১৮ এপ্রিল ২০২১, রবিবার, ১১:০৭

ভয়াবহ বিপর্যয়ে বাংলাদেশ

আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব খরা-বন্যা-ঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে কৃষি খাত হুমকিতে খাদ্য নিরাপত্তা নদীমাতৃক দেশের অধিকাংশ নদীই মৃত্যুর মুখে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমছ

আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশ। হুমকির মুখে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও জীববৈচিত্র্য। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে খরা, বন্যা, ঝড়, টর্নেডোসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হচ্ছে দেশ। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে কৃষি খাত। এতে হুমকির মুখে পড়ছে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা। আবহাওয়ার পরিবর্তনে পৃথিবীর এক অংশে প্রচন্ড শৈত্যপ্রবাহ আবার আরেক অংশে মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রা। বৃষ্টির দিনে নেই বৃষ্টি, ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমে যাচ্ছে, বাড়ছে লবণাক্ততা। নদীমাতৃক দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের অধিকাংশ নদী আজ মৃত্যুর মুখে। ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে দেশের অনেক নদী শুকিয়ে গেছে। অনেক নদী দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। সব মিলিয়ে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে মাছ, পাখিসহ অনেক প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটছে, বিভিন্ন রোগব্যাধি বাড়ার ফলে মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে বিশুদ্ধ বাতাস, স্বচ্ছ-নিরাপদ পানীয়, পর্যাপ্ত খাদ্য এবং নিরাপদ বাসস্থান ও স্বাস্থ্যসেবাসহ মানুষের সব মৌলিক চাহিদাগুলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব-উষ্ণায়নের ফলে সাম্প্রতিক অতীতে বছরে অতিরিক্ত ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছে।

বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে পরিবেশের যে বিপর্যয় তার জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। পরিবেশের বিপর্যয় রক্ষায় সরকার খুব একটা আন্তরিক নয়। দেশের অক্সিজেন ফ্যাক্টরি বা বাংলাদেশের ফুসফুস বলে খ্যাত সুন্দরবন ধ্বংসের সব আয়োজন করা হচ্ছে। নদীগুলো সব মরে যাচ্ছে। নদী রক্ষায় নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। নদীর নাব্য রক্ষায় প্রতিবছর ড্রেজিংয়ের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে; কিন্তু নদী তার নাব্য ফিরে পাচ্ছে না। অপরিকল্পিতভাবে সব কিছু চলছে। এতে আবহাওয়ার পবির্তনের নেতিবাচক প্রভাব সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে নদী মরছে, হুমকিতে পড়ছে জীববৈচিত্র্য। অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, ঝড়, টর্নেডোর ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আর এতে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।

আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে কৃষি খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খরা, বন্যা, ঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হচ্ছে দেশের কৃষি। সম্প্রতি চৈত্রের গরম হাওয়ার ‘হিটশকে’ ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কমপক্ষে ৫০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান পুড়ে গেছে। এদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলে শুরু হয়েছে খরার প্রভাব। বৃষ্টি না হওয়ায় ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। এতে অনেক স্থানে বোরো জমিতে সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া বাড়ছে লবণাক্ততা। ইতোমধ্যে উপক‚লীয় অঞ্চল এবং দূরবর্তী দ্বীপসমূহের ১.৪ মিলিয়ন হেক্টর এলাকায় লোনাপানি প্রবেশ করার ফলে উন্মুক্ত জলাশয় ও ভূগর্ভস্থ পানি লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। প্রায় ১০.৫৬ লাখ হেক্টর চাষযোগ্য জমি লবণাক্ততার বিভিন্ন মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত। লবণাক্ততার কারণে এসব অঞ্চলের বিশাল পরিমাণ আবাদি জমি পতিত থাকে। শুষ্ক মৌসুমে নিয়মিত সামুদ্রিক জোয়ারের সাথে ভূভাগের অনেক গভীর মিঠাপানি অঞ্চলে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে নদীর পানিকে আউশ ধান ও অন্যান্য আগাম খরিফ ফসলে সেচের কাজে ব্যবহারের অনুপোযোগী করে তুলছে।

গরম আবহাওয়া এবং অনাবৃষ্টি ফলে শুধু ধান নয়, অন্য সব ধরনের শস্য উৎপান মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। বৃষ্টিহীনতা আর প্রচন্ড গরম হাওয়ায় আমের জন্য খ্যাত রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলাজুড়ে ঝরে পড়ছে আম ও লিচুর গুটি। বৃষ্টি না হওয়াতে পোকার আক্রমণও বেড়ে গেছে। গুটি ঝরেপড়া এবং পোকার আক্রমণের ফলে কাক্সিক্ষত ফলন নিয়ে চিন্তিত চাষিরা।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. আবেদা খাতুন ইনকিলাবকে বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনকে সামনে রেখে আমাদের বিজ্ঞানিরা নতুন নতুন কৃষি জাতের উদ্ভাবন করছেন। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে কৃষি খাতে যে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিচ্ছে তা মোকাবিলায় আমাদের গবেষণা অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে খরা সহিষ্ণু, লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ ছাড়া মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের উৎপাদন বাড়াতে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন।

করোনা মহামারির চরম বিরূপ পরিস্থিতি, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান, দীর্ঘ বন্যা এবং প্রবলবর্ষণের সাথে ফুঁসে ওঠা সাগরের জোয়ারে গত মৌসুমে আউশ ও আমন কাক্সিক্ষত উৎপাদন হয়নি। সব মিলিয়ে দেশে ১০ লাখ ৫০ হাজার টন ধান কম উৎপাদিত হয়েছে। এর ফলে খাদ্যমজুদ অনেক কমে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে খাদ্য নিরাপত্তা। বাজারে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় সম্ভাব্য খাদ্যঘাটতি কমাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হচ্ছে। তাতেও স্থিতিশীল হচ্ছে না চালের বাজার। আউশ এবং আমন উৎপাদনের ঘাটতি সরকার আসন্ন বোরো উৎপাদনে পুষিয়ে নিতে চাচ্ছে। তবে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে বোরো উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ হয়েছে ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে দেশে প্রতি বছর বিভিন্ন মাত্রার খরায় আক্রান্ত হয় ৮৫ লাখ হেক্টর চাষযোগ্য জমি। এর মধ্যে শতকরা ৪০ ভাগ জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়। তবে এ বছর বৈরী আবহাওয়ায় বোরো উৎপাদনের প্রধান উৎস হাওর এলাকায় ৫০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম হবে।

আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে এবার হাওরাঞ্চলের বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চৈত্রের গরম হাওয়ায় পুড়ে গেছে হাওরাঞ্চলসহ দেশের অন্যান্য জেলার ৫০ হাজার হেক্টর জমির ধান। যেসব ধানের শীষ বেরুচ্ছে অথবা এখনও চাল পরিপুষ্ট হয়নি, গত ৪ এপ্রিল কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে গরম হাওয়ায় সে সব ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই ভয়াবহ ক্ষতি কীভাবে পোষাবে তা ভেবে কৃষকরা এখন দিশেহারা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হঠাৎ সন্ধ্যায় প্রচন্ড গতিতে ধুলাবালিসহ ঝড়ো বাতাস শুরু হয়ে ৩-৪ ঘণ্টার ব্যাপি বৃষ্টিহীন গরম বাতাসের তান্ডব চলে। গত ৪ এপ্রিল নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ, মদন ও খালিয়াজুড়ি থানার বিশাল হাওর এলাকায় গরম ঝড়ো বাতাস হয়। ওই বাতাসের পর হাওরের হাজার হাজার হেক্টর জমির নতুন ধান নষ্ট হয়ে যায়। প্রচন্ড খরতাপে বরেন্দ্র অঞ্চলের বোরো আবাদেও পড়েছে বিরূপ প্রভাব। এবার বরেন্দ্র অঞ্চলে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জামিতে। বাস্তবে আবাদ হয়েছে- ৩ লাখ ৬৩ হাজার ১৭২ হাজার হেক্টর জমিতে। তবে এবার আবাদের শুরু থেকে আবহাওয়া বৈরী। অন্য বছর মাঘ ফাল্গুনে বৃষ্টিপাত হয়। সেই পানিতে তৈরি হয় বোরোর বীজতলা। এবার তেমনটি হয়নি। ফলে বীজতলা তৈরী করতে নির্ভর করতে হয়েছে সেচের পানির উপর। ফাল্গুনের শেষ থেকে প্রকৃতিতে আগুন ঝরা শুরু হয়েছে। চৈত্রে এসে তাপমাত্রা উঠেছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে। ফলে জমিতে টান ধরেছে। এরপর গরম বাতাস পরিস্থিতিকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে। এদিকে গত ৪ এপ্রিল মওসুমের প্রথম ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। কোথাও ধুলিঝড়, আবার কোথাও শিলাবৃষ্টি হয়। এতে ফসলের উপকারের চেয়ে ক্ষতি হয়েছে বেশি।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলের মরুকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে। উত্তরে ভারত থেকে বাংলাদেশমুখী ছোট-বড় প্রায় সব নদ-নদীতেই বাঁধ, স্পার, রেগুলেটর নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহারের ফলে নদীগুলো শুকিয়ে গেছে। এর ফলে ভ‚গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে সেচ কাজে ব্যবহারের পরিণতিতে উত্তরাঞ্চলে পানির স্তর নিচে নামতে নামতে এখন বিপজ্জনক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। তবে বেশি উদ্বেগজনক অবস্থা বরেন্দ্র অঞ্চলে বলে জানিয়েছেন পানি বিশেষজ্ঞরা। এর সাথে যোগ হয়েছে অনাবৃষ্টির সমস্যা। তিস্তা ব্যারেজের মাত্র ৯০ কিলোমিটার উজানে গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে ভারত একতরফাভাবে তাদের সুবিধা মতো পানি নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে পানির অভাবে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পটি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ৫ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমির সেচ সুবিধা বন্ধ হয়ে গেছে। তিস্তা পাড়ের হাজার হাজার হেক্টর জমি সেচের অভাবে ইরি, বোরো মৌসুমে পড়ে থাকে।

আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদনদী আজ মৃত্যুর মুখে। এ ছাড়া উজানে সীমান্তের ওপারে বাঁধ তৈরি করে ভারতের এক তরফা পানি সরিয়ে নেয়ার ফলে বাংলাদেশের নদীগুলোতে দেখা দিয়েছে পানি সঙ্কট। অন্যদিকে, দেশের মধ্যেই অতিরিক্ত পলি জমে নদীগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নানা ধরনের শিল্প বর্জ্যরে দূষণে নদীর প্রাণ বৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে। স্বাধীনতার পর বিআইডবিøউটিএ’র এক জরিপে দেখা যায় বাংলাদেশে নদীপথের মোট দৈর্ঘ্য ২৪০০০ কিলোমিটার। কিন্তু এখন সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ৮০০০ কিলোমিটার। অর্থাৎ প্রায় চার দশকে ১৬০০০ কিলোমিটার নদীপথ শুকিয়ে গিয়েছে।

আমাদের বিশেষ সংবাদদাতা স্টালিন সরকার সম্প্রতি দেশের উত্তরবঙ্গ ঘুরে এসে ‘উত্তরের নদীর বাঁকে বাঁকে’ শিরোনামে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন করেছেন। তার শেষ পর্বের প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল ‘মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দুধকুমার নদী’। তিনি তার প্রতিবেদনে বলেছেন, তিস্তা চুক্তি ঝুলিয়ে রাখার পর ভারত ৬টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশকে আলোচনার প্রস্তাব দেয়। ফেনী নদীর পানি ত্রিপুরায় নেয়ার সময় থেকে যৌথনদী কমিশনে ৬ নদীর পানি নিয়ে আলোচনার ইস্যু মানুষ জানতে পারে। ভারতের সঙ্গে পানি ভাগাভাগির ৬ আলোচিত নদীর অন্যতম হলো কুড়িগ্রামের দুধকুমার। অথচ পানির অভাবে শুকিয়ে ঠনঠন দুধকুমার নদী মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। নদী পাড়ের কৃষকরা এখন ছেলেমেয়েদের সবুজ ধান-গম-আলু-বাদামের ফসল দেখিয়ে বলে ‘ওই খানে দুধকুমার নামে একটি নদী ছিল’। এ ছাড়াও রংপুরে এক সময় শ্রোতম্বিনী নদী ছিল ধাইজান, দেওনাই, চারালকাথা, যমুনেশ্বরী, আলাইকুমারী, কাতগাড়ী, স্বর্ণমতী, বুলাই, হংসরাজ বিল, বুড়াইল, বুড়িখোড়া-চিকলীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক। এসব নদীই পানির অভাবে ধুঁকছে।

আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত ও সংবেদনশীল স্বাস্থ্য-সমস্যাগুলো, যেমন- অপুষ্টি, ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু ইত্যাদি ভয়াবহ আকার নিতে চলেছে। আগে পৃথিবীর যেসব অঞ্চলে ভৌগোলিক কারণে এগুলোর প্রকোপ ছিল না বা কম ছিল। আবহাওয়ার পরিবর্তন সেই অঞ্চলগুলোতে ভৌগোলিক সীমারেখা মুছে নতুন স্বাস্থ্য-সমস্যা সৃষ্টি করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি রোগের প্রকোপ বাড়ছে। উচ্চ তাপমাত্রায় অনেক সময় কলেরার মতো ব্যাকটেরিয়াবাহিত রোগ মহামারির আকার নিতে পারে। একইভাবে বেড়ে যেতে পারে অ্যানিফিলিস মশাবাহিত ম্যালেরিয়া। কিউলেক্স মশাবাহিত জাপানি এনসেফেলইটিসের বাড়-বাড়ন্ত লক্ষ্য করা যায় বর্ষার আবহাওয়ায়, যখন বেশি বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি তাপমাত্রা অন্তত ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ এক প্রতিবেদনে বলেন, সারা বিশ্বের আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং ঋতু পরিবর্তনের ফলে নানারকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে। গত শতাব্দীতে এ পরিবর্তন খুব দ্রুত হয়েছে এবং ক্রমেই মানবসভ্যতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। যে কোনো অঞ্চলের প্রচলিত আবহাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে আবার ওই আবহাওয়ায় হঠাৎ ব্যাপক পরিবর্তনে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে মানুষের সুস্থতায় যে হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে তা আগামীতে আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।

https://www.dailyinqilab.com/article/374711/