২০ এপ্রিল ২০২১, মঙ্গলবার, ৪:৩৯

দেশে টানা চতুর্থ দিনেও করোনায় শতাধিক মৃত্যু

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে মোট মারা গেছেন ১১২ জন। এর আগের তিন দিন ধরেই প্রতিদিন ১০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট ১০ হাজার ৪৯৭ জনের মৃত্যু হলো। চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, হাসপাতালগুলোর ওপর যে হারে চাপ বাড়ছে, তাতে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা সেবা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

বাংলাদেশে গত তিন দিনের মৃত্যুহার বিবেচনা করলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রতি ১৫ মিনিটে একজনের মৃত্যু হচ্ছে। এপ্রিল মাসের মৃত্যু হার বিবেচনা করলে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে এই মাসে প্রতি ১৮ মিনিটে একজনের মৃত্যু হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড শনাক্ত হয়েছেন ৪,২৭১ জন আর বাংলাদেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা ৭ লাখ ২৩ হাজার ২২১ জন। ২৪,১৫২টি নমুনা পরীক্ষা করে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত একদিনে সুস্থ হয়েছেন ৬,৩৬৪ জন আর মোট সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ২১ হাজার ৩০০ জন। প্রতি ১০০টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ১৭.৬৮ শতাংশ।

শনিবারই বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটি। ''মহামারি সর্বোচ্চ মাত্রার সংক্রমণের দিকে এগোচ্ছে'’ বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান সতর্কবাণী উচ্চারণের পরদিনই বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর এই পরিসংখ্যান জানা গেল।

শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ড. টেড্রস অ্যাডহানম গেব্রেইয়েসুস বলেন, ‘'নতুন শনাক্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলেছে। বিশ্বজুড়ে প্রতি সপ্তাহে নতুন শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা গত দুইমাসে দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

বাংলাদেশে বেশ কিছুদিন যাবত করোনাভাইরাসে মৃত্যু এবং শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে চলছে। গত বছরের মার্চের ৮ তারিখে দেশটিতে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে কাউকে শনাক্ত করার তথ্য দিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ।

এরপরের দুই মাস দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা তিন অংকের মধ্যে থাকলেও সেটা বাড়তে বাড়তে জুলাই মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়।
এরপর বেশ কিছুদিন দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা কমতে কমতে এক পর্যায়ে তিনশ'র ঘরে নেমে এসেছিল। তবে এ বছর মার্চের শুরু থেকেই শনাক্তের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একই সাথে বাড়তে থাকে মৃত্যুর সংখ্যাও। যদিও গত কয়েকদিনে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমে এসেছে। চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, হাসপাতালগুলোর ওপর যে হারে চাপ বাড়ছে, তাতে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা সেবা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

প্রতি ওয়ার্ডে নমুনা সংগ্রহ বুথ স্থাপনের সুপারিশ
নভেল করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় দেশে নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। নমুনা সংগ্রহ সহজ করা এবং সাধারণের নাগালের মধ্যে আনতে প্রতি ওয়ার্ডে নমুনা সংগ্রহ বুথ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি, দ্রুত রিপোর্ট পাওয়া নিশ্চিত করতে বুথগুলোতে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

গতকাল জাতীয় কারিগরি পর্মাশক কমিটির ৩১তম সভার ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সুপারিশের কথা জানানো হয়েছে। এর আগে, রোববার দিবাগত রাতে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা'র সভাপতিত্বে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে দেশে কোভিড-১৯ এর উচ্চ সংক্রমণ ও ক্রমবর্ধমান মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংক্রমণ মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ওই বৈঠকের ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমকে জানানো হয়েছে, নমুনা পরীক্ষা সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে কমিটি ইতোমধ্যেই সরকারিভাবে নমুনা পরীক্ষা বিনামূল্যে করার পরামর্শ দিয়েছে। পিসিআর টেস্ট কিটের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় বেসরকারি ল্যাবরেটরিগুলোতেও নমুনা পরীক্ষার মূল্য পুনঃনির্ধারণের পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে করে যেমন পরীক্ষার সংখ্যা বাড়বে তেমনি সরকারি ল্যাবরেটরির ওপর চাপ কিছুটা কমবে। ফলে, পরীক্ষা ও রিপোর্ট দ্রুত প্রদান করে আক্রান্তদের দ্রুত আইসোলেশন নিশ্চিত করা যাবে যা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে মারা গেছেন ৯ হাজার ৪১৮ জন এবং নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ লাখ ৯ হাজার ৪৩৭ জন। এ নিয়ে বিশ্বে মোট করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩০ লাখ ৩২ হাজার ৮৬২ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ কোটি ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ২৭৮ জন। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১২ কোটি ৫৩ লাখ এক হাজার ৫৮১ জন। করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ২৪ লাখ ৪ হাজার ৪৫৪ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৮১ হাজার ৬১ জনের। আক্রান্তে দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন এক কোটি ৫০ লাখ ৭ হাজার ৭৬৭ জন এবং মারা গেছেন এক লাখ ৭৮ হাজার ৭৯৩ জন।

আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিল এখন পর্যন্ত করোনায় এক কোটি ৩৯ লাখ ৪৩ হাজার ৭১ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৪২৪ জনের। আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫২ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৮ জন। ভাইরাসটিতে মারা গেছেন এক লাখ ৭৩৩ জন। আক্রান্তের দিক থেকে রাশিয়া রয়েছে পঞ্চম স্থানে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৪৭ লাখ ২ হাজার ১০১ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন এক লাখ ৫ হাজার ৫৮২ জন।

https://dailysangram.com/post/450201