব পরিবারের অন্য সদস্যদের খুবই সতর্ক থাকা জরুরি। নিজেরা সংক্রমিত হলে পরিবারের বয়স্ক লোকটি কিংবা জটিল রোগে আক্রান্ত সদস্যটি অনেক বেশি বিপদের মুখে পড়বেন।’

এই বিজ্ঞানী বলেন, ‘আমাদের দেশে মৃত্যুহার এখনো তুলনামূলকভাবে কম বলে সংখ্যা অন্য দেশের মতো ভয়ানক রূপ নিচ্ছে না। গড়ে দেড় শতাংশের মধ্যেই থাকছে। সেই হিসাবে গত এক সপ্তাহ পর্যন্ত সংক্রমণ যতটুকু কমে এসেছে সেদিক থেকে আমরা আশা করতেই পারি, চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে এই মৃতের সংখ্যা নিচে নেমে যাবে। আর সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা যদি আমরা আবার ওপরে উঠতে দিতে না চাই, তবে আমাদের আরো কিছুদিন নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার মধ্যে চলতে হবে এবং নিজেদের সুরক্ষার জন্যই সীমাবদ্ধতাগুলো মেনে নিতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন শনাক্ত হয়েছে চার হাজার ২৭১ জন। আগের দিনের তুলনায় এই সংখ্যা কিছুটা বেশি। রবিবার শনাক্ত চার হাজারের নিচে ছিল। তবে পরীক্ষাও আবার বেড়েছে। গত কয়েক দিন পরীক্ষা ছিল ২০ হাজারের নিচে; কিন্তু গতকাল হিসাব অনুযায়ী তা ২৪ হাজার ১৫২ জনে উঠেছে।

গতকাল সুস্থ হয়েছে ছয় হাজার ৩৬৪ জন। সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছে সাত লাখ ২৩ হাজার ২২১ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে ছয় লাখ ২১ হাজার ৩০০ জন এবং মারা গেছে ১০ হাজার ৪৯৭ জন। গড় মৃত্যুর হার ১.৪৫ শতাংশ। অন্যদিকে দৈনিক শনাক্তের হার আগের দিনের তুলনায় আরো কমে ১৭.৬৮ শতাংশ হয়েছে।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১১২ জনের মধ্যে ৭৫ জন পুরুষ এবং ৩৭ জন নারী। যাঁদের মধ্যে ৩১ থেকে ৪০ বছরের ১০ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ২২ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ২৬ জন এবং ষাটোর্ধ্ব ৬৪ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৭১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১৯ জন, রাজশাহী বিভাগের পাঁচজন, খুলনা বিভাগের ১০ জন, বরিশাল ও ময়মনসিংহের একজন করে, সিলেটের তিনজন এবং রংপুরের দুজন। তাঁদের মধ্যে ১০৮ জন হাসপাতালে, তিনজন বাড়িতে এবং একজন হাসপাতালে আনার পথে মারা গেছেন।

রোগতত্ত্ববিদরা জানান, মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এখনো দেশে প্রতিদিন মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ৮০ শতাংশের বেশি পঞ্চাশোর্ধ্ব। ফলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, করোনাভাইরাস প্রধানত বয়স্ক মানুষের জন্যই বেশি মাত্রায় ভয়ানক ও প্রাণঘাতী। এ ক্ষেত্রে সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা ও সচেতনতার মাধ্যমে যদি সমাজের বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায়, তবেই তাঁদের মৃত্যু যেমন কমবে, তেমনি সার্বিকভাবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশে মৃত্যুও কমে যাবে।

https://www.kalerkantho.com/online/national/2021/04/20/1025657