১৯ এপ্রিল ২০২১, সোমবার, ৩:৩৬

করোনায় বর্ধিত সময়েও বার্ষিক প্রতিবেদন দিতে পারছে না বেশির ভাগ ব্যাংক

ব্যাংকের সামগ্রিক আর্থিক অবস্থার বিবরণ লিপিবদ্ধ থাকে ব্যাংকের বার্ষিক নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে। একটি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা দুর্বল না সবল তা বোঝা যায় এ আর্থিক প্রতিবেদন থেকে। পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরাও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এ কারণে এ প্রতিবেদন তৈরি করতে ব্যাংক যেমন সচেতন থাকে, তেমনি সচেতন থাকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বহিঃনিরীক্ষকরাও। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রতি বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পরের দুই মাস অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিতে হয়। কোনো ব্যাংক এ সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত করতে ব্যর্থ হলে আইন অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরো দুই মাস সময় দিয়ে থাকে। কিন্তু করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে বেশির ভাগ ব্যাংক এ আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করার পূর্বপ্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারেনি। এ দিকে আইন অনুযায়ী, আর মাত্র ১১ দিন বাকি আছে। এ সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে না পারলে আইন লঙ্ঘন হয়ে যাবে। এমনি পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিকল্প উপায় চেয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে।

দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক গতকাল এ বিষয়ে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করার আগে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করা হয়। প্রথমত, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষকরা তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনোনীত বহিঃনিরীক্ষকরা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরীক্ষকদের সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মোট ঋণের ৮০ ভাগ নিরীক্ষা করতে হয়। ব্যাংকের নিজস্ব নিরীক্ষক, বহিঃনিরীক্ষক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরীক্ষকদের নিজ নিজ প্রতিবেদন নিয়ে তিন পক্ষের যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ওই প্রতিবেদন ব্যাংকের পর্ষদের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হয়। পর্ষদ অনুমোদদিত আর্থিক প্রতিবেদনই চূড়ান্ত প্রতিবেদন হিসেবে বিবেচিত হয়। এই চূড়ান্ত প্রতিবেদনের একটি কপি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোর আর্থিত তথ্য পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, একটি ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে পরের বছরের প্রথম দুই মাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জমা দিতে হবে। কোনো ব্যাংক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দিতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে আরো দুই মাস সময় নিতে পারে। আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে সর্বোচ্চ দুই মাস অর্থাৎ ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিতে পারবে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, করোনার কারণে বেশির ভাগ ব্যাংকই আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আগের ধাপগুলো সম্পন্ন করতে পারেনি। যেমন, বহিঃনিরীক্ষক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরীক্ষকরা মোট ঋণের ৮০ ভাগ নিরীক্ষা করতে পারেননি। আবার অনেক ব্যাংকের সাথে বহিঃনিরীক্ষকরাও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে বৈঠক করতে পারেনি। আবার যারা এ দুইটি ধাপ সম্পন্ন করতে পেরেছে তারা পর্ষদের বৈঠক করতে পারেনি। সাধারণত কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে পর্ষদ বৈঠক ডাকতে হয়। সে অনুযায়ী ২৩ তারিখের মধ্যে পর্ষদ বৈঠক ডাকতে হবে। কিন্তু করোনার কারণে বেশির ভাগ ব্যাংক কর্মকর্তা ঠিক মতো অফিস করতে পারছেন না। এসব কারণে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বেশির ভাগ ব্যাংকেরই আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘনের দায়ে ব্যাংকগুলোকে জরিমানা গুনতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মাত্র চার থেকে পাঁচটি ব্যাংক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিতে পেরেছে। বাকি ব্যাংকগুলো সময় বাড়িয়ে নিয়েছিল। কিন্তু বর্ধিত সময় শেষ হতে আর মাত্র ১০ দিন বাকি আছে। অর্থাৎ ৩০ এপ্রিলের মধ্যে যে করেই হোক প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জমা দিতে হবে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপকরা ইতোমধ্যে করোনার কারণে তা চূড়ান্ত করতে পারেনি। তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করছেন। বেশির ভাগই বিকল্প উপায় বের করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অনুরোধ করছেন। কিন্তু আইন অনুযায়ী কোনোভাবেই তা সময় বাড়ানোর সুযোগ নেই। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দিতে না পারলে বড় অঙ্কের জরিমানা গুনতে হবে ব্যাংকগুলোকে। এর পরেও নীতিনির্ধারকদের সাথে আলোচনা করা হচ্ছে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকের সিদ্ধান্তের ওপর।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/576584/